আজকের ধবধবে সাদা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এক সময় ছিল কালো কুচকুচে
- FB
- TW
- Linkdin
যাঁরা কলকাতার (Kolkata) বাইরে থাকেন, তাঁরা কলকাতায় বেড়াতে এলে আর কোথাও না গেলেও ভিক্টোরিয়া (Victoria Memorial) দেখতে যাবেনই। আর সেখানে গিয়ে ছবি তোলা এই প্রযুক্তির যুগে সেটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। শীতকালে শহর কলকাতায় ঘুরতে যাওয়া মানে ভিক্টোরিয়ায় যাওয়া ভুলবেন না অনেকেই। এমনকী, বহু কলকাতাবাসীও মাঝে মধ্যেই নস্টালজিয়ায় ভাসতে শীতের আমেজ গায়ে মেখে সেখানে ঘুরে আসেন।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের (Victoria Memorial) সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস (History)। তবে শুধুমাত্র ইতিহাসই নয়। আধুনিক যুগের অনেক যুগলের প্রেমেরও সাক্ষী থেকে এই সৌধ। এই সৌধকে বেষ্টিত করে রাখা বাগানে নিজের মনের মানুষকে নিয়ে গিয়ে সময় কাটান অনেকেই। কলকাতার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই ধবধবে সাদা সৌধ। কিন্তু, একটা সময় ছিল তখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের রং ছিল কালো (Victoria Memorial was painted black)।
সে অবশ্য অনেক বছর আগের কথা। তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তখন চলছে পুরোদমে। ১৯০১ সালের জানুয়ারিতে প্রয়াত হন সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়া। রানির স্মৃতি রক্ষার্থে ইংরেজ সরকার ঠিক করল ভারতের বিভিন্ন শহরে ছোট ছোট ভিক্টোরিয়া মেমেরিয়াল তৈরি করা হবে। কিন্তু, তা মেনে নেননি তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল লর্ড কার্জন (George Curzon)। আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি।
আসলে তখন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল কলকাতা। আর সেখানেই কিনা রানির সৌধ তৈরি করা হবে ছোট করে! এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে রানি স্মৃতিতে এখন সৌধ তৈরি করা হোক যা গোটা পৃথিবীর মানুষকে তাক লাগিয়ে দেবে। আবার মুঘল স্থাপত্য তাজমহলকেও টেক্কা দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁক।
লর্ড কার্জন নির্দেশ দিয়েছিলেন মেমোরিয়ালের নকশা হবে ধ্রুপদী বা রেনেসাঁ স্থাপত্য শৈলীর অনুসারে। আর পুরোটাই তৈরি করা হবে মার্বেল পাথর দিয়ে। তবে যে সে মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করলে হবে না। মার্বেল নিয়ে আসতে হবে মাকরানা থেকে। আসলে তাজমহল তৈরি করার সময় মার্বেল পাছর আনা হয়েছিল মাকরানা থেকেই। তাই ভিক্টোরিয়ার জন্যও সেখান থেকেই মার্বেল নিয়ে আসার নির্দেশ দেন লর্ড কার্জন।
ভিক্টোরিয়া তৈরি হতে সময় লেগেছিল ১৬ বছর। এই সৌধ তৈরি করার জন্য খরচ হয়েছিল বিপুল পরিমাণ টাকা। আর সেই টাকা জোগার করা হয়েছিল বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। অবশেষে ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকার খরচ করে তৈরি করা হয়েছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ১৯২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেই সৌধ সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। সে সময়ে কলকাতা ছিল ব্রিটিশ এবং আমেরিকার সেনাদের বড় ঘাঁটি। তারই মধ্যে ১৯৪২-৪৩ সালে কলকাতায় জাপানি সেনার আক্রমণ শুরু হয়। ১৯৪২ সালে বোমা পড়ে কলকাতায়। তার জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল খিদিরপুরের ডক। দিনের আলোয় ব্রিটিশ সেনারা কোনওরকমে যুদ্ধে সামাল দিতে পারত। কিন্তু, রাতের অন্ধকারে সামাল দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। আর হামলা চালানোর জন্য রাতের অন্ধকারকেই বেছে নিত জাপানি সেনারা। তাদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল শহরের বাড়ি, স্থাপত্য, রাস্তাঘাট।
এদিকে শহরের বাকি স্থাপত্যগুলিকে সামলে নেওয়া গেলেও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে কীভাবে জাপানি সেনার হাত থেকে রক্ষা করবে? তা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিল না ব্রিটিশরা। কারণ চাঁদের আলোয় ভিক্টোরিয়ার সাদা মার্বেল আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত। এরপরই ভিক্টোরিয়ার রং কালো করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৪৩ সালে জাপানি সেনার হাত থেকে সৌধকে বাঁচাতে ভিক্টোরিয়ার রঙ কালো করে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে শহরের বাকি স্থাপত্যগুলিকে সামলে নেওয়া গেলেও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে কীভাবে জাপানি সেনার হাত থেকে রক্ষা করবে? তা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিল না ব্রিটিশরা। কারণ চাঁদের আলোয় ভিক্টোরিয়ার সাদা মার্বেল আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত। এরপরই ভিক্টোরিয়ার রং কালো করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৪৩ সালে জাপানি সেনার হাত থেকে সৌধকে বাঁচাতে ভিক্টোরিয়ার রঙ কালো করে দেওয়া হয়েছিল। (ছবি সৌজন্য- ব্লগস্পট)
তবে এই কথা কোনওভাবে জাপানি সেনার কানে পৌঁছাক তা চায়নি ব্রিটিশরা। সেই কারণে কালো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কোনও ছবিও তুলতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু, তারপরও কালো রঙের ভিক্টোরিয়ার ছবি থেকে গিয়েছিল। আর ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তা সামনে এসেছে। পুরনো কলকাতার ছবিগুলির মধ্যে জ্বলজ্বল করছে কালো ভিক্টোরিয়ার ছবিও!