- Home
- West Bengal
- Kolkata
- নায়িকা হিসাবে ১টা-২টো ছবি, তাতেই পার্থ-র সঙ্গে 'দোস্তি', ২০ কোটির মালকিন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে চিনে নিন
নায়িকা হিসাবে ১টা-২টো ছবি, তাতেই পার্থ-র সঙ্গে 'দোস্তি', ২০ কোটির মালকিন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে চিনে নিন
- FB
- TW
- Linkdin
টলিউডের কান পেতে যে খবরটা পাওয়া গিয়েছে তাতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বাংলা চলচ্চিত্র জগতে খুব একটা পরিচিত নাম নন। যদিও, গত কয়েক বছরে বাংলা ছবির জগত তাঁকে চিনেছে প্রভাবশালী মহলে তাঁর উঠাবসার জন্য। বিভিন্ন ভিভিআইপি পার্টিতে অর্পিতাকে আকছার দেখা যেত বলেও জানা গিয়েছে। কিন্তু, সেই সব পার্টিতে হাজির হতে গেলে একটু প্রভাবশালী হতে হয়। অর্পিতার তেমন কোনও পরিচয় না থেকেও অনায়াসে এই সব পার্টিতে ঢুকে যেতে পারতেন বলে সূত্রের খবর।
২০১৭ সালে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় একটি তামিল ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সেই ছবির নাম ছিল চিন্নামা লাভ। এছাড়াও কিছু ওড়িয়া এবং বাংলা ছবিতেও সহশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অর্পিতা। কাজ করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত মামা-ভাগ্নে ছবি-তে সহ-শিল্পী হিসাবে। জিৎ-স্বস্তিকা অভিনীত পার্টনার ছবিতেও সহশিল্পীপ ভূমিকায় ছিলেন অর্পিতা।
জোর যার মুলুক তার নামে একটি ছবিতেও অর্পিতাকে দেখা গিয়েছে। ওড়িয়া ছবি প্রেম রোগী এবং তোরা মোরা জোড়ি সুন্দরা-য় নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। এর বাইরে কিছু ছোট-খাটো মডেলিং অ্যাসাইমেন্টে মাঝে মাঝে কাজ করেছিলেন অর্পিতা। তবে বর্তমানে তাঁর হাতে আদৌ কাজ ছিল কি না তা কেউ জানে না। বলতে গেলে টলিউডে ছোট বা বড় পর্দার আঙিনায় কান পাতলেও অর্পিতাকে সেভাবে কেউ চিহ্নিত করতে পারেননি।
সূত্রের খবর দক্ষিণী অভিনেত্রী বলে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় কলকাতা শহরের প্রভাবশালী মহলে একটা পরিচয় তৈরি করেছিলেন। আর এই পরিচয় ভাঙিয়ে তিনি একটা সময় বহু দুর্গাপুজোর উদ্বোধনেও ভিভিআইপি অতিথি-র তালিকায় থাকতেন। দক্ষিণ কলকাতা থেকে মধ্য কলকাতা এবং লেকটাউন সংলগ্ন বিশাল পূজোতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে সম্বর্ধনা পেতে এবং পুজোর উদ্বোধনে অতিথি হিসাবে।
পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়, সুজিত বসু-দের সঙ্গে একটি পূজোর উদ্বোধনেও অর্পিতাকে দেখা গিয়েছে উদ্বোধন করতে। আবার জাভেদ খানের সঙ্গে একটি পুজো মণ্ডপে দেখা গিয়েছে অর্পিতাকে। বিলাস বহুল জীবনে প্রবলভাবে অভ্যস্ত ছিল অর্পিতা। এর জন্য অর্থ কোথায় থেকে আসত তার কোনও উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। ইডি-র সন্দেহ আরও বেড়েছে অতিমারির সময়ে অর্পিতা এত বিলাস বহুল জীবনকে চালিয়ে যাওয়া নিয়ে।
অর্পিতা-র আসল বাড়ি কোথায় তা নিয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। কারণ, ডায়মন্ড সিটির হরিদেবপুরের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন অর্পিতা। ডায়মন্ড সিটি মূলত বিত্তশালীদের থাকার জায়গা। এখানে যে মূল্যে ফ্ল্যাট শুরুতেই বিকিয়েছিল তাতে অর্পিতার মতো প্রায় বেকার থাকা অভিনেত্রীর পক্ষে কীভাবে সম্ভব হয়েছিল তাও ইডি-র এখন প্রশ্ন তালিকায়।
