- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- ২০০-র স্বপ্ন দেখে কেন থামতে হল ৭৭-এ, পরাজয়ের কী কী কারণ উঠে আসছে বিজেপি সূত্রে
২০০-র স্বপ্ন দেখে কেন থামতে হল ৭৭-এ, পরাজয়ের কী কী কারণ উঠে আসছে বিজেপি সূত্রে
- FB
- TW
- Linkdin
মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থীর অনুপস্থিতি
প্রথম যে কারণটি শোনা যাচ্ছে, তা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরাটট মাপের নেতার বিরুদ্ধে কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর অনুপস্থিতি। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সামনে রেখে এই নির্বাচন লড়েছিল বিজেপি। স্বপ্ন দেখিয়েছিল ডবল ইঞ্জিন সরকারের মাধ্যমে রাজ্যকে 'মোদীর উন্নয়ন' সামিল করার। কিন্তু, বঙ্গ নেতারা এখন বলছেন, সব সময় মোদী পার করিয়ে দেবেন, এমন আশা করাটা ঠিক নয়। রাজ্য ও জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। মমতার ক্যারিশমার সঙ্গে লড়ার মতো একটি স্থানীয় মুখের দরকার ছিল।
মমতাকে একবগ্গা আক্রমণ করা
মমতাকেই একটানা আক্রমণ করে যাওয়াটাও ভুল কৌশল বলে মমনে করছে বিজেপি। বিশেষ করে নন্দীগ্রামে দুর্ঘটনার পর, মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে করা বিজেপি নেতাদের মন্তব্য মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। বরং ওই ঘটনায় মমতাই মানুষের সহানুভূতি আদায় করতে পেরেছেন। আর সবসময় মমতাকে আক্রমণ করার ফলে নির্বাচনে পুরো মনোযোগটাই তাঁর দিকে ছিল।
নীরব ভোটারের মন বুঝতে ব্যর্থতা
বিহারের মতো এখানেও 'নীরব ভোটার' অর্থাৎ মহিলা ভোটাররা মোদী তথা বিজেপিকে সমর্থন করবে, বলে ধরেই নিয়েছিল বিজেপি। এর আগে বারবারই দেখা গিয়েছে, নারী কল্য়ানমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের জোরে মহিলা ভোটারদের মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর, একটা বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। কিন্তু, বাংলায় সেই ২০০৬ সাল থেকেই ক্রমাগত মমতার মহিলা সমর্থন বাড়ছে। এইবারেও তার অন্যথা হয়নি। সভায় সভায় যে মা-বোনদের কথা বলতেন মমতা, তাঁরাই বিজেপির বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন।
দলীয় ক্যাডারদের ক্ষোভ
সেইসঙ্গে বানের জলের মতো দলে দলে তৃণমূল এবং বাম নেতাদের দলে অন্তর্ভুক্তিও, স্থানীয় স্তরে দলীয় ক্যাডারদের মনে ক্ষোভ তৈরি করেছিল। এতে করে অনেক আসনেই তাঁরা হতাশায় কাজ করেননি। দলের পাশ থেকে সরে গিয়েছেন, এটাও হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে বিজেপি নেতৃত্ব। অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীর মতো দু-একজন ছাড়া দলবদলু প্রার্থীদের বেশিরভাগেরই পরাজয় হয়েছে।
বুমেরাং মেরুকরণ
বাংলায় বিজেপির উত্থান ২০১৭ সালে মহরমের জন্য মমতা সরকারের দুর্গাপূজার ভাসান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তকে ঘিরে। ওই ঘটনার পর থেকেই মমতার বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। সভায় সভায় বিজেপি নেতারা এই অভিযোগ করতেন। কিন্তু, এখন এই কৌশল বুমেরাং হয়ে গিয়েছে বলে করছে বিজেপি নেতৃত্ব। এতে করে হিন্দু ভোট তো বিজেপির দিকে আসেইনি। উল্টে মমতার ঝুলিতে একজোট হয়েছে মুসলিম ভোট। মমতা যে বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার কথা তুলে ধরেছেন, তা মনে ধরেছে হিন্দু ভোটারদের একাংশেরও।
কাজ করেনি প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা
গত ১০ বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার চালিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির আরেকটটি বড় অস্ত্র প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। কাটমানি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেটরাজের মতো দুর্নীতির অভিযোগ। কিন্তু, শুভেন্দু অধিকারী, জিতেন্দ্র তিওয়ারি, সব্যসাচী দত্তদের মতো একের পর এক তৃণমূল নেতাদের দুই হাত খুলে দলে টেনে নিয়েছিল বিজেপি। আর সেই কারণেই কাজ অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগ, কাজ করেনি প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। এমন মতও দিচ্ছেন অনেক বিজেপি নেতা।
দিল্লির নিয়ন্ত্রণ
এছাড়া পরাজয়ের কারণ হিসাবে আর যে কারণটি উঠে আসছে, সেটি হল দিল্লির অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে কিন্তু, সাফল্য এনে দিয়েছিল বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বই। কিন্তু, তাদের উপর আস্থা না রেখে এরপরই সংগঠনের ভার নিয়ে নিয়েছিল নায়াদিল্লি। রাজ্যকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিব প্রকাশ, অরবিন্দ মেননদের মতো বিশিষ্ট নেতাদের। পরে এই রাজ্যে প্রচারে এসেছেন, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ বহু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। তাঁরা বাংলার রাজনীতির ধারাটা ঠিকমতো রপ্ত করতে পারেননি, এমনটাই মনে করছেন বঙ্গ বিজেপির একাংশ।