সংক্ষিপ্ত
জেল থেকে প্রস্তুতি নিয়েই আইআইটি-জ্যাম (IIT-JAM 2022 Exam) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল খুনের মামলায় অভিযুক্ত এক যুবক। বিহারের (Bihar) নওয়াদা জেলার এই ঘটনা সারা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছে।
কথায় বলে, 'ইচ্ছা থাকলেই, উপায় হয়।' আর সেই কথাটা যে কতটা সত্যি তা প্রমাণ করে ছাড়লেন বিহারের (Bihar) এক বিচারাধীন কারা-বন্দী। ২০২২ সালের আইআইটি-র স্নাতোকোত্তর স্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষা বা আইআইটি-জ্যাম (IIT-JAM 2022 Exam) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল খুনের মামলায় অভিযুক্ত ওই যুবক। শুধু তাইই নয়, সর্বভারতীয় মেধা তালিকায় সে ৫৪-তম স্থান অর্জন করেছে!
বিচারাধীন বন্দি ওই যুবকের নাম সুরজ কুমার ওরফে কৌশলেন্দ্র, নওয়াদা জেলার (Nawada district) ওয়ারিশলিগঞ্জ থানা এলাকার মোসমা গ্রামের বাসিন্দা। এক খুনের মামলার অভিযোগে সে প্রায় এক বছর ধরে মন্ডল কারা নওয়াদা জেলে (Mandal Kara Nawada Jail) বন্দি রয়েছে। সেখান থেকেই সে আইআইটির স্নাতকোত্তর প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এই প্রস্তুতি পর্বে কারা প্রশাসনও তাঁকে অনেক সাহায্য করেছে বলে জানা গিয়েছে। সুরজ তার সাফল্যের কৃতিত্ব প্রাক্তন জেল সুপার অভিষেক কুমার পান্ডে এবং তার ভাই বীরেন্দ্র কুমারকে দিয়েছে। এর সঙ্গে সুরজ কুমারের কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার ফলে, জেলে বন্দি অবস্থাতে একেবারে নিজে নিজে পড়াশোনা করে সে দুর্দান্ত ব়্যাঙ্ক-সহ যে শুধু এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে কারাগারে রয়েছে সুরজ। রাস্তা নিয়ে বিবাদের জেরে মোসমা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল। সঞ্জয় যাদব নামে এক ব্যক্তি ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে পাটনায় (Patna) নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথে ওই ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরপরই মৃত সঞ্জয় যাদবের বাবা এই বিষয়ে একটি এফআইআর দায়ের করেছিলেন। এফআইআর-এ সুরজ কুমার এবং তাঁর বাবা-সহ মোট নয়জনের নাম ছিল। এরপরই ১৯ এপ্রিল, ওই ৯ জনের মধ্যে সুরজসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছিল। তারপর থেকে জেল হেফাজতেই রয়েছেন সুরজ কুমার।
তবে, কৃতী ছাত্র সুরজ যে এবারই প্রথম আইআইটি-জ্যাম পরীক্ষায় এত ভাল ফল করলেন, তা নয়। গত বছরও এই পরীক্ষায় দারুণ ফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সুরজ। বস্তুত, গতবারের ফল ছিল এবারের থেকেও ভাল, সর্বভারতীয় মেধা তালিকায় ছিলেন ৩৪তম স্থানে। তবে, এপ্রিল মাসের ওই ঘটনাটি তাঁর জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছিল। তাতে অবশ্য আশা হারাননি তিনি এবং লক্ষ্য থেকেও চ্যুত হননি। জীবনে কারাগারের অন্ধকার নেমে এলেও, তার মধ্য থেকেই লক্ষ্য়ে এগিয়ে যাওয়া প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছেন। সে জানিয়েছে, তার স্বপ্ন বিজ্ঞানী হওয়ার।
আইআইটি রুরকি (IIT-Roorki) এই পরীক্ষা পরিচালনা করে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ২-বছরের জন্য বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর ডিগ্রির কোর্সে ভর্তি হওয়া সুযোগ পান। আইআইটি-র এই প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অর্জনের পর, এখন সুরজের সামনেও তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পথটা আবার পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। সে, এখন আইআইটি রুরকিতে ভর্তি হয়ে, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্স করতে পারবে।