- Home
- World News
- Pakistan News
- পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা চাইছে অধিকৃত কাশ্মীর, জানুন এখানকার ইতিহাস ও অজানা কিছু তথ্য
পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা চাইছে অধিকৃত কাশ্মীর, জানুন এখানকার ইতিহাস ও অজানা কিছু তথ্য
- FB
- TW
- Linkdin
ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং আকসাই চিন। বরাবরই স্পষ্ট এই দাবি করেছে নয়াদিল্লি। কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাত সেই ১৯৪৭ থেকেই। সেই বছরের অক্টোবর মাস থেকেই কাশ্মীর নিয়ে সংঘাতের সূত্রপাত।
অধিকৃত কাশ্মীরকে প্রশাসনিত স্তরে দু'ভাগে ভাগ করেছে পাকিস্তান। ১) আজাদ কাশ্মীর এবং ২) গিলগিট-বাল্টিস্তান। এরমধ্যে ২০১৮ সালে অধিকৃত গিলগিট ও বাল্টিস্তান প্রদেশে প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তন করে পাকিস্তান । যার বিরোধিতা করেছে নয়াদিল্লি। ভারতের দাবি, বেআইনি ভাবে গিলগিট-বাল্টিস্তান জবরদখল করে রেখেছে পাকিস্তান। বহু দশক ধরে ওখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে পাকিস্তান। অবিলম্বে ওই এলাকা খালি করা উচিত পাকিস্তানের।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নিজস্ব প্রেসিডেন্ট রয়েছে। মন্ত্রিগোষ্ঠীর সমর্থিত চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার প্রদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম মাসুদ খান। সিইও তথা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন পিএমএল-এন দলের রাজা ফারুখ হায়দার। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নিজস্ব বিধানসভা রয়েছে। স্বশাসিত বিধানসভা থাকলেও পাকিস্তান সরকারই তা নিয়ন্ত্রণ করে। পাকিস্তানের সেন্ট্রাল বোর্ড নয়, বরং আজাদ জম্মু-কাশ্মীর কাউন্সিলই প্রদেশের বাজেট ও রাজস্ব সম্পর্কিত বিষয় দেখভাল করে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হলেন আজম খান।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদ। ১০ জেলা নিয়ে গঠিত আজাদ কাশ্মীর। রয়েছে ৩৩ তেহশিল এবং ১৮২টি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাউন্সিল। ১৩,৩০০ স্কোয়ার কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত পাক অধিকৃত কাশ্মীর। এর মোট জনসংখ্যা ৫২ লাখ। ভারতীয় কাশ্মীরের পূর্ব অংশ, পাকিস্তানের পঞ্জাব, আফগানিস্তানের ওয়াখান কোরিডর এবং চিনের শিনজিয়াং অঞ্চলের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে পাক অধিকৃত কাশ্মীর।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষের মূল জীবিকা কৃষি। গম, ভুট্টা, পশুপালন ছাড়াও পাহাড়ি এই এলাকায় মাশরুম, মধু, আপেল, চেরি'র মতো কৃষিজাত পণ্য বহুল পরিমাণে উৎপাদিত হয়। এছাড়াও বেশ কিছু বনৌষধি এবং কাঠের মতো শিল্পজাত পণ্য উৎপাদিত হয় এখানে।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঊর্দু, কাশ্মীরি, পঞ্জাবি ও পুশতু ভাষায় কথা বলা হয়। তবে এই এলাকায় স্কুল-কলেজ সেভাবে নেই। আজাদ কাশ্মীরের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এলাকায় সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশের কম।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুটবল, ক্রিকেট এবং ভলিবল। ছোট ছোট টুর্নামেন্টের আয়োজনও করা হয়। পাকিস্তানের টি টোয়েন্টি লিগে কাশ্মীর দলের অন্তর্ভুক্তিও হতে চলেছে। সেই দলের নেতৃত্ব দিতে চেয়েছেন পাক ক্রিকেটার শাহিদ আফ্রিদি। মুজাফ্ফরাবাদে ৮ হাজার মানুষের জন্য স্টেডিয়ামও রয়েছে। এছাড়াও মোট ৪টি ফুটবল ক্লাব রয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে।
তবুও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আলোচনায় বারবারই উঠে আসে জঙ্গি হানার প্রসঙ্গ। জঙ্গি লঞ্চ প্যাড ও তা থেকে ভারতীয় ভূখণ্ড বরাবর জঙ্গি অনুপ্রবেশের জন্য বহুবার অভিযুক্ত হয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর। গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে জানা যায় ভারক ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা খারিজ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার পর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফফরাবাদের প্রেস ক্লাবের সামনে মিছিল করে হিজবুল মুজাহিদিনের খালিদ সইফুল্লা এবং নইব আমীরের মতো সন্ত্রাসী নেতারা। সেখানে সরাসরি জিহাদের ডাক দেওয়া হয়।
তবে সিন্ধি, বালোচ, পাশতুন, গিলগিট বাল্টিস্তানের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী কয়েক বছর ধরেই ইসলামাবাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে। গিলগিট বাল্টিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গত কয়েক বছর ধরে এমনিতেই চিনকে বিক্রি করে আসছে পাকিস্তান। এবার সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চিনকে গিলগিট বাল্টিস্তানে খনন সত্ত্ব দিয়েছে ইসলামাবাদ। শুধু তাই নয়, এই সত্ত্ব দিতে গিয়ে ইসলামাবাদ নিজেদের সংবিধানের তোয়াক্কাও করেনি।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ইমরান খান প্রশাসনের অধিকার আরও দৃঢ় করতে সাংবিধানিক বদল আনতে চলেছে ইসলামাবাদ। জানা গিয়েছে দুই বছর আগে নওয়াজ শরিফের দল যে কাউন্সিল অবুলুপ্ত করে দিয়েছিল সেই কাউন্সিল ফের ফিরিয়ে আনতে চলেছে ইমরান খান প্রশাসন।
প্রতি দিন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। তাঁরা ইমরান সরাকরের হাত থেকে মুক্তি চাইছেন।
এদিকে গিলগিট-বাল্টিস্তানে বাঁধ নির্মান করতে চলেছে চিন। কিন্তু চিনের দাদাগিরি মেনে নিতে নারাজ পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ। চিনের জোর করে বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতিবাদে নেমেছে পিওকে। নীলম-ঝিলম নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করছে চিন। মুজজফরাবাদের বাসিন্দাদের অভিযোগ এই বাঁধ তৈরি হয়ে গেলে পানীয় জলও পাওয়া যাবে না। এই বাঁধনির্মাণের সঙ্গে যুক্ত আরও দুটি প্রজেক্ট। এক কোহালা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও দ্বিতীয়টি হল নীলম ঝিলম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। দীর্ঘদিন ধরেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দারা এই প্রকল্পগুলির বিরদ্ধে সরব।