- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- কৃষি না শিল্প - একদশক পর নির্বাচনে ফিরে এল পুরোনো প্রশ্ন, কী বলছে সিঙ্গুর
কৃষি না শিল্প - একদশক পর নির্বাচনে ফিরে এল পুরোনো প্রশ্ন, কী বলছে সিঙ্গুর
- FB
- TW
- Linkdin
নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর
এইবারের নির্বাচনে বিভিন্ন দিক থেকেই নন্দীগ্রামের সঙ্গে মিল রয়েছে সিঙ্গুরের লড়াইয়ের। ২০১১ সালে সিঙ্গুরে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বা মাস্টারমশাইয়ের জয় নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন বেচারাম মান্না। এববার তাঁরাই যুযুধান পক্ষে। নন্দীগ্রাম যেমন দেখেছিল তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে তাঁর একসময়ের নন্দীগ্রামের সেনাপতির লড়াই, তেমনই সিঙ্গুরে তৃণমূল ও বিজেপির প্রার্থী একসময়ের জমি আন্দোলনে দুই প্রধান স্থানীয় মুখ বেচারাম মান্না এবং রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। আর নন্দীগ্রামে যেমন ডার্ক হর্স হয়ে উঠেছিলেন বামেদের তরুণ মুখ মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, তেমনই এখানে লড়াইয়ে আছেন আরেক তরুণ বাম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য।
প্রতিশোধের ভোট
২০০১ থেকে ২০১৬ - টানা চারবার সিঙ্গুরে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। এবার তাঁর বদলে বেচারামকে দলনেত্রী প্রার্থী করতেই রাগের বশে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। ৮৮ বছর বয়সী মাস্টারমশাই মানতে নারাজ, তাঁকে বয়সের কারণে টিকিট দেওয়া হয়নি। দলনেত্রীর অপমানটা তিনি ভুলতে পারছেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কখনই ক্ষমা করতে পারবেন না জানিয়ে তিনি বলছেন, 'প্রতিশোধ চাই'। ঠিক যে সুর শোনা গিয়েছিল নন্দীগ্রামে অধিকারী পরিবারের সদস্যদের মুখে।
বিশ্বাসঘাতক
অন্যদিকে নন্দীগ্রামে মমতা যেমন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক, গদ্দার - আক্রমণ শানিয়েছিলেন, মাস্টারমশাইয়ের বিরুদ্ধে সেই একই পথ নিয়েছেন বেচারাম মান্না। তিনি বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেইছিলেন টিকিট না পাওয়া নেতাদের বিধান পরিষদে স্থান দেবেন। কিন্তু সেই কথা মেনে অপেক্ষা না করে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাটার্য বিজেপিতে চলে গেলেন। সকলে মিলে সিঙ্গুরের জমি রক্ষা আন্দোলনে লড়াই করেছিলাম। তিনি আন্দোলনের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
কী ঘটেছিল সিঙ্গুরে?
২০০৬ সালে বাম সরকার টাটা সংস্থার ন্যানো গাড়ি কারখানা স্থাপনের জন্য ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েচিল। প্রায় ৬,০০০ পরিবার ভয় পেয়েছিল কৃষিজমি এবং জীবন-জীবিকা হারানোর। পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও বেচারাম মান্নাকে নিয়ে ভূমিরক্ষা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তখনকার বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাড়ি কারখানার বিরুদ্ধে অনিচ্ছুক জমিদাতাদের সমর্থনে তিনি দলের নেতাদের নিয়ে সেখানে মঞ্চ গড়ে ধরনায় বসেন। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে ন্যানো কারখানা সরাতে বাধ্য হয় টাটা-রা।
বর্তমানে কী অবস্থা সিঙ্গুরে?
পরিবর্তনের পর ৯৯৭ একর জমি থেকে প্রায় ৪০০ একর কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি বিল পাস করা হয়। ২০১৬ সালে মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকজন কৃষককে জমি ফিরিয়ে দেন। তবে সকলে জমি ফেরত পাননি এবং সেখানে বিকল্প কোনও শিল্প আজও আসেনি। কারখানা এলাকার পাশের হাইওয়ে দিয়ে যেতে গেলে এখনও ন্যানো কারখানার পরিত্যক্ত কাঠামোটি দেখা যায়।
খুশি সিঙ্গুর
গ্রামবাসীদের একাংশ ইতিমধ্যেই তাঁদের জমি ফিরে পেয়েছেন। সেই জমিতে আলু এবং ধানের চাষও শুরু করেছেন। তাঁরা বলছেন, তাঁরা কৃষক। শিক্ষিত নন বলে কৃষিকাজ ছাড়া আরকিছু তাঁরা করতে পারবেন না । তাই সিঙ্গুরে কারখানা না হয়ে জমি ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং ও কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে তাঁরা খুশি। তবে এই সংখ্যাটা দিন দিন কমছে। এই মতাবলম্বীরা অধিকাংশই পৌঢ়।
অপেক্ষা উন্নয়নের
তবে সিঙ্গুরে কান পাতলে এখন আরও একটা মতও শোনা যাচ্ছে। তাঁরা চাইছেন শিল্প, চাইছেন উন্নয়ন। কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও সিঙ্গুরের নতুন প্রজন্ম কৃষিকাজ করতে চাইছেন না। এঁদের অনেকেই চান কলকাতা বা দিল্লির মতো বড় শহরে গিয়ে কাজ করতে। কিন্তু, সকলের পক্ষে বাবা-মা'কে ফেলে বড় শহরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এই প্রজন্ম চাইছে সিঙ্গুরেই আসুক শিল্প।
প্রেস্টিজ ফাইট
নন্দীগ্রামের মতো সিঙ্গুর-ও শুকনো নির্বাচন নয়, বরং প্রেস্টিজ ফাইট বলা যেতে পারে। মাস্টারমশাই-এর যেমন নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করার আছে, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও এই কেন্দ্রের প্রতীকী মূল্য রয়েছে। এক দশক পর তিনি কঠিন নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের মুখে। নন্দীগ্রাম বা সিঙ্গুরে পরাজিত হলে তা কিন্তু জমি আন্দোলন থেকে মুছে যাবে মমতার নাম। দুটি আসনের কোনওটিতেই হারতে চাইবে না শাসক দল।