- Home
- World News
- International News
- ভুঁড়িতেই সৌন্দর্য, মোটাদেরই এখানে সর্বোচ্চ সম্মান - মেদ বাড়াতে পান করা হয় গরুর রক্ত
ভুঁড়িতেই সৌন্দর্য, মোটাদেরই এখানে সর্বোচ্চ সম্মান - মেদ বাড়াতে পান করা হয় গরুর রক্ত
বিশ্বের কোটি কোটি লোক স্থূলতা কমাতে জিমে দৌড়চ্ছেন, যোগা করছেন, ডায়েট করছেন। অথচ, এই উপজাতির পুরুষরা ভুঁড়ি বাড়াবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন, কারণ তাদের গ্রামের বার্ষিক মোটা প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে পারলেই সারা জীবনের জন্য সে হয় নায়ক।
- FB
- TW
- Linkdin
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মোটা (Fat) হয়ে যাচ্ছেন বলে আফশোষ করছেন? অল্প অল্প করে ভুঁড়ি (Pot Belly) বেড়ে যাচ্ছে বলে বিরক্ত? অথচ, পৃথিবীতে এমন এক উপজাতি রয়েছে, যেখানে মোটা মানুষদেরই সবথেকে বেশি কদর। ভুঁড়িই সৌন্দর্যের মাপকাঠি।
রোজ যখন বিশ্বের কোটি কোটি লোক স্থূলতা কমাতে জিমে দৌড়চ্ছেন, যোগা করছেন, ডায়েট করছেন, সেই একই সময়ে এই উপজাতির পুরুষরা ভুঁড়ি বাড়াবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন। গ্রামের বার্ষিক মোটা প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে হবে যে।
বদি উপজাতির (Ethiopian Bodi Tribe) কথা বলছি। ইথিওপিয়ার (Ethiopia) ওমো উপত্যকার (Omo Valley) এক প্রত্যন্ত কোণে বাস করে এই আফ্রিকান উপজাতি। এই উপজাতির যুবকরা, সবচেয়ে মোটা পুরুষের শিরোপা পাওয়ার জন্য জান-প্রাণ লড়িয়ে দেয়।
কারণ তাদের গ্রামে 'হিরো' হতে গেলে, কোনও সাহসিকতার কাজ করতে লাগে না। প্রতি বছর নববর্ষের সময়, গ্রামে 'কায়েল' (Kayel) উৎসব হয়। তার ছয় মাস আগে গ্রামের কিছু যুবককে বাছাই করা হয় এই প্রতিযোগিতার জন্য। পরের ছয় মাস তারা নিভৃতবাসে থাকে। তাদের বিশেষ খাবার এবং পানীয় খাওয়ানো হয়। তারপর, উৎসবে তারা তাদের নতুন মোটা শরীর প্রদর্শন করে। সেই শরীর প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে পারলেই, বাকি জীবনের জন্য গ্রামে নায়কের সম্মান পাওয়া যায়।
মোটা হওয়ার জন্য কী বিশেষ খাবার ও পানীয় গ্রহণ করে তারা? জানা গিয়েছে, গরুর রক্ত এবং দুধ মিশিয়ে (Mixture of Cow Blood and Milk) এক বিশেষ মিশ্রণ তৈরি করা হয়। সেটি, বাছাই হওয়া যুবকদের নিয়মিত পরিবেশন করেন গ্রামের মহিলারা। এই বিশেষ পানীয়ই তাদের বড় পেট বা ভুঁড়ির উৎস।
তবে, এই মিশ্রন তৈরির জন্য কিন্তু কোনও গরুকেই হত্যা করা হয় না। বদি উপজাতির কাছে গরু পবিত্র। তাই, গরুর রক্ত সংগ্রহের জন্য একটি বর্শা বা একটি কুড়ুল দিয়ে গরুর একটি শিরায় কেটে রক্ত বের করে নেওয়া হয়। তারপরে, আবার কাদামাটি দিয়ে ওই ক্ষত নিরাময় করে দেওয়া হয়।
বাছাই পুরুষদের একটি দুই-লিটারের পাত্রে ওই গরুর রক্ত এবং দুধের মিশ্রন দেওয়া হয়। সেই মিশ্রন খানিকক্ষণ রেখে দিলেই জমাট বেঁধে যেতে পারে। তাই অত্যন্ত দ্রুত পান করতে হয়।
তবে প্রচন্ড গরমের মধ্যে সবাই সেই গতিতে ওই মিশ্রন পান করতে পারে না। অনেকে, বমিও করে। তারা অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত হয় এবং প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যায়। শেষ পর্যন্ত যারা টিকে থাকে, তাদের নিয়ে হয় কায়েল উৎসব।
প্রতিযোগীরা, তাদের নিভৃতবাস থেকে বেরিয়ে হেঁটে অনুষ্ঠানস্থলে আসে। ছয়মাসের বিশেষ ডায়েটে তাদের শরীরের আশ্চর্য পরিবর্তন ঘটে। সেই শরীরে তারা মাটি এবং ছাই দিয়ে নকশা আঁকে। মহিলারা তাদের শরীরে বেঁধে দেন নানারকম রঙিন পাথরের তৈরি অলঙ্কার।
এরপর, একটি পবিত্র গাছের চারপাশে বৃত্তাকারে তাদের দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা ধরে হাঁটতে হয়। অতিরিক্ত ওজন এবং ভুঁড়ির চাপে, ওই যুবকদের পক্ষে এই হাঁটাটা অত্যন্ত কষ্টকর। অনেকেই, সেই পরিশ্রম সহ্য করতে পারেন না। গ্রামের বাকি পুরুষরা চারপাশে দাঁড়িয়ে তাদের হাঁটা দেখেন।
গ্রামের মহিলারা প্রতিযোগীদের মদ পান করান। তাদের ঘাম মুছিয়ে দেন। সবচেয়ে স্থুল ব্যক্তি নির্বাচিত হওয়ার পর, গ্রামের প্রবীণরা বিজয়ীর ভবিষ্যত নির্ণয়ের জন্য তার ভুঁড়ি ও রক্ত পরীক্ষা করেন। সবশেষে একটি বড় পবিত্র পাথর দিয়ে একটি গরু জবাই করে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
সাধারণত, কায়েল অনুষ্ঠানের পরে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া কম হওয়ার কারণে এই পুরুষরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। অধিকাংশ প্রতিযোগীরই বিশাল ভুঁড়ি কমে যায়। আর তারপরই, পরের বছরের প্রতিযোগিতার জন্য আবার কয়েকজন পুরুষকে বেছে নেওয়া হয়।
তবে, ভুঁড়ি কমে গেলেও, কায়েল-এর বিজয়ীরা সারা জীবনই গ্রামে অনন্য সম্মান পেয়ে থাকেন। তাই, এই উপজাতির পুরুষরা, ছোট থেকেই কায়েল প্রতিযোগিতা জেতার স্বপ্ন দেখতে থাকে। বিয়ের ক্ষেত্রেও ভুঁড়িওয়ালা মোটা পুরুষদেরই কদর বেশি। কাজেই ভুঁড়ি বা ওজন বাড়লে হতাশ হবেন না, দুঃখ পাবেন না।