- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- মহিলা ভোটেই কি বাঁচবে মমতার কুর্সি - জটিল প্রশ্নে লুকিয়ে বাংলা জয়ের চাবিকাঠি, দেখুন
মহিলা ভোটেই কি বাঁচবে মমতার কুর্সি - জটিল প্রশ্নে লুকিয়ে বাংলা জয়ের চাবিকাঠি, দেখুন
- FB
- TW
- Linkdin
গত বছর তিন দফায় অনুষ্ঠিত বিহার বিধানসভা নির্বাচনের শেষ দুই পর্যায়ের মহিলা ভোটারদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। আর এই মহিলো ভোটই শেষ পর্যন্ত অল্পের জন্য হলেও নিতিশ সরকারকে রক্ষা করেছ, এমনটাই মনে করা হয়। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরই মত, নিতিশ সরকারের চালু করা বেশ কিছু নারীকেন্দ্রিক প্রকল্পের কারণেই মহিলারা তাঁকে আশির্বাদ করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি একই সুবিধা পাবেন? পশ্চিমবঙ্গে বিগত কয়েকটি নির্বাচনের তথ্য কিন্তু বলছে রাজ্যের মহিলা ভোট তৃণমূলের পক্ষেই ছিল।
গত তিন দশক ধরেই ভারতের সবকটি রাজ্যেই নির্বাচনে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিহার উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে হালে মহিলাদের অংশগ্রহণ অনেকটা বাড়লেও, বাম শাসিত পশ্চিমবঙ্গে ১৯৮০-এর দশকেই মহিলা ভোটারদের অংশগ্রহণ ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত এক দশকে তা আরও বেড়ে ৮০ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে। বিগত তিনটি বিধানসভা নির্বাচনেই এই প্রবণতা বজায় ছিল। আর ২০১১ সালে পরিবর্তনের ভোটে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল পুরুষদের থেকেও বেশি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও এই ধারা অব্যাহত ছিল।
বিহারে নিতিশ কুমার যেমন নারী কেন্দ্রীক প্রকল্প চালু করেছেন, তেমনি বাংলাতেও মমতা মহিলাদের জন্য সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প চালু করেছেন। অনেকেই মনে করেন, এই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেন মহিলারা। তবে নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে ২০০৬ সাল থেকেই বিধানসভা নির্বাচন হোক কী লোকসভা নির্বাচনে - তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি মহিলাদের সমর্থন ক্রমাগত বেড়েছে।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অর্থাৎ পরিবর্তনের ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে মহিলাদের সমর্থন, পুরুষদের সমর্থনের শতকরা হিসাবকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে সবকটি নির্বাচনেই তৃণমূলের পক্ষে মহিলাদের সমর্থন, পুরুষদের থেকে বেশি থেকেছে। শুধু তাই নয়, পুরুষ এবং মহিলাদের সমর্থনের ব্যবধানটাও ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সব মিলিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের মোট ভোটারদের ৪৫ শতাংশের সমর্থন পেয়েছিল। আর মহিলা ভোটার আলাদা করে দেখলে, তৃণমূলের পক্ষে সমর্থন ছিল ৪৮ শতাংশ।
মহিলাদের এই সমর্থন ভিত্তিকে আকৃষ্ট করার কোনও চেষ্টা বাদ রাখে না তৃণমূল দলও। সবথেকে বড় বিষয় তাঁদের সর্বময় নেত্রীই একজন মহিলা। এবারের ভোটের স্লোগানেও বাংলার মানুষ বা বাংলা নেতা না বলে, তারা 'মেয়েকেই' শব্দবন্ধের উপর জোর দিয়েছে। নারীকেন্দ্রিক প্রকল্প চালুর কথা তো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি প্রচার সভা থেকেও মমতা আলাদা করে 'মা-বোনেদের' কথা উল্লেখ করে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করেন। জ্বালানীর দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদেও, শুধু মহিলাদের নিয়েই শিলিগুড়িতে কর্মসূচি সাজিয়েছিল তৃণমূল। জোর দেওয়া হয়েছিল রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উপরেই। আর আসন্ন নির্বাচনেও মমতা ৫০ জন মহিলা প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছেন, মোট প্রায় ১৭ শতাংশ। এর আগে অন্য কোনও রাজ্যে কোনও ক্ষমতাসীন দল এত সংখ্যক মহিলা প্রার্থী দেয়নি।
তাই জাতিগত, ভাষাগত মেরুকরণের পাশাপাশি এইবারের বঙ্গ ভোটে নারী-পুরুষ মেরুকরণও চলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় যেমন স্লোগান তুলেছেন বাংলা 'মেয়েকেই' চায়, তার পাল্টা বিজেপিও তুলে ধরছে রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিভিন্ন ঘটনা। সেইসঙ্গে, 'ছোট্ট ঘটনা' বা অন্য কিছু বলে সরকারের পক্ষে ঘটনাটিকে লঘু করে দেখানোর অপচেষ্টার কথা। তুলে ধরছে, প্রধানমন্ত্রী যে মহিলাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য 'হর ঘর জল' প্রকল্প নিয়েছে, এই রাজ্যে তা রূপায়নের কাজে গড়িমসি করছে মমতা সরকার।
মাথায় রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গের মহিলা ভোটার-এর সংখ্যা, মোট ভোটারদের প্রায় অর্ধেক, ৪৯ শতাংশ। ২০১৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল ৮২ শতাংশ। তাই, রাজনৈততিক মহলে আসন্ন নির্বাচনে জাতিগত, ভাষাগত মেরুকরণের প্রভাবের পাশাপাশি আলোচনায় উঠে আসছে আরও একটি প্রশ্ন - যে মহিলা ভোটাররা বিগত নির্বাচনগুলিতে মমতাকে বিপুল সংখ্যায় সমর্থন করেছেন এবং তা ক্রমাগত বৃদ্ধির যে প্রবণতা, তা কি এবারও বজায় থাকবে? সেই ক্ষেত্রে বিহারের এনডিএ সরকারের মতো মহিলারাই কি শেষ পর্যন্ত কুর্সি বাঁচাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, না কি কামদুনি, পার্কস্ট্রিট-এর মতো জঘন্য ঘটনার ধারাবাহিকতা তাঁদের তৃণমূল বিমুখ করবে?