- Home
- World News
- International News
- ভবিষ্যতের স্থল যুদ্ধ, ২০৩০-এ কোন কোন দেশের সেনাবাহিনী হবে সবচেয়ে শক্তিশালী
ভবিষ্যতের স্থল যুদ্ধ, ২০৩০-এ কোন কোন দেশের সেনাবাহিনী হবে সবচেয়ে শক্তিশালী
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস দেওয়া বেশ শক্ত। কোভিড-১৯ মহামারির পর তথাকথিত ভবিষ্যতদ্রষ্টারও সম্ভবত তা বুঝেছেন। কাজেই ২০৩০ সালে কোন দেশের সেনাবাহিনী সবচেয়ে শক্তিশালী হবে তা বলাটাও বেশ কঠিন। তবে কোনও দেশের সেনাবাহিনী কতটা শক্তিশালী হবে তা নির্ভর করে মূলতঃ কয়েকটি সহজ প্রশ্নের উত্তরের উপর। প্রথমত, সেই দেশের হাতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ায় উৎসাহী এরকম জনবল কীরকম রয়েছে। দ্বিতীয়ত, দৃঢ় আধুনিক অর্থনীতির মাধ্যমে তারা কতটা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাতে পারে। এবং, তৃতীয়ত, সেই দেশে নাগরিক-সামরিক স্বাধীনতার ভারসাম্য কতটা উন্নত। এই প্রশ্নগুলির মাধ্যমেই নিচে ২০৩০-এ কোন দেশের সেনাবাহিনী সবচেয়ে শক্তিশালী হতে পারে তা বের করার চেষ্টা করা হল।
| Published : Jun 26 2020, 02:16 PM IST / Updated: Jul 28 2020, 06:40 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর ১৯৯১ সালে ইরাকি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল ইউএস আর্মি, অর্থাৎ মার্কিন স্থলবাহিনী। বলা যায় অন্তত সেই সময় থেকেই স্থল যুদ্ধে এই বাহিনী তার শ্রেষ্ঠতা ধরে রেখেছে। ২০০৩ সালে ফের ইরাকে জয়, সেইসঙ্গে গত পনের বছর ধরে, ইরাক ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তাদের অভিজ্ঞতা আরও প্রসিদ্ধ করেছে। মার্কিন মুলুকে সামরিক উদ্ভাবনের স্রোতও অব্যাহত। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ের বেশ কিছু সরঞ্জাম আজও ব্যবহৃত হলেও সেগুলিকে দেওয়া হয়েছে অত্যাধুনিক রূপ। মার্কিন সেনাবাহিনীর হাতেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নজরদারি ড্রোন। সেগুলির বেশিরভাগই অস্ত্র বহনেও সক্ষম। ২০৩০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী স্থল যুদ্ধ শক্তি হিসাবেই থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রতিযোগীদের থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে থাকবে বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
ফ্রান্স
ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে সম্ভবত ভবিষ্যতে সর্বাধিক সক্ষম, প্রাণঘাতী সেনাবাহিনী ধরে রাখবে সক্ষম হবে ফ্রান্স। বিশ্ব রাজনীতিতে একটি প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করা ফরাসীদের বরাবরের নীতি। সেই ভূমিকা পালন করার জন্য তারা স্থলবাহিনীর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সামরিক ও সুরক্ষা সরঞ্জামগুলির নিয়ন্ত্রণও সবচেয়ে বেশি রয়েছে ফ্রান্সের হাতেই। এরসঙ্গে জুড়তে হবে ফ্রান্সের সামরিক শিল্প-কে। দেশিয় বাহিনীকে সহায়তার পাশাপাশি যারা রফতানি শিল্পেও দারুণ শক্তিশালী। তাদের সেনাবাহিনীর হাতে এখনই অত্যাধুনিক সামরিক এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম রয়েছে। ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি-সহ দুর্দান্ত সব সমর সরঞ্জাম। খুব বড় মাপের যুদ্ধের নাহলেও মাঝারি মাপের অভিযানের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে ফরাসিদের। আফগানিস্তান ও উত্তর আফ্রিকায় তারা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ করেছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে রয়েছে মেরিন ও বিমানবাহিনীর সমর্থন। সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্বের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাহিনীকে সহজেই মোতায়েন করতে পারে ফরাসী সরকার।
রাশিয়া
ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানে রুশ সেনাবাহিনী কেমন মিইয়ে গিয়েছিল। আর্থিক সংস্থান, রাজনৈতিক সমর্থন, জনবল - অনেকাংশেই হারিয়ে ফেলেছিল রুশ বাহিনী। সামরিক-শিল্প যা কিনা ছিল রেড আর্মির লাইফলাইন, তাও ধীরে ধীরে একেবারে ভেঙে পড়ে। বাহিনীর হাতে রয়ে গিয়েছিল পুরানো এবং দুর্বল সব সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম। নৈতিকভাবেই পিছিয়ে পড়েছিল রাশিয়ার সেনাবাহিনী। সবই যে পাল্টে গিয়েছে, তা নয়, তবে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রুশ বাহিনীতে ফের বড় বিনিয়োগের অনুমতি মিলেছে। চেচনিয়া, জর্জিয়া, ক্রিমিয়ার যুদ্ধে জয় এই পরিবর্তনের ফল দেখিয়ে দিয়েছে। আশপাশের দেগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে ফের মস্কোর ট্রাম্পকার্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। তবে তাদের এই কৃতিত্ব ভাগ করে নিয়ে হবে বায়ু ও নৌসেনার সঙ্গে। ২০৩০ সালেও রুশ সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম শক্তিশলী বাহিনী হিসাবে গন্য হবে ঠিকই, তবে তাদের কিছু গুরুতর সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। সোভিয়েত সামরিক-শিল্পের সম্পূর্ণ মৃত্যুর পর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে মস্কোকে। জনবলও সমস্যা হতে পারে। কারণ সেনাবাহিনী এখনও স্বেচ্ছাসেবকদের উপর নির্ভরশীল। তবে তাদের হিসাবের বাইরে রাখা একেবারেই যাবে না।
চিন
গত শতাব্দীর নয়ের দশকের গোড়া থেকেই পিপলস লিবারেশন আর্মি তার স্থল বাহিনীর সংস্কার করে চলেছে। তার আগে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে, পিএলএ ছিল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ এক অংশের সম্পূর্ণ করায়ত্ব। সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে পিএলএ একটি আধুনিক পেশাদারি সামরিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। চিনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গেই বাহিনীর চেহারার এই হতে শুরু করেছিল। এই সংস্কারের মধ্যে রয়েছে বিশাল মাপের যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের আধুনিকীকরণ, বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ এবং বাহিনীর পেশাদারিকরণ। মার্কিন সেনাবাহিনীর মতো বিপুল তহবিল পিএলএ-র হাতে নেই। যা আছে তা আবার মেরিন ও বায়ুসেনার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। তবে এই বাহিনীর জনবল প্রায় সীমাহীন। এই বিষয়ে তারাবিশ্বের যে কোনও সেনাবাহিনীর তুলনায় এগিয়ে। তবে পিএলএ-র প্রধান সমস্যা হল বাস্তব-অভিজ্ঞতার অভাব। চিন-ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর থেকে সরাসরি যুদ্ধ করতে হয়নি চিনা বাহিনীকে। এই শতাব্দীতে সন্ত্রাসবাদ দমনের মতো কোনও বড় আন্তর্দজাতিক বিবাদে তারা ভূমিকা নেয়নি। সেইসঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ বিবাদের হাত থেকে কোনও দিনই তারা পুরোপুরি স্বাধীনতা পাবে না। তবে আধুনিকিকরণ এবং সংস্কারের যে প্রবণতা তাদের বাহিনীতে দেখা যাচ্ছে তাতে ২০৩০ সালে তারা এক দারুণ শক্তিতে পরিণত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারত
স্থল যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে অভিজাত বাহিনীগুলির একটি। ঘরের মাওবাদী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বা কাশ্মীরে পাক-সমর্থিত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই হোক কিংবা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুখোমুখি তীব্র লড়াইয়ে ভারতীয় সেনা ইতিমধ্য়েই দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথভাবে দীর্ঘদিন ধরে তারা বাস্তবসম্মত যুদ্ধ প্রশিক্ষণ করে আসছে। সামগ্রিকভাবে, এইসব অভিজ্ঞতা সেনাবাহিনীকে নয়াদিল্লির বৈদেশিক এবং দেশিয় নীতির কার্যকরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী অবশ্য সামরিক সাজ-সরঞ্জামগুলি তার প্রতিযোগীদের থেকে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবে, সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে রাশিয়া, ইউরোপ, ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে ক্রমেই দেশিয় সামরিক শিল্প-ও এগিয়ে আসছে। তবে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ সেনাবাহিনীকে ভাগ করে নিতে হয় বায়ুসেনা ও নৌবাহিনীর সঙ্গে। তবে অদূর ভবিষ্যতে আরও উন্নত সামরিক প্রযুক্তির সমর্থনে ভারতীয় সেনা আরও প্রবল শক্তিতে পরিণত হবে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।