বাড়িতে কুকুর পোষা নিষেধ, চিনের পথেই চলেছে কিম জং-এর উত্তর কোরিয়া
প্রায় চিনের মতোই অবস্থা সি জিনপিং-এর অন্যতম বন্ধু কিম জং-উন'এর দেশ উত্তর কোরিয়ার। জিনপিং-এর চিনের মতোই সম্প্রতি তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে কিমের দেশেও। জিনপিং প্রসাসন দেশে খাদ্য নষ্ট বন্ধের ডাক দিয়েছেন। আর তাঁর বন্ধু তথা উত্তর কোরিয়ার বিতর্কিত সর্বময় নেতা কিম নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁর দেশে কুকুর পোষা চলবে না। পোষা কুকুরদের সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, খাদ্য সংকটেরর সঙ্গে কুকুর পোষার কী সম্পর্ক?
- FB
- TW
- Linkdin
রাষ্ট্রসংঘ-এর এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার মোট ২ কোটি ৫৫ বক্ষ মানুষের ৬০ শতাংশই এখন 'বিস্তৃত খাদ্য সংকট'-এর মুখে পড়েছেন। কিম প্রশাসনের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কারণে একের পর এক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণেই অবস্থা এই পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। সম্প্রতি, চিনের মতোই ভারি বৃষ্টির কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। ফলে প্রচুর ধান ও অন্য়ান্য খাদ্যশস্য নষ্ট হয়েছে। তার উপর দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস মহামারী, যার ফলে দারুণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে খাদ্য সরবরাহ।
এই অবস্থায় পোষা কুকুরদের সরকার জমা নিচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই কুকুরদের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁয় পাঠানো হচ্ছে জবাই করে মাংস রান্নার জন্য। এইভাবে একই ঢিলে দুই পাখি মারছেন কিম, এমনটাই দাবি করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। একদিকে, এই মাংসের ফলে খাদ্য সংকট কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যাবে, তার থেকেও বড় কথা হল, দেশের গরীব মানুষদের অসন্তোষ অনেকাংশেই প্রশমিত করতে পারবেন কিম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কিম জং-উন'এর তথাকথিত কমিউনিস্ট সরকার দরিদ্র শ্রেণির মানুষদের বোঝাচ্ছে, গরীব মানুষ পোষেন শূকর বা অন্যান্য পশুসম্পদ। আর কুকুর পোষেন শুধুমাত্র দেশের রাজধানী পিয়ংইয়াং-এ বসবাসকারী ধনী সমাজ। কুকুর পোষাকে রীতিমতো পুঁজিবাদী ব্যবস্থার 'অবক্ষয়' হিসাবে দেখাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদ সূত্র জানিয়েছে, কিম জং-উন গত জুলাই মাসে ঘরে কুকুর রাখা 'বুর্জোয়া আদর্শের কলঙ্কিত প্রবণতা' বলে ব্যাখ্যা করে দেশে কুকুর পোষাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
শুধু তাই নয়, দেশের কোন কোন পরিবার কুকুর পোষে সেই পরিবারগুলিকে ইতিমধ্যেই সনাক্ত করা হয়েছে। সেই পরিবারদের থেকে এখন কুকুর গুলিকে স্বেচ্ছায় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাহলে সরকারের পক্ষ থেকে জোর করে কুকুরগুলিকে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
বাজেয়াপ্ত করার পর কিছু কুকুরকে রাষ্ট্র পরিচালিত চিড়িয়াখানায় বন্দি করা হচ্ছে। নাহলে সরাসরি রেস্তোঁরা ও বাজারে পাঠানো হচ্ছে জবাই করে মাংস হিসাবে বিক্রি করার জন্য।
বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপে স্বাভাবিকভাবেই কুকুর-মালিকরা পিছনে পিছনে কিম জং-উনকে শাপশাপান্ত করছেন। কিন্তু, কিম-এর ভয়ে সামনাসামনি কিছু বলার উপায় নেই।
দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস খাওয়ার ঐতিহ্য ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হলেও, কুকুরের মাংস দীর্ঘকাল ধরেই কোরিয়ান উপদ্বীপে অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য হিসাবে পরিচিত। উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এখনও কুকুরের মাংস খাওয়া হয়।
মজার বিষয় হল, গত শতাব্দীতে চিনেও য়খন চরম খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছিল, সেইসময় তার থেকে মুক্তি পেতে কমিউনিস্ট সরকার বিভিন্ন বন্যপ্রাণ ও পোষ্য প্রাণীকে পশুসম্পদ হিসাবে ঘোষণা করেছিল। সেই থেকেই চিনে বাদুড়, কুকুড়, প্যাঙ্গোলিন ইত্যাদি অদ্ভূত প্রাণীর মাংস খাওয়া শুরু হয়েছিল। যে অভ্যাসের কারণে বারবার চিন থেকে সার্স, কোভিড-এর মতো রোগের উৎপত্তি ঘটছে।
চলতি বছরের শুরুতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে, কুকুর ও বিড়ালের মাংসের ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল চিন। কিন্তু তারপরেও চিনের ইউলিন শহরে 'ইউলিন ডগ মিট ফেস্টিভাল' হয়েছে। হাজার হাজার কুকুর-এর উপর চলেছে মধ্যযুগীয় বর্বরতা।