- Home
- World News
- International News
- প্রথম আফগান মহিলা পাইলটেরও ডানা কেটে নিয়েছিল তালিবান - কীভাবে, দেখুন ছবিতে ছবিতে
প্রথম আফগান মহিলা পাইলটেরও ডানা কেটে নিয়েছিল তালিবান - কীভাবে, দেখুন ছবিতে ছবিতে
- FB
- TW
- Linkdin
আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে তার জীবনের কাহিনি েকটি বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন নিলোফার রাহমানী। সেই বই অনুযায়ী, তার জন্ম হয়েছিল ১৯৯১ সালে, কাবুলে। কিন্তু, কয়েক মাস পরই গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে কাবুল ছেড়ে পাকিস্তানের এক আফগান শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে গিয়েছিল। তিন বছর পর, তারা করাচির এক অ্যাপার্টমেন্টে চলে গিয়েছিল। তবে কয়েক বছর উদ্বাস্তু হিসেবে বাস করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তারা। সকলে আফগানিস্তানে ফিরে আসেন।
১৯৯৯ সালে দেশে ফিরেছিল তার পরিবার। আফগানিস্তান তখন তালিবানদের নিয়ন্ত্রণাধীন। রাহমানী জানিয়েছেন সেই আফগানিস্তানে কোথাও কোনও সঙ্গীত ছিল না, আকাশে উড়ত না েকটিও রঙিন ঘুড়ি, বাজার ছিল না কোনও হইচই। বাইরে থেকে কেউ আসতও না সেই মরা দেশে। তবে সবচেয়ে খারাপ হল, তালিবানি দেশে নারীদের জন্য সমাজে কোনও জায়গা ছিল না। নিলোফার বলেছেন মহিলারা ছিল আধুনিক যুগের ক্রীতদাস। পশুর থেকেও খারাপ আচরণ করা হত তাদের সঙ্গে।
পরের কয়েক বছর ভয়ঙ্কর বর্বরতার সাক্ষী হয়েছেন নিলোফার রাহমানী। আফগানিস্তানে ফেরার কিছুদিন পরই তালিবানরা তাদের প্রতিবেশীদের এক ১৮ বছরের মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তালিবানরা। মেয়েটির বাবা বাধা দিতে গেলে তালিবানরা তাকে হত্যা করেছিল। কয়েক বছর পরে, নিলোফারের বোন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার মা তাড়াহুড়ো করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে গিয়ে জুতো পরতে ভুলে গিয়েছিলেন। নগ্ন পা দেখানোর জন্য তাঁকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করেছিল তালিবান শাসকরা।
৯/১১ হমলার পর মার্কিন প্রতিঘাতে তালিবান জমানার পতন ঘটেছিল। আফগান নারীরাও বেশ কিছু অধিকার ফিরে পেয়েছিল। নিলোফার রাহমানী একটি নতুন বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। পড়াশোনায় তিনি দারুণ প্রতিভার সাক্ষর রেখেছিলেন। ২০০৯ সালে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট আফগান সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিল। আফগান বিমান বাহিনীতে পাইলট হিসাবে মহিলাদেরও নিয়োগ করা শুরু হয়েছিল। বাবাকে গিয়ে পাইলট হওয়ার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন নিলোফার। তার ববা বলেছিলেন, 'তুমি আমার ছেলের মতো'। এরপরই আর সময় নষ্ট না করে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি।
তবে এখানেই নিলোফারের লড়াই শেষ হয়নি, বরং এরপরই সবথেকে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। মহিলাদের শৌচাগার ছিল না, সেনাবাহিনীতে আফগান পুরুষরা চরম বৈরি মনোবাবা সম্পন্ন ছিল। অন্যান্য মহিলা প্রশিক্ষণাদীনদের মতো নিলোফার রাহমানীকেও তাঁর প্রশিক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রাখতে হয়েছিল। এমনকী তাঁর ছোট ভাইবোনরাও জানত না, তিনি ঠিক কী করছেন। জানতে পারলে 'লোকললজ্জা'র মুখে পড়তে পারত তার পরিবার।
এই কড়া চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও নিলোফার রাহমানী এয়ার ফোর্স ওরিয়েন্টেশন এবং ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সট্রাকশনের বেসিক অফিসার ট্রেনিং সম্পূর্ণ করেন। তারপর, তাঁকে যুদ্ধবিমান ওড়ানো শেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রশিক্ষণের আগে তিনি কোনদিন বিমানেই ওঠেননি। তাও একেবারে প্রথম থেকেই সহজাত প্রতিভায় যুদ্ধবিমান ওড়াতে শুরু করেছিলেন তিনি।
যুদ্ধবিমান ওড়াতে ওড়াতে নিলোফার জীবনকেও নতুনবাবে দেখতে শুরু করেছিলেন। আকাশে, পাখিদের সঙ্গে উড়তে উড়তে তিনি এক 'অবিশ্বাস্য স্বাধীনতা এবং অবিচ্ছিন্ন উচ্ছ্বাস' অনুভব করেছিলেন, বলে বইয়ে লিখেছেন তিনি। ২০১৩ সালে নিলোপার রাহমানী আফগান বিমান বাহিনীর প্রথম মহিলা ফিক্সড-উইং পাইলট হয়েছিলেন।
তবে ওড়ার স্বাধীনতা বেশিদিন থাকেনি তাঁর। দুর্ভাগ্যবশত, দ্রুতই তাঁর আফগান জাতীয় বাহিনীর হয়ে বিমান ওড়ানোর খবর প্রকাশ পেয়ে যায়। এর পরিণতিতে তার বাবার চাকরি যায়। তাঁর বোনকে তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। আর তাঁর ভাইকে দু'দুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। একটি বিমানের কমান্ডিং অফিসার এবং আফগান বায়ুসেনার একজন ক্যাপ্টেন হওয়া সত্ত্বেও, ঘাঁটিতে তাঁকে বোরখা পরে ঘুরতে হতো। পাছে, তাঁকে কেউ চিনে ফেলে।
নিলোফার বেশিদিন ওভাবে থাকতে পরেননি। ২০১৯ সালে, তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার পরিবারও তাঁর সঙ্গে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যদিও আমেরিকায় গিয়েও পুরোপুরি নিরাপদ হতে পারেননি তাঁরা। সেই কারণে সেখানে ঠিক কোথায় বাস করেন, তা কাউকে জানান না।
তবে আবার ওড়ার স্বপ্ন দেখছেন, প্রথম আফগান মহিলা পাইলট নিলোফার রাহমানী। আমেরিকান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন তিনি। তার ইচ্ছা মার্কিন বায়ুসেনা বাহিনীতে যোগদান করা। তাহলেই ফের পাখিদের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন তিনি। র পরিকল্পনা করেছেন।