আম্বালা বিমানঘাঁটিতে এমন কী আছে, যে এখানেই রাফাল-কে নিয়ে এল ভারতীয় বায়ুসেনা
বুধবার, হরিয়ানার আম্বালা-য় অবস্থিত ভারতীয় বায়ুসেনার ঘাঁটিতে ফ্রান্স থেকে এসে পৌঁছোল ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের প্রথম পাঁচটি। আইএএফের ১৭ স্কোয়াড্রন বা 'গোল্ডেন অ্যারো'-তে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে এই পাঁচটি অত্যাধুনিক ফাইটার জেটকে। এরফলে ভারতীয় বায়ুসেনার এই ঘাঁটিতে এখন তিনটি ফাইটার স্কোয়াড্রন মজুত হল। রাফাল ছাড়া অন্য দুটি স্কোয়াড্রন হল জাগুয়ার স্কোয়াড্রন। কিন্তু, সব ছেড়ে কেন হঠাৎ হরিয়াননার আম্বালার ঘাঁটিতেই আনা হল রাফাল-কে? বায়ুসেনার অফিসাররা বলছেন এর পিছনে আছে এই ঘাঁটির ঐতিহাসিক ও কৌশলগত গুরুত্ব।
- FB
- TW
- Linkdin
আম্বালায় বিমান ঘাঁটি হ'ল আইএএফের প্রাচীনতম ঘাঁটি। স্বাধীনতার আগেই এই বিমানঘাঁটিতে রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের সদর দফতর। ১৯৩০-এ আইএএফ-এর প্রথম ইউনিটটি তৈরি হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে, শুধুমাত্র ডি হাভিল্যান্ড ৯এ এবং ব্রিস্টল এফ২বি-এর নির্দিষ্ট কিছু বিমান আম্বালা থেকে পরিচালিত হলেও, ১৯৩৮ সালে এটি একটি স্থায়ী বিমানঘাঁটি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
স্বাধীনতার পর একেবারে ১৯৪৭-৪৮ সালের ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর যুদ্ধ, কার্গিলের যুদ্ধ, এমনকী ২০১৯ সালে বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদ'এর প্রশিক্ষণ শিবিরে যে এয়ারস্ট্রাইক চালানো হয়েছিল - ভারতীয় সামরিক ইতিহাসের পাতায় বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে আম্বালা বিমান ঘাঁটির কথা।
১৯৪৭-৪৮'এর ভারত-পাক যুদ্ধে আম্বালা থেকে স্পিটফায়ারস এবং হার্ভার্ডস শ্রীনগরে অভিযানে অংশ নিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান আবার বোমা ফেলেছিল এই ঘাঁটিতে। ১৯৭১ সালে শ্রীনগরে পাক বিমানবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে মরণোত্তরভাবে পরমবীরচক্র পেয়েছিলেন ফ্লাইং অফিসার নির্মল জিত সিং। কার্গিল যুদ্ধে বায়ুসেনার 'অপারেশন সফেদ সাগর' এবং 'অপারেশন পরাক্রম'-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এই ঘাঁটি। আর গত বছর এয়ারস্ট্রাইকের সময় পাকিস্তানিদের বিভ্রান্ত করতেএই ঘাঁটি থেকেই বাহওয়ালপুরের দিকে ওড়ানো হয়েছিল জাগুয়ার স্কোয়াড্রনকে।
সেইসঙ্গে রাফাল যেমন প্রথম এই ঘাঁটিতেই মোতায়েন হচ্ছে, তেমন ভারতীয় বায়ুসেনার বহু যুদ্ধবিংমান বা হামলাকারী হেলিকপ্টারও এই ঘাঁটিতেই প্রথম অন্তর্ভুক্তি পেয়েছে স্কোয়াড্রনে। এর আগে ফরাসি মিস্ত্রে বিমান, জাগুয়ার বিমানের প্রথম দুটি স্কোয়াড্রন, মিগ-২১ বাইসনের প্রথম স্কোয়াড্রন-ও আম্বালা-তেই বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
কৌশলগত দিক থেকেও আম্বলা বিমান ঘাঁটি দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে পশ্চিম ও উত্তর সীমান্তে পৌঁছনোটা খুবই সহজ। সেখানে অবস্থানরত যোদ্ধাদের ভারতের যে কোনও জায়গায় যে কোনও যুদ্ধে পাঠানো যায়। এর জন্য তাদের আগে স্থানান্তরিত করারও দরকার পড়ে না। একইসঙ্গে সীমান্ত থেকে বেশ ভিতরে অবস্থিত হওয়ায়, শত্রুদের নজরদারির বাইরে রয়েছে এই ঘাঁটি। তাই এখানে রাখা সামরিক ও অন্যান্য সম্পদ এবং অন্যান্য পরিকাঠামো একেবারে সুরক্ষিত। শুধুমাত্র ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময়, পাকিস্তানি বোমারু বিমানের আঘাতে এই ঘাঁটির ভিতরে থাকা একটি গির্জা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
যুদ্ধ যখন চলে না, অর্থাৎ শান্তিকালীন সময়ে বায়ুসেনাদের নিয়মিত যুদ্ধের প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেই দিরক থেকেও এই ঘাঁটি একেবারে উপযুক্ত। কারণ প্রশিক্ষণের জন্য জন্য আম্বালা ঘাঁটিতে একটি বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে। আর সীমান্ত থেকে দূরত্বের কারণে শত্রুপক্ষ ভারতীয় বায়ুসেনাদের সেই প্রশিক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে পারে না।
আম্বালা বিমান ঘাঁটির বেশকিছু প্রযুক্তিগত সুবিধাও রয়েছে, যা আইএএফের যুদ্ধের সক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। রয়েছে শক্তিশালী পরিকাঠামোও। আর সেখানে ভারতীয় সেনার দুটি বাহিনীর সদর দফতরও রয়েছে। ফলে এই ঘাঁটিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বায়ুসেনার তালমিলও খুব ভালো।
এর সঙ্গে রয়েছে আধ্যাত্মিক বিশ্বাসও। আম্বালা বিমানঘাঁটির মধ্যেই রয়েছে এক সূফী সাধক পীর বাবার মাজার। আম্বালা বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন বহু বায়ুসেনা সদস্যরই বিশ্বাস, সমস্ত বড় বড় অভিযানে তাঁদের রক্ষা করেন ওই পীর বাবা।
আইএএফ-এর একটি সূত্র জানিয়েছে প্রায় এক বছর আগে থেকেই আম্বালা বিমান ঘাঁটিতে রাফালে জেটগুলি রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছিল। গড়ে তোলা হয়েছে নতুন এভিওনিকস ল্যাবরেটরি, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ উন্নতমানের নতুন হ্যাঙ্গার আর রাফাল-এর সঙ্গে যেসব বিশেষ অস্ত্রশস্ত্র আসছে, সেগুলি রাখার জন্য জলবায়ু-নিয়ন্ত্রিত শক্তপোক্ত স্টোরেজ ব্যবস্থা।