- Home
- India News
- ভারতের এই মেয়ের সাহসিকতা দেখে কুর্নিশ জানিয়েছিল পাকিস্তানও, নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়েছিলেন বিমান যাত্রীদের
ভারতের এই মেয়ের সাহসিকতা দেখে কুর্নিশ জানিয়েছিল পাকিস্তানও, নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়েছিলেন বিমান যাত্রীদের
- FB
- TW
- Linkdin
১৯৮৬ সালে প্যান এম ফ্লাইট ’৭৩ বিমানটি ছিনতাই হয়। ছিনতাই হওয়া বিমানের যাত্রীদের বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন নীরজা ভনোট।
মোট ৩৬০ জন যাত্রী নিয়ে মুম্বাই থেকে করাচি, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট হয়ে নিউ ইয়র্ক যাওয়ার কথা ছিল বিমানটির। করাচির জিন্নাহ আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের টারম্যাকে দাঁড়িয়ে থাকার সময় নিরাপত্তারক্ষীদের ছদ্মবেশে এসে বিমানটি হাইজ্যাক করে ৪ জঙ্গি।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বিমানটি সাইপ্রাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, আর সেখানে যাত্রীদের অপহরণ করে নিজেদের দলীয় কিছু সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্ত করাবে। নিরাপত্তাকর্মীর ছদ্মবেশে চার জঙ্গি করাচি থেকে বিমানে ওঠে। লিবিয়ার একটি জঙ্গি সংগঠনের ওই ৪ জঙ্গির মূল উদ্দেশ্যই ছিল আমেরিকার নাগরিকদের হত্যা করা।
জঙ্গি’রা বিমান দখল নেওয়ার পর যাত্রীদের উপর গুলি চালাতে শুরু করে। একই সঙ্গে বিমানটি উড়িয়ে দেবার জন্য বেশ কিছু বিস্ফোরক বেঁধে দেয় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের হাত থেকে যাত্রীদের রক্ষা করতে বিমানের ইমারজেন্সি দরজা খুলে যাত্রীদের বার করে দিতে শুরু করেন নীরজা।
নিজের প্রাণ বাঁচাতে সবার প্রথমে বেরিয়ে আসতে পারতেন নীরজা। যদিও, ওই সাহসিনী তা করেননি। এর ফলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালানো শুরু করে। জঙ্গিরা নীরজাকে চুল ধরে টেনে নিয়ে যায়, তার মাথায় গুলি করে জঙ্গিদের প্রধান। শেষ পর্যন্ত জঙ্গিদের গুলিবৃষ্টির থেকে ৩টি শিশুকে আড়াল করতে গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয় নীরজা।
প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে বাধা পাওয়ায় গুলি চালাতে শুরু করে সন্ত্রাসবাদীরা। তিনটি শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান নীরজা। তবে মারা যাওয়ার আগে ৩৬০ জন যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে যান তিনি। সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে সব চেয়ে কম বয়সে ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন অশোক চক্র, মার্কিন সরকার দিয়েছে ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশন হিরোইসম অ্যাওয়ার্ড। পুরস্কার এসেছে পাকিস্তান ও কলম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকেও। ২০০৪-এ অসমসাহসী এই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের নামে একটি স্ট্যাম্পও বের করে ভারতীয় ডাক বিভাগ।
১৯৬৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চণ্ডীগড়ে জন্মগ্রহণ করেন নীরজা। বাবা হরিশ মুম্বইয়ে সাংবাদিকতার কাজ করতেন। চণ্ডীগড়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার পর মুম্বইয়ে চলে আসেন তিনি। গ্র্যাজুয়েশন করেন সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে। ১৯৮৫-তে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাবা-মার পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে করে মধ্য প্রাচ্যে চলে যান তিনি। তবে বিয়ের পর থেকেই ক্রমাগত পণের জন্য চাপ দেওয়ায় স্বামীকে ছেড়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন তিনি। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে প্যান অ্যাম সংস্থায় এয়ার হোস্টেস হওয়ার জন্য আবেদন করেন তিনি। কাজটি পেয়েও যান তিনি। তবে মাত্র বছর খানেকের মধ্যেই এক কলঙ্কিত দিন ঘনায় তাঁর জীবনে।
৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬ প্যান অ্যামের বিমান ফ্লাইট ৭৩ করাচিতে হাইজ্যাকারদের কবলে পড়ে। কিন্তু বিমান ছিনতাই যতটা সহজ হবে বলে ভেবেছিল দুষ্কৃতীরা, ততটা সহজ হয় না। যাত্রীদের বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রেখে ৪ জন সশস্ত্র হাইজ্যাকারদের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েন বছর নীরজা। মূলত তাঁর চেষ্টাতেই প্লেন নিয়ে উড়ে যেতে পারেনি বিমান ছিনতাইকারীরা। পণবন্দি যাত্রীদের বাঁচাতেও আপ্রাণ চেষ্টা করে যান নীরজা।
নীরজা ভনোট এর জীবনী নিয়ে বলিউডে একটি মুভি তৈরি হয়েছে যার নাম “নীরজা”। নীরজা মুভিতে অভিনয় করেন -সোনম কাপুর, শাবানা আজমি, শেখর রাভজিয়ানি। মুভিটি রিলিজ হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সালে।