ইমারানের ওপর বেজায় ক্ষেপেছে সৌদি, তেল তো দূর এবার ঋণও পাবে না পাকিস্তান
কাশ্মীর নিয়ে কেন গলা চড়াচ্ছে না অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি)। তাই ওআইসি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ইমরান খান সরকার। তার প্রেক্ষিতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবার কড়া পদক্ষেপ করল সৌদি আরব। তেল তো দূরের কথা এবার পাকিস্তানকে ঋণও দেওয়া হবে না, জানিয়ে দিল সৌদি আরব।
- FB
- TW
- Linkdin
অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের কাছ থেকে ২০১৮ সালে ৬.২ লক্ষ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল পাকিস্তান। ঋণের শর্তে বলা হয়েছিল, কোনও বছর সৌদি আরবের যদি ঋণ দিতে দেরি হয়, তা হলে তারা ইসলামাবাদকে ৩.২ লক্ষ কোটি ডলার মূল্যের তেল সরবরাহ করবে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওই ঋণ-বিলম্বে তেল প্রদানের শর্ত মাস দুয়েক আগেই শেষ হয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদন এবং রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব এখনো পাকিস্তানের সাথে তেল সরবরাহ চুক্তি নবায়ন করেনি। এই চুক্তির আওতায় সৌদি আরব পাকিস্তানকে বাকিতে তেল সরবরাহ করতো। চুক্তিটির মেয়াদ দুই মাস আগে শেষ হওয়ার পরে দেশটি পাকিস্তানকে আর তেল সরবরাহের অনুমতি দেয়নি।
পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশের মতে, রিয়াধের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির একটি মন্তব্য। সম্প্রতি পাক বিদেশমন্ত্রী একটি টেলিভিশন চ্যানেলে বলেছিলেন, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ওআইসি যদি কাশ্মীর নিয়ে বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক না-ডাকে তা হলে পাকিস্তান পদক্ষেপ করবে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইসলামিক দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকবেন কাশ্মীর নিয়ে।
ইসলামিক দেশগুলির সবচেয়ে বড় সংগঠন ওআইসি। গত কয়েক বছর ধরে কাশ্মীর নিয়ে বৈঠক ডাকার জন্য ওআইসি-র উপর চাপ বাড়াচ্ছে ইসলামাবাদ। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। গত বছরের আগস্টে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হয় পাকিস্তান। ওআইসি-তেও ভারতের বিরুদ্ধে সমর্থন আদায়ে মরিয়া চেষ্টা চালায় ইসলামাবাদ। কিন্তু ইতিবাচক ফল মেলেনি।
মে মাস থেকে পাকিস্তান সৌদি আরব থেকে কাঁচা তেল পাচ্ছে না। এর সাথে সাথে সরবরাহকারীর তরফ থেকে ধারে তেল দেওয়া জারি রাখা নিয়ে পাকিস্তানকে এখনো কিছু বলা হয় নি। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানকে এখন বাকিতে তেল দেওয়া আর ঋণ দেওয়া দুটোই বন্ধ করে দিচ্ছে সৌদি আরব।
সৌদি আরবের থেকে ৩.২ বিলিয়ন ডলারের কাঁচা তেলের সুবিধা এই প্যাকেজেরই অংশ ছিল। পাকিস্তান সৌদি আরবকে এই চুক্তিকে বাড়ানোর আবেদন করে, কিন্তু সেই নিয়ে সৌদি আরবের তরফ থেকে জবাব পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম বিভাগের মুখপাত্র সাজিদ কাজি বলেন, এই চুক্তি মে মাসেই শেষ হয়ে গেছে। অর্থ বিভাগ এই চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। উনি বলেন, পাকিস্তান সৌদি আরবের সরকারের কাছ থেকে এই চুক্তি নিয়ে জবাবের অপেক্ষা করছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অনুদান বিগত পাঁচ মাস ধরে স্থগিত আছে, আর এর মধ্যে পাকিস্তান আর সৌদি আরবের মধ্যে চলা চুক্তি স্থগিত হওয়ার ফলে দুই দিক থেকে চরম সমস্যার সন্মুখীন ইমরানের দেশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, তুরস্কের সঙ্গে পাকিস্তানের সখ্যের কারণে ইসলামাবাদ থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছে রিয়াধ। কারণ, ওআইসির প্রধানের পদ থেকে সৌদি আরবকে সরিয়ে ইসলামিক দেশগুলির এই সংগঠনের মাথায় বসতে চেষ্টা চালাচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এর্ডোগান। কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তানের অবস্থানকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে তুরস্ক।
এদিকে সৌদি আরবের কাছে থেকে দেড় বছর আগে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছিল পাকিস্তান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় আন্তর্জাতিক ঋণ খেলাপির দায় এড়াতে এবার চিনের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে সৌদি আরবকে দিয়েছে পাকিস্তান।
এক দেশের কাছে থেকে ঋণ নিয়ে আরেক দেশের ঋণ পরিশোধের এই তথ্য দিয়েছে পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি টাইমস। পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) তথ্য বলছে, সৌদি আরবের ঋণ শোধ করার জন্য চিনের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান।