- Home
- World News
- International News
- 'বাস্তবের টারজান' - নারী-পুরুষের শরীরের তফাতও জানেন না, ৪১ বছর জঙ্গলেই ছিলেন এই ব্যক্তি
'বাস্তবের টারজান' - নারী-পুরুষের শরীরের তফাতও জানেন না, ৪১ বছর জঙ্গলেই ছিলেন এই ব্যক্তি
কেউ কেউ বলছেন বাস্তবের 'টারজান', কারোর মনে পড়ছে রামায়ণের 'ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি'র কথা। ৪১ বছর ধরে জঙ্গলেই থাকতেন এক ভিয়েতনামের এক ব্যক্তি। সঙ্গী ছিল তাঁর বাবা এবং তাঁর এক দাদা। সভ্যতার সঙ্গে কোনও যোগাযোগই ছিল না তাঁদের। আর এর ফলে পৃথিবীতে যে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও অস্তিত্ব রয়েছে, তার কোনও ধারণাই ছিল না ওই ব্যক্তির। এ এক অদ্ভূত জীবনের কাহিনি।
| Published : Jun 27 2021, 01:11 PM IST / Updated: Aug 25 2021, 12:28 AM IST
- FB
- TW
- Linkdin
ঘটনাটি ভিয়েতনামের। ১৯৭২ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধ যখন প্রায় শেষ, সেই সময় মার্কিন বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল হো ভ্যাং ল্যাং-এর মা এবং দুই ভাইবোনের। এরপরই তাঁর বাবা হো ভ্যাং থান, তাঁকে এবং তাঁর দাদা ত্রি-কে সঙ্গে নিয়ে ল্যাং কোয়াং এনগাই প্রদেশের তায়ে ট্র জেলার জঙ্গলের গভীরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় হো ভ্যাং ল্যাং একেবারেই কোলের শিশু।
যুদ্ধের ভয়াবহতা তাঁর বাবাকে এতটাই বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল, যে তারপর ৪১ বছর আর দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি সভ্য জগতে ফেরেননি। চার দশক, ধরে তাঁরা বনেই ঘর বেঁধেছিল। খাদ্য বলতে ছিল মধু, ফলমূল এবং বন্য প্রাণী। সেই বনের মধ্যেই বেড়া দিয়ে বাড়িও বানিয়ে নিয়েছিল তারা। গাছের ছাল দিয়ে ল্যাংট বানিয়ে পরত তারা।
এতগুলো দিনের মধ্যে তাদের সঙ্গে হয়তো চার কি পাঁচ জন মানুষের দেখা হয়েছে, তবে প্রতিবারই তারা পালিয়েছে। কারণ হো ভ্য়াং ল্যাং-এর বাবার ধারণা ছিল, ভিয়েতনাম যুদ্ধ এখনও চলছে। আর আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রতিবারই দেখা হওয়া ব্যক্তিরা ছিল পুরুষ, ফলে কোনওদিন কোনও নারীকে দেখার সুযোগই হয়নি হো ভ্য়াং ল্যাং-এর।
সভ্য জগতের সঙ্গে তাঁদের ফের সাক্ষাত হয় ২০১৫ সালে। আলভারো সেরেজো নামে এক ফটোগ্রাফার ওই পরিবারটির পিছু নিয়েছিলেন। তিনিই হো ভ্য়াং ল্যাং-দের আস্থা অর্জন করে তাঁদের জঙ্গল থেকে নিয়ে এসেছিলেন পার্শ্ববর্তী এক গ্রামে। আর সেই প্রথম মহিলাদের দেখেছিলেন হো ভ্য়াং ল্যাং।
তারপর অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছে। আলভারো সেরেজো জানিয়েছেন, আজ হো ভ্য়াং ল্যাং পুরুষ ও মহিলাদের দেখে তাদের মধ্যে তফাতটা ধরতে পারে ঠিকই, কিন্তু, নারী-পুরুষের মধ্যে আসলে যে কী তফাত রয়েছে, সেটা তাঁর আজও অজানা। এমনকী, তার মধ্যে কখনও ন্যূনতম কোনও যৌন আকাঙ্ক্ষাও দেখা যায়নি।
ল্যাং-এর দাদা ত্রি-এর অবশ্য জঙ্গলে পালাবার আগেই সভ্য জগতের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধের ভয় তাঁকে এখনও তাড়িয়ে বেরালেও, হো ভ্যাং ল্যাং-এর মতো সব্য জগৎটা তাঁর কাছে একেবারে নতুন কিছু নয়। তিনি জানিয়েছেন, হো ভ্যাং ল্যাং আসলে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দেহে থাকা একটা শিশুর মতো। একেবারে ছোট থেকে জঙ্গলে মানুষ হওয়ার, বেশ কিছু প্রাথমিক সামাজিক ধারণা তাঁর নেই। ভাল এবং মন্দের পার্থক্য করতে পারে না সে। ত্রি বলেছেন, তিনি যদি তাঁর ভাইকে বলেন কাউকে ছুরি মাড়তে, তাহলে হয়তো তিনি নির্দ্বিধায় তা করে বসবেন।
তাঁদের সভ্য জগতে ফিরিয়ে আনা ফটোগ্রাফার সেরেজোর মতে ল্যাং তাঁর জীবনে দেখা সবচেয়ে ভাল মানুষ। নতুন জীবনের সঙ্গেও তিনি আস্তে আস্তে মানিয়ে নিচ্ছেন। তবে সভ্য জগতে এসে কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন তিনি। তাঁর শরীরের সঙ্গে এইসব ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াদের মোলাকাত একেবারে নতুন। সবচেয়ে কঠিন গিয়েছে সভ্যতায় ফেরার পর প্রথম বছরটা।
তবে, সভ্য জগতে বড্ড বেশি আওয়াজ বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ল্যাং। তবে তাঁর সবথেকে ভালো লেগেছে এই জগতে প্রাণীরা মানুষের পোষ মানে। জঙ্গলে সবসময় হয় তারা পালিয়ে যেত, নয়তো তাঁদের পালাতে হত।