- Home
- World News
- Pakistan News
- পাকিস্তানে নিষিদ্ধ একের পর এক চিনা অ্যাপ, লাস্ট ওয়ার্নিং পেল টিকটক - এটাও কি আরেক ছলনা
পাকিস্তানে নিষিদ্ধ একের পর এক চিনা অ্যাপ, লাস্ট ওয়ার্নিং পেল টিকটক - এটাও কি আরেক ছলনা
অভূতপূর্ব। চিনের সবসময়ের বন্ধু হিসাবে পরিচিত পাকিস্তানেই নাকি নিষিদ্ধ হল চিনা অ্যাপ! ভারতে দিন কয়েক আগেই একসঙ্গে ৫৯টি চিনা অ্যাপকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তারপর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একাধিক চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। কিন্তু তাই বলে পাকিস্তান? তাদের অর্থনীতির অর্ধেকের বেশির নিয়ন্ত্রণ এখন বেজিং-এর হাতে। তারা করল চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ! ইসলামাবাদের হল টা কী?
- FB
- TW
- Linkdin
মঙ্গলবার পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিন অপরাধ প্রতিরোধ আইনের আওতায় লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ বিগো-কে নিষিদ্ধ করল। সেইসঙ্গে চিনা ভিডিও-শেয়ারিং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ টিকটক-কে পাঠিয়েছে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা। অশ্লীলতা এবং অনৈতিকতা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের অবিলম্বে একটি বিস্তৃত ব্যবস্থা স্থাপনের নির্দেষ দেওয়া হয়েছে। নাহলে, পড়তে হবে নিষেধের তালিকায়। বিগোর আগে জনপ্রিয় চিনা গেম অ্যাপ পিইউবিজি-ও নিষিদ্ধ করেছিল ইসলামাবাদ।
পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ বলেছে, টিকটক এবং বিগো-র মতো সোশ্য়াল মিডিয়াগুলিতে অনৈতিক, অশ্লীল ও অশালীন বিষয়বস্তু প্রদর্শন নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। পাক কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছে এই সব বিষয়বস্তুর চূড়ান্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সমাজে, বিশেষত যুব সমাজে। ১ জুলাই পিইউবিজি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, গেমটি নেশার মতো এবং খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক, এই কারণ দেখিয়ে।
পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ খুবই বিস্ময়কর। গত কয়েক মাসে বাণিজ্যিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু, প্রত্যাশিতভাবেই পাকিস্তান চিনের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেনি। তারা বরাবরের চিনের বন্ধু হিসাবেই পরিচিত। দুই দেশ যৌথ অর্থনৈতিক করিডোর-ও তৈরি করেছে। ভারতের মতো পাকিস্তানেও নিষিদ্ধ হওয়া মানে চিনা অ্যাপগুলির বিপুল ক্ষতি। আর এই অ্যাপগুলি চিনা অর্থনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে।
তাহলে কেন এমন পদক্ষেপ নিল পাকিস্তান? অনেক কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এটা পাকিস্তানের আরেকটা ছলনা হতে পারে। যেমন কৌশল তারা জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রেও করে থাকে। তবে ঘরে-বাইরে চিন নিয়ে যেভাবে ইমরান খান সরকারে উপর চাপ বাড়ছে তাতে এই ধরণের পদক্ষেপ ছাড়া তাদের কোনও উপায়ও নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
পূর্ব লাদাখে ভারত-চিন সীমান্ত উত্তেজনা বাড়ার পরপরই পাক বিদেশ দপ্তর থেকে পাক সরকারকে চিনের সঙ্গে মাখামাখির বড় খেসারত দিতে হতে পারে বলে সাবধান করেছিল। তারা উল্লেখ করেছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলিতে পাক এয়ারলাইন্সের বিমান অবতরণে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা। এইভাবে চিনের বন্ধুত্বের কারণে সারা বিশ্বে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পদক্ষেপে একঘরে হয়ে যাহবে ইসলামাবাদ, এমনটাই বলেছিল বিদেশ দপ্তর।
একই সঙ্গে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যেও চিন নিয়ে ক্ষোভ ক্রমে বাড়ছে। ইসলামের উপর চিনা আগ্রাসনের আঁচ পাচ্ছেন সেখানকার আলেমরা। অনেকেই এই নিয়ে মুখও খুলতে শুরু করেছেন। চিনা সংস্থাগুলিতে কাজ করলে নামাজ পড়ায় বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের অধীনে থাকা প্রকল্পগুলিতে পাকিস্তানিদের থেকে চিনা নাগরিকরাই বেশি কাজ পাচ্ছেন, এমন অভিযোগও রয়েছে। বিগো, টিকটকের মাধ্যমেন অনৈতিকতা ও অশ্লীলতা প্রদর্শনের অভিযোগও বেশিরভাগটাই এসেছে চরমপন্থীদের দিক থেকে। একদিকে চিনের সহায়তা ছাড়া পাকিস্তানের অর্থনীতি চলবে না, আর একদিকে এই চরমপন্থীদের সহায়তাতেই ক্ষমতা এসেছেন ইমরান।
এই অবস্থায় দু-একটি চিনা অ্যাপ ব্য়ান, অনেকটাই সন্ত্রাসবাদ দমনে নামে গুটি কয়েক জঙ্গি নেতাকে সাময়িকভাবে নজরবন্দী করার মতো পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। দু-একটি অ্যাপ ব্য়ান করায় চিনের তেমন কোনও ক্ষতি হবে না, আর অ্যাপগুলির পাকিস্তানে ফিরে আসারও সুযোগ রয়েছে। আর অন্যদিকে এই পদক্ষেপে আপাতত চরমপন্থীদের মুখ বন্ধ রাখা যাবে।