- Home
- World News
- International News
- লো প্রোফাইল প্রধানমন্ত্রী, নির্মম জঙ্গি থেকে ধুরন্ধর প্রচারক - চিনে নিন নয়া তালিবানি সরকার
লো প্রোফাইল প্রধানমন্ত্রী, নির্মম জঙ্গি থেকে ধুরন্ধর প্রচারক - চিনে নিন নয়া তালিবানি সরকার
গত ১৫ অগাস্ট কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা পুনর্দখল করেছিল তালিবানরা। তারপর থেকে অনেক টালবাহানার পর মঙ্গলবার রাতে তারা তত্ত্বাবদায়ক সরকার গঠন করেছে। প্রধাণত তালিবানদের তিন গোষ্ঠী - দোহা ইউনিট, কান্দাহার গোষ্ঠী এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বেই সরকার গঠন করতে এতটা দেরি হল তাদের। নতুন সরকারে পাল্লা ভারি হাক্কানিদেরই। তবে দোহা ইউনিট এবং কান্দাহার গোষ্ঠীর উপস্থিতিও রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দের নেতৃত্বাধীন নয়া আফগান সরকারের সর্বাধিক গরুত্বপূর্ণ ৬ ব্যক্তিত্বকে -
| Published : Sep 08 2021, 05:14 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
গত ২০ বছর ধরে, তালিবানদের সর্বশক্তিমান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা রেহবারি শুরা বা নেতৃত্ব পরিষদের প্রধান আখুন্দ। প্রথম তালিবান সরকারের প্রথমে বিদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। যে কান্দাহার থেকে তালিবান গোষ্ঠীর উত্থান, সেখানেই জন্ম আখুন্দের। তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের খুব কাছের মানুষ ছিলেন আকুন্দ, তালিবানদের প্রথম ৩০ জন মূল সদস্যের একজনও বটে। রাষ্ট্রসংঘের নিষেধাজ্ঞাও ছিল তার উপরে। বলা হয়েছিল, ওমরের 'ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা'। তালিবান গোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ করে সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার কাছে অত্যন্ত সম্মানীয় হাসান আখুন্দ। তবে খুবই লো-প্রোফাইলে থাকতে ভালবাসে এই নেতা।
ভয়ঙ্কর জঙ্গিগোষ্টী হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান। ২০১৮ সালে তার বাবা তথা হাক্কানি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন হাক্কানির মৃত্যুর পর তার ছেলে সিরাজউদ্দিন হাক্কানি দলের নেতৃত্ব দেয় আর বাবার থেকেও নেতা হিসেবে সফল সে। তালিবানদের সঙ্গে থেকেও হাক্কানিরা েকটি উপদল হিসাবেই কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাক্কানি নেটওয়ার্ককে েকটি বিদেশী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবেই মনে করে। রাষ্ট্রসংঘের নিষেধাজ্ঞা কমিটি বলেছে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে আইনহীন সীমান্ত এলাকায় এই গোষ্ঠী মাদক উৎপাদন ও বাণিজ্যেও জড়িত। আত্মঘাতী হামলায় জড়িত থাকার কারণে এবং আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে সিরাজুদ্দিন হাক্কানি, এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেডদের মধ্যে একজন।
তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব। ২০১৫ সালে সে তালিবান প্রধান হওয়ার চেষ্টা করেছিল। বাবার উত্তরাধিকারী মোল্লা আখতার মনসুরের কাউন্সিল বৈঠক থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। পরে অবশ্য বিদ্রোহ থামিয়ে আবার মূল তালিবান দলে ফিরে আসে। বয়স এখনও ৩০-এর গোড়ায় হলেও বাবার নামের জোরেই সে তালিবানদের কান্দাহার গোষ্ঠীর একটি অংশের নেতা। গত বছর তালিবান সামরিক কমিশনের সার্বিক প্রধান হিসেবে তাকে মনোনীত করা হয়েছিল। আফগানিস্তানে তালিবানি সামরিক অভিযানে বড়দার এবং সিরাজউদ্দিন হাক্কানির পাশে ইয়াকুব ছিল তৃতীয় বড় কমান্ডার।
মোল্লা ওমরের এতই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, যে ওমর তাকে 'বরদার' বা 'ভাই' বলে ডাকত। শেষ তালিবান শাসনে সে উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিল। রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে, তালিবান সরকারের পতনের পর বরদার সামরিক কমান্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। মার্তিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর ওপর বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। ২০১০ সালে পাকিস্তানে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কারাবন্দিও করা হয়। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে সে দোহায় তালিবানদের রাজনৈতিক কার্যালয়ের নেতৃত্বে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনার সেই মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে তার নামই সবার আগে ছিল।
মুত্তাকি পাকটিয়া প্রদেশের বাসিন্দা। বিগত তালিবান সরকারে সে সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রীর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিল। পরে তাকে কাতারে পাঠানো হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনার ভূমিা নিয়েছিল। মুক্তাকি কিন্তু জঙ্গি কমান্ডার বা ধর্মীয় নেতা নয়। তালিবান সূত্রে জানা গিয়েছে, সে মুত্তাকি আমন্ত্রন ও নির্দেশনা কমিশনের চেয়ারম্যান। সরকারি কর্মকর্তাদের এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে তালিবানদের দলে ভেড়ানো তার কাজ। তালিবানদের মধ্যে তাকে কিছুটা মধ্যপন্থী বলে মনে করা হয়। শহরাঞ্চলে যুদ্ধের বদলে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বেশি আগ্রহী।
তালেবানদের দীর্ঘদিনের মুখপাত্র, জাবিউল্লা মুজাহিদ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত তার টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আত্মঘাতী হামলার বিবরণ থেকে শুরু করে তালিবান গোষ্ঠীর কার্যক্রমের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তাকে সে। কাবুল বিজয়ের পরও তা অব্যাহত রয়েছে। তবে, তালিবানরা বদলে গিয়েছে, গোটা বিশ্বকে কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও ভাবতে বাধ্য করেছে সে। মঙ্গলবার তালিবান মন্ত্রীসভার নামও ঘোষণা করেছে সেই। অথচ, ১৭ অগাস্ট কাবুলের পতনের পর তালিবানদের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনের আগে পর্যন্ত সংবাদমাধ্যম কি গোয়েন্দা বিভাগ, কারোর কাছে তার কোনো ছবি ছিল না। নতুন সরকারেও তথ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রোপাগান্ডা প্রচারে মুখ্য ভূমিকা নেবে সে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।