- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- এখনও রয়েছে অনেক দুর্বলতা - তবু ঠিক কী কী কারণে বাংলায় ২০০ আসনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি
এখনও রয়েছে অনেক দুর্বলতা - তবু ঠিক কী কী কারণে বাংলায় ২০০ আসনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি
- FB
- TW
- Linkdin
মমতা ও তৃণমূল
বিজেপির এই ক্রমবর্ধমান আশার মূল কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। আরও ভালোভাবে বললে, তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণা। যার পুরো ফসল নিজেদের ঘরে তুলবে বলে আশা করছে বিজেপি। আর এই সরকারের বদলি হিসাবে তারা তুলে ধরেছে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের শাসন ব্যবস্থার সামঞ্জস্য, বা 'ডাবল ইঞ্জিন সরকার'-এর প্রচার।
হিন্দুত্বের আবেগ
এর সঙ্গে দেশভাগের জ্বালা সহ্য করা রাজ্যে বিজেপি তুলে ধরেছে তাদের হিন্দুত্বের অ্যাজেন্ডাকেও। জাতীয়তাবাদের সঙ্গে হিন্দুত্বকে গুলিয়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এক উগ্র পরিচয়ভিত্তিক আবেগ। তার সঙ্গে গেরুয়া শিবির মিশিয়ে দিয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা এবং বঞ্চনাকে। দুর্গা পূজার ভাসান থেকে শুরু করে এমনকী সরস্বতী পূজার উদযাপনেও মমতা সরকার মানুষের অংশগ্রহণে কীভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই আখ্যান নির্বাচনী রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, দিলীপ ঘোষ, জে পি নাড্ডারা।
হাওয়া যুদ্ধে জয়
নির্বাচন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে ভোটের হাওয়া। একটা সময়, বাম সরকারের কোনওদিন পতন হতে পার, এমনটা বাংলার কেউ ভাবতেই পারতেন না। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে পরিবর্তনের ধারণার জন্ম দিতে পেরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এইবার এই উপলব্ধির যুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে দৌড়ে এগিয়ে অবশ্যই গেরুয়া শিবির। যার ফলে বাম-কংগ্রেস সমর্থকরা বাম-কংগ্রেস জোট সরকার আসা উচিত বলেও বলতে বাধ্য হচ্ছেন, জিতবে বিজেপিই। আর তৃণমূলকে সরছে এই ধারণাটা তৈরির জন্য বিজেপি নেমে পড়েছে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া শক্তি, অর্থ সংস্থান নিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত হলে এই হাওয়া যুদ্ধে জয়ের একটা অত্ন্ত বড় ভূমিকা থাকবে।
অঙ্কের হিসাব
বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব, ভোটের অঙ্ক থেকে প্রথমেই বাদ দিচ্ছেন আনুমানিক ৩০ শতাংশ ভোট। মুসলমানরা তাদের ভোট দেবে না, এটা ধরে নিয়েই অঙ্ক কষছেন তাঁরা। কাজেই ২৯৪টি আসন থেকে ৭০ থেকে ৮০ টি আসন প্রথমেই বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ, বিজেপিকে লড়তে হবে ২৩৪ বা ২১৪ টি আসনে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি এই রাজ্যে রেকর্ড ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অঙ্কের হিসাবে ২০০ আসন পেতে গেলে, ৭০ শতাংশ ভোটের মধ্যে বিজেপিকে অবশ্যই ৬০ শতাংশ ভোট পেতেই হবে। এর মধ্যে বিজেপির একেবারে নিজস্ব কিছু ভোটার রয়েছে। কিন্তু, শুধু সেই ভোট পেলে হবে না। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে, বিজেপির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছিল বাম শিবির থেকে ১৩ শতাংশ এবং কংগ্রেস থেকে ৭ শতাংশ। আলাদা লড়ে, কংগ্রেস এবং বামদের সম্মিলিত ভোট ছিল ১১.৪ শতাংশ। এবার তাদের ভোট আরও কমে ৮ শতাংশ হবে বলে আশা করছে বিজেপি, এবং এর পুরোটাই আসবে তাদের ঘরে। জোট যদি ১০ থেকে ১২ শতাংশ ভোট পেলেও বিজেপি হেসেখেলে ১৬০ থেকে ১৮০ টি আসন জিততে পারবে। ২০০ আনের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে না পারলেও সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় ১৪৮ আসনের থেকে অনেক বেশিই থাকবে তাদের আসন সংখ্যা।
বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট
বাম-কংগ্রেস জোটে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে আইএসএফ-র যোগদান। একদিকে যেমন এই জোট তৃণমূল এবং বিজেপি - দুই দলকেই অপছন্দ এমন মানুষদের একা বিকল্প দিয়েছে, তেমনই এই বিকল্প ফ্রন্ট কিন্তু আখেরে বিজেপিরই সুবিধা করে দিতে পারে। প্রথমত, ফুরফুরা শরীফের অন্যতম পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোটে যাওয়ায় আরও বেশি করে বাম ও কংগ্রেসের ভোটার বিজেপিকে ভোট দেবেন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। হিন্দু ভোট একত্রিত করতে সুবিধা হবে গেরুয়া শিবিরে। অন্যদিকে, বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে আব্বাস সিদ্দিকীর। কাজেই, আইএসএফ প্রার্থীরা এবং আইএসএফ-এর সমর্থনে জোট প্রার্থীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে বড় সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাঁর মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক অক্ষুণ্ণ নাও থাকতে পারে।
ক্রমে কাটচ্ছে দুর্বলতা
রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির বর্তমান উত্থানের মুখ যদি হন, নরেন্দ্র মোদী, শিড়দাঁড়া অবশ্যই অমিত শাহ। বাংলায় ২০১৯ সালে বিজেপির পক্ষে ৪০.৬৪ শতাংশ মানুষ ভোট দিলেও, গেরুয়া শিবিরের মূল সমস্যা, এই রাজ্যে তাদের সংগঠন নেই বললেই চলে। স্থানীয় স্তরে রয়েছে নেতার অভাবও। কিন্তু, নির্বাচনী রাজনীতিতে পোড় খাওয়া অমিত শাহ জানেন, কীভাবে এই দুর্বলতা ঢাকতে হয়। এর আগে উত্তরপূর্বের অসম ও ত্রপুরায় তিনি তা করে দেখিয়েছেন। বাংলাতেও একইভাবে সাংগঠনিক ফাঁকফোকর ভরাট করতে গুলি বিজেপি দুটি কৌশল গ্রহণ করেছে। প্রথমে মুকুল রায় ও পরে শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূল নেতাদের তারা দলে নিয়েছে। বুথ-স্তরের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে এই নেতাদের যোগাযোগ অত্যন্ত ভালো। অন্যদিকে, অন্যান্য রাজ্যের নেতৃবৃন্দকে এনে জেলায় জেলায় তৈরি করা হয়েছে বুথ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। তাঁরাই, বঙ্গ বিজেপির দরজায় দরজায় প্রচার, বিভিন্ন কর্মসূচী আয়োজন, অস্তিত্বহীন এলাকায় স্থানীয় সংগঠক এবং নেতা তৈরির কাজ করে চলেছেন, বিগত কয়েক মাস ধরে।
উন্নয়ন
ভোটের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। সেইসঙ্গে বারবার করে ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মতো প্রকল্পগুলির কথা। তবে এইক্ষেত্রে বিজেপি নেতারা অভিযোগ করছেন, আদতে সবগুলিই কেন্দ্রীয় প্রকল্প, নাম বদলে চালাচ্ছেন মমতা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিগেড জনসভায় জানিয়েছেন, ২০২১-ও বিজেপি এলে পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা কৃষকরা পিএম কিষাণ নিধি প্রকল্পের আওতায় ১৮,০০০ টাকা করে পাবেন। বিনিয়োগে ভরে যাবে রাজ্য, তৈরি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতেও মমতার দলকে পিছনে ফেলে দিচ্ছেন তাঁরা।
মোদী-শাহ-নাড্ডা-মিঠুন
বিজেপি সাফল্যের সঙ্গে তাঁদের পক্ষে হাওয়া তৈরি করতে পেরেছে রাজ্যে। কিন্তু, এখান থেকে খেলা ধরে রাখতে হবে। একটু আলগা দিলেই হাতছাড়া হতে পারে লক্ষ্য। কিন্তু, অভাব ছিল একটি মুখের। জননেত্রী মমতার উল্টোদিকে কিন্তু, বিজেপির সেই মাপের কোনও মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী নেই। এই অবস্থায় তাদের জবাব সেই নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সম্মোহনী ক্ষমতাই শেষ লাইন পার করিয়ে দেবে, এমনটাই মনে করছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাই ভোটের মুখে যত বেশি সম্ভব এই রাজ্যে আনার চেষ্টা চলছে প্রধানমন্ত্রীকে। আর তাঁর দোসর হতে চলেছেন অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডা। আর এদের পাশাপাশি জনগণকে টানতে আরও একটি মুখকে বাংলায় নিয়ে এসেছে বঙ্গ বিজেপি, তিনি মিঠুন চক্রবর্তী।