সংক্ষিপ্ত
আসুন জেনে নেওয়া যাক কে এই হিরন্ময় ঘোষাল? হিরন্ময় ঘোষাল একজন সুলেখক, সাংবাদিক, অধ্যাপক এবং বিদগ্ধ পণ্ডিত মানুষ। এর পাশাপাশি অতি অবশ্যই একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি পোল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। পোলান্ড তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত পোল্যাণ্ডের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রথন বই লিখলেন হিরন্ময়।
দেশের স্বাধীনতার স্বার্থে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করাটা কি অন্যায়? ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি ছিল 'অন্যায়' আর সেই অন্যায়ের খেসারত দিতে হয়েছিল এক ভারতীয়কে। ভারতীয় না বলে বাঙালি বললেই ভালো হয়। সুভাষচন্দ্র বসুকে সাহায্য করার অপরাধে চাকরি খোয়াতে হয়েছিল মেধাবী অধ্যাপক হিরন্ময় ঘোষালকে।
ভারত স্বাধীন হলে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসে। আর ক্ষমতায় আসার পরই নেহেরু সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল নেতাজির হয়ে কাজ করা এই মানুষটির বিরুদ্ধে। তাঁকে বিদেশ মন্ত্রকের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।মস্কোতে ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে চাকরি করতেন হিরন্ময়। সেই চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয় নেহেরুর নির্দেশে। নেহেরুর বোন বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত হলে হিরন্ময়ের সাথে নেহেরু পরিবারের ঠাণ্ডামাথার যুদ্ধ শুরু হয়। অবশেষে চাকরি যায় হিরন্ময়ের। মস্কো দূতাবাস থেকে চাকরি ছাড়ার পরে হিরন্ময় লন্ডন যান কিন্তু সেখানে তিনি বিশেষ কিছু সুবিধা করতে পারেন নি। জানা যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অস্ট্রিয়ায় থাকাকালীন হিরন্ময় নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন নেতাজির সাথে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কে এই হিরন্ময় ঘোষাল? হিরন্ময় ঘোষাল একজন সুলেখক, সাংবাদিক, অধ্যাপক এবং বিদগ্ধ পণ্ডিত মানুষ। এর পাশাপাশি অতি অবশ্যই একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি পোল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। পোলান্ড তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত পোল্যাণ্ডের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রথন বই লিখলেন হিরন্ময়। হিরন্ময় ইংরেজিতে ২ টি আর বাংলা ভাষায় বই লিখেছেন ৯ টির মত। পোলান্ডে থাকাকালীন সেখানকার ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন ইন্ডোলজি বিভাগে।
মেধাবী হিরন্ময় কমবেশি ২৬ খানা ভাষা জানতেন। প্রখ্যাত রাশিয়ান সাহিত্যিক নিকোলাই গোগলের উপন্যাস বাংলায় অনুবাদ করেছেন। হিরন্ময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলার এক অভিজাত জমিদার পরিবারে। প্রেসিডেন্সি কলেজের মেধাবী ছাত্র প্রেসিডেবাবা কালীসদয় ঘোষাল ছিলেন সেআমলে রায়বাহাদুর উপাধিপ্রাপ্ত। ব্রিটিশ আমলে পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন কালীসদয় ঘোষাল। হিরন্ময় ঘোষালের খুড়তুতো ভাই পঞ্চানন ঘোষালও ছিলেন একজন দাপুটে পুলিশ অফিসার। পঞ্চানন ঘোষাল অপরাধ এবং অপরাধীদের উপজীব্য করে সেযুগে লিখেছেন উপন্যাস। ইতিহাস বলছে, পঞ্চানন ঘোষালের আগে এশিয়া মহাদেশে এধরনের কাজ তাঁর আগে কেউ করেননি। পঞ্চানন ঘোষালের সাহিত্যের প্রশংসা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
হিরন্ময়ের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন একজন বিদেশিনী। হিরন্ময়ের দ্বিতীয় স্ত্রীর কন্যা মীরা এস ঘোষাল এক সাক্ষাৎকারে বলছেন, "মস্কোতে ভারতীয় দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে চাকরি করতেন আমার বাবা। সেই চাকরি থেকে বাবাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আমার বাবাকে কেন চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তার কোনও সদুত্তর আজও আমাদের কাছে নেই।" আর সুভাষ বসুর সাথে যোগাযোগ প্রসঙ্গে মীরা এস ঘোষাল জানিয়েছেন, "দেশকে মুক্ত করতেই আমার বাবা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে সহযোগিতা করতে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন।"
১৯৬৩ সালে হিরন্ময় পরিবারের সাথে রাশিয়া যান এবং সেখানে দেখা হয় তাঁর পুরনো বন্ধু কাশ্মীরী পণ্ডিত ত্রিলোকীনাথ কউলের সাথে। তিনি তখন রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক। পুরনো বন্ধু কউলের সঙ্গে দেখা হওয়া প্রসঙ্গে হিরন্ময়ের কন্য মীরা বলছেন, "বাবা বললেন কউল বদলে গেছে।" এরপরই কউল রাষ্টদূত হন সোভিয়েত ইউনিয়নের। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর সময় কউল এবং শাস্ত্রীজী একই বাড়িতে ছিলেন! শাস্ত্রীজীর মৃত্যুর সাথে সাথে নেতাজি অন্তর্ধানের বেশ কিছু রিপোর্টও হারিয়ে যায়। বিমান দুর্ঘটনার পর নেতাজি রাশিয়ায় ছিলেন কিনা সে বিষয় নিয়ে পরিস্কারভাবে জানান নি হিরন্ময় ঘোষাল। ৬১ বছর বয়সে এই বাঙালি কূটনীতিকের মৃত্যু হয় বিদেশভূমিতে।
আরও পড়ুন: Netaji Statue: নেতাজির মূর্তি তৈরির গ্রানাইট আসবে তেলেঙ্গানা থেকে, জানুন আরও বিস্তারিত