- Home
- Lifestyle
- Lifestyle Tips
- হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম এক উৎসব, পুরীর রথযাত্রার মিলেমিশে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম এক উৎসব, পুরীর রথযাত্রার মিলেমিশে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস
রথযাত্রা বা রথদ্বিতীয়া আষাঢ় মাসে আয়োজিত হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এক উৎসব। ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসব বিশেষ উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে এই উৎসব আয়োজিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ভারতের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ রথযাত্রা ওড়িশার পুরীতে জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা। পুরীর রথযাত্রার মিলেমিশে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। সে ইতিহাসে আছে লোকগাথা আর পুরাণের বর্নিত কাহিনি। সেই সঙ্গে রয়েছে ধর্মীয় ভাবাবেগ ও তার রীতি নিতির বর্ণনা।
- FB
- TW
- Linkdin
পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে, মালবরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত৷ কৃষ্ণ তার ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তার মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তিনির্মাণের জন্য রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন।
তখন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ শিল্পী তার সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন চেয়ে নেন। সেই কাষ্ঠশিল্পী রাজাকে জানিয়ে দেন মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন দরজা না খোলে। দরজা বন্ধ করে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণের কাজ।
রাজা ও রানি সহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন তারা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং শুনতে পেতেন ভিতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। ৬-৭ দিন বাদে যখন রাজা বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এমন সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। রানি কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত।
পুরাণ মতে মনে করা হয় এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। মূর্তির আদল তৈরি হলেও তখনও হাত-পা নির্মিত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধা দানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তার সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ।
রথযাত্রার দিন পুরীর জগন্নাথ মন্দির সহ দেশের সকল জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শন চক্র মূর্তি মন্দির বাহিরে সর্বসমক্ষে বাইরে আনা হয়। তারপর তিনটি সুসজ্জিত রথে বসিয়ে দেবতাদের পুজো করে রথ টানা হয়। পুরীতে রথ টানতে প্রতি বছর লক্ষাধিক পূণ্যার্থীর সমাগম হয়।
এখানে তিন দেবতাকে গুণ্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। পুরীতে বছরে এই একদিনই অহিন্দু ও বিদেশীদের মন্দির চত্বরে এসে দেবদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। পুরীতে যে রথগুলি নির্মিত হয় তাদের উচ্চতা ৪৫ ফুট। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলে এই রথযাত্রা সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
পুরীর জগন্নাথ মন্দির ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ মন্দির। জগন্নাথ-আরাধনার ইতিবৃত্ত এতই প্রাচীন যে এর কোনও ঐতিহাসিক দিন বা সময় পাওয়া সম্ভব নয়। জগন্নাথ মন্দিরে হিন্দু ছাড়া প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কলিঙ্গ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরটি শ্রীমন্দির নামে সমধিক পরিচিত।
গর্ভগৃহের মাথায় রয়েছে একটি সুউচ্চ শিখর বা চূড়া। প্রদীপ উৎসর্গের জন্য রয়েছে ফসিল হয়ে যাওয়া কাঠের একটি স্তম্ভ। মন্দিরের প্রধান দ্বার সিংহদ্বারের রক্ষক দেবতা জয় ও বিজয়। মূল প্রবেশপথের সামনে রয়েছে অরুণস্তম্ভ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। খুরদার রাজা কোনার্কের সূর্যমন্দির থেকে এটি নিয়ে আসেন।
এই উৎসব বর্তমানে দেশের বাইরেও সমানভাবে জনপ্রিয়। ১৯৬৮ সাল থেকে ইসকন হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন শহরে রথযাত্রা শুরু হয়। লন্ডন, মন্ট্রিঅল, প্যারিস, বার্মিংহাম, নিউ ইয়র্ক সিটি, টরোন্টো, সিঙ্গাপুর, সিডনি, পার্থ, ভেনিস প্রভৃতি শহরে রথযাত্রা উৎসবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করছে।