বিশ্বস্ত সূত্রে আরও খবর যে ২০১৯ সালের পর থেকে একাধিক অনুষ্ঠানেও পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে নাকি অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়কে দেখা গিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারেও পার্থ-র পাশে অর্পিতাকে প্রায় সারাক্ষণই দেখা গিয়েছিল। এমনকী ডায়মন্ড সিটি-তে অর্পিতার ফ্ল্যাটেও একাধিকবার পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে দেখা গিয়েছে বলেও সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পাওয়া গিয়েছে।
ডায়মন্ড সিটি সাউথ-এর কিছু বাসিন্দাদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে যে এখানে অর্পিতা-কে চারটে ফ্ল্যাটে আনাগোনা করতে দেখা যেত। ডায়মন্ড সিটির ফার্স্ট ফ্লোরে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন খোদ অর্পিতা। বাকি তিনটে ফ্ল্যাট ফাঁকা থাকত এবং সবসময়ে তালাবন্ধ থাকত। লোকজন এলে তবেই সেই সব ফ্ল্যাট খোলা হত।
আরও খবর যে একবার নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর উদ্বোধনে গিয়েছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন এক তরুণ অভিনেতা। ওই অভিনেতাই উদয়ন সঙ্ঘের পৃষ্টপোষক পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর একাধিক স্থানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতাকে দেখা গিয়েছিল।
জানা গিয়েছে অর্পিতার বেশ কয়েকটি কুকুরও রয়েছে। জিম করতে ভালোবাসেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ সচল তিনি। প্রায়ই তাঁর নিত্য নৈমিত্তিক জীবনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন অর্পিতা। এমনকী রিল ভিডিও বানান তিনি।
জানা গিয়েছে অর্পিতা-র ফ্ল্যাট থেকে ২০ কোটি টাকা উদ্ধারের পরই ইডি নড়েচড়ে বসে। এবং অর্পিতাকে তাঁর ফ্ল্যাটেই জেরা করে ইডি। এই ফ্ল্যাট কেনার অর্থ কোথায় থেকে এল তা নিয়ে দফায় দফায় ইডি জেরা করেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যে অর্থ তচ্ছরূপের কথা সামনে এসে পড়েছে তার সঙ্গে অর্পিতার ফ্ল্যাটের উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকার যোগ রয়েছে।
অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ২০টি মোবাইল ফোনও উদ্ধার হয়েছে। এত মোবাইল ফোন কেন, কাদের সঙ্গে কথা হত অর্পিতা-র! যে এত সংখ্যক মোবাইলকে একসঙ্গে সচল রাখতে হয়েছিল। গোটা বিষয়েই অনেক অসঙ্গতি পেয়েছে ইডি। সূত্রে খবর যে ইডি মনে করছে যে আর্থিক তচ্ছরূপের সন্ধান তাঁরা করছিলেন তার মুখের অন্তত সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
জানা গিয়েছে ইডি যখন অর্পিতার ফ্ল্যাটে ঢোকে তখন একটি ঘর এক্কেবারে তালাবন্ধ ছিল। এতেই সন্দেহ বৃদ্ধি পায়। অর্পিতাকে জোর করেই ওই ঘরের তালা খোলানো হয়েছিল।
জানা গিয়েছে বন্ধ ঘরের তালা খোলার পর ভিতরে যায় ইডি। ঘরের এদিক সেদিক খুঁজতে খুঁজতেই একটি ওয়াডড্রোবে নজর যায়। সেটিও তালাবন্ধ ছিল। অর্পিতা প্রথমে এই ওয়াডড্রোবটি খুলতে আপত্তি করছিল। একপ্রকার জোর করেই তাঁকে দিয়ে ওয়াড ড্রোব খোলা হয়। আর সেখানেই মেলে ২ বস্তা বন্দি টাকা।
দুই বস্তা বন্দি টাকাকে বাইরে আনা হয়। মেঝেতে ফেলতেই চক্ষু চড়কগাছ। ২০০০ ও ৫০০ টাকার বান্ডিলে ভর্তি। কীভাবে এই অর্থ এল এতে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে থাকেন অর্পিতা। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো ইডি উদ্ধার করে বেশকিছু বিদেশী মুদ্রা এবং গয়নাও। অর্পিতা অবশ্য তখনও নিজেকে ইনোসেন্ট প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।