- Home
- World News
- International News
- 'জ্যাভলিন মিসাইল' কী, যার জোরে রাশিয়াকে পিছু হঠতে বাধ্য করছে ইউক্রেন
'জ্যাভলিন মিসাইল' কী, যার জোরে রাশিয়াকে পিছু হঠতে বাধ্য করছে ইউক্রেন
- FB
- TW
- Linkdin
জ্যাভলিন মিসাইল হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি পোর্টেবল অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল সিস্টেম। ১৯৯৬ সাল থেকে এই অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ব্যবহার করে মার্কিন সেনা (US Army)। সবচেয়ে অত্যাধুনিক বর্মও ভেদ করতে সক্ষম এই মিসাইল।
ক্ষেপণাস্ত্রটি ইনফ্রারেড গাইডেন্স প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে পরিচালিত এবং এর 'লক-অন-টার্গেট' ক্ষমতা রয়েছে। ফলে, এই মিসাইল লঞ্চের ক্ষেত্রে নিক্ষেপকারী 'ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট'এর সুবিধা পান। অর্থাৎ, একবার ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের পর, সেটিকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে পরিচালিত করার ঝক্কি থাকে না। তাই এটি গেরিলা যুদ্ধে (Guerrilla Warfare) বিশেষ উপযোগী।
জ্যাভলিন মিসাইলের গতিপথটি হয় 'আর্কড' অর্থাৎ, ধনুকের মতো বাঁকা। এর ফলে এই ক্ষেপণাস্ত্র 'টপ-অ্যাটাক' করতে সক্ষম। অর্থাৎ, এটিকে কোনও ট্যাঙ্ক বা ভারী সাঁজোয়া গাড়িকে উপর থেকে আঘাত করতে পারে। উপরের অংশেই বর্ম থাকে সবথেকে পাতলা। সেইসঙ্গে, এটি প্রাচীর বা দুর্গের মতো কাছাকাছি এলাকায় থাকা লক্ষ্যবস্তুতে এবং হেলিকপ্টারের মতো কম উচ্চতায় উড়ন্ত যানে আঘাত করার জন্যও ব্যবহার করা যায়।
বর্তমানে, ট্যাঙ্ক বা সাঁজোয়া গাড়িগুলিতে উন্নত বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়াশীল আর্মার বা ইআরএ ব্যবহার করা হয়। ইআরএ বড় মাপের বিস্ফোরণের ক্ষতি সহ্য করতে পারে এবং কোনও ক্ষেপণাস্ত্রকে ট্যাঙ্কের মধ্যে প্রবেশ করা থেকে প্রতিরোধ করতে এগুলি ব্যবহার করা হয়। জ্যাভলিন মিসাইল এই বিশেষ বর্মগুলিকেও ভেদ করতে সক্ষম।
এর জন্য জ্যাভলিনের ওয়ারহেডটি তৈরি করা হয়েছে ডুয়াল চার্জ নকশায়। জ্যাভলিন ওয়ারহেডের প্রথম বিস্ফোরণ যেকোনও ইআরএ'কে ধ্বংস করে। এরপর, দ্বিতীয় আর একটি বড় মাপের বিস্ফোরণ ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ট্যাঙ্ক বা সাঁজোয়া গাড়ির অভ্যন্তরীণ ক্ষতি করে থাকে।
জ্যাভলিন মিসইলটি সফট লঞ্চ বিন্যাসে তৈরি। ফলে, প্রাথমিক উৎক্ষেপণ রকেটটিকে শ্যুটারের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং শুধুমাত্র এরপরই মূল রকেট মোটরগুলি জ্বলে ওঠে। এই ব্যবস্থার ফলে শ্যুটারের ব্যাকব্লাস্ট বা ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার সময় তার পিছন থেকে গরম গ্যাস বের হয়, তার থেকে আঘাতের ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে।
মিসাইলটি দৈর্ঘ্যে ১.১ মিটার এবং এর ক্যালিবার ১২৭ মিলিমিটারের। ওয়ারহেডটির ওজন ৮.৪ কেজি। সাধারণত দুই-ব্যক্তি মিলে এটি পরিচালনা করতে হয়। এর পাল্লা ২.৫ কিমি থেকে ৪.৭৫ কিমির মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, এছাড়া কাতার, ফ্রান্স, জর্ডন, আয়ারল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো বিভিন্ন দেশ এই অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল ব্যবহার করে। আফগান যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে জ্যাভলিন মিসাইল ব্যাপকভাবে ব্যববার করা হয়েছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীকেও এই ক্ষেপণাস্ত্র কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত, জ্যাভলিনের আঘাতে ইউক্রেনীয় সেনারা ৫০০-র বেশি রুশ ট্যাঙ্ক এবং ১,৫০০-এর বেশি রুশ সাঁজোয়া গাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে বলে, জানিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। তাই এই জ্যাভলিনই হয়ে উঠেছে ইউক্রেনিয় প্রতিরোধের প্রতীক। 'সেন্ট জ্যাভলিন' নাম দিয়ে এই মিসাইলকে অ্য়াঞ্জেলের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এমনকী সেই ছবি দিয়ে তৈরি হচ্ছে টি-শার্টও।
ইউক্রেনীয় বাহিনী অবশ্য জ্যাভলিন ছাড়াও অন্যান্য ট্যাঙ্ক-বিরোধী অস্ত্রও পেয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তার মতে, বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ থেকে ইউক্রেন ১৭,০০০-এরও বেশি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র পেয়েছে। এর মধ্যে জ্যাভলিন ছাড়াও রয়েছে ব্রিটিশদের তৈরি এনএলএডব্লু (NLAW), সুইডেনের তৈরি এটি৪ (AT4) এবং কার্ল-গুস্তাভ (Carl-Gustav), জার্মানির তৈরি প্যানজারফাউস্ট (Panzerfausts) এবং স্পেনে তৈরি ইন্সটালাজা সি৯০ (Instalaza C90)।