সংক্ষিপ্ত
- ডায়াবেটিক পেশেন্টরা কিছু ওষুধ খান ব্লাড প্রেশারের জন্য়, কিডনির প্রোটেকশনের জন্য়।
- এগুলোর খাওয়ার ফলে যেখান দিয়ে করোনার ভাইরাস ঢোকে, সেই জায়গাটা একটু স্টিমুলেটেড হয়ে যায়। মানে একটু বেড়ে যায়।
- ফলে তাঁরা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্য়ে গিয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়।
- ডায়াবেটিক রোগীদের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে অন্য়দের তুলনায়।
জানালেন অ্য়াপলো গ্লিনেগেলস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট, ডায়াবেটিস অ্য়ান্ড এনডোক্রিনোলজিস্ট ডা. তীর্থঙ্কর চৌধুরী।
প্রথমেই যেটা বলা দরকার, আমার বেশিরভাগ পেশেন্টই ডায়াবেটিক। তাই সেইদিকটাতেই আমি জোর দিচ্ছি। যাঁরা ডায়াবেটিক পেশেন্ট তাঁরা কিছু ওষুধ খান ব্লাড প্রেশারের জন্য়, কিডনির প্রোটেকশনের জন্য়। এগুলোর খাওয়ার ফলে কী হয়, যেখান দিয়ে করোনার ভাইরাস ঢোকে, সেই জায়গাটা একটু স্টিমুলেটেড হয়ে যায়। মানে একটু বেড়ে যায়। ফলে তাঁরা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্য়ে গিয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়। ডায়াবেটিক রোগীদের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে অন্য়দের তুলনায়। আর অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার থাকলে তো কথাই নেই। তা শরীরে ভাইরাসকে বাড়তে সাহায্য় করে। তাই এই পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিক রোগীদের সতর্ক থাকতে রাখতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে তাই ডায়াবেটিক রোগীদের সুগার লেভেলটা রোজ মনিটর করা দরকার। প্রয়োজনে ওষুধের ডোজ বাড়ানোর দরকার। সুগারের ওষুধ বা ইনসুলিন বাড়িতে এনে রাখুন যথেষ্ট পরিমাণে। আর অবশ্য়ই সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করুন। ডায়াবেটিক রোগী হোন বা যেকেউ, সোশাল ডিসট্য়ান্সিং বজায় রাখুন। একটা কথা মনে রাখবেন, যদি কেউ হাঁচি দেয় বা কাশি দেয়, ড্রপলেট কিন্তু খুব বেশিদূর যেতে পারে না। তিন থেকে ছ-ফুট মানে এক-দেড়মিটার বড়জোর। তারমধ্য়ে ওটা মাটিতে পড়ে যায়। তাই ওই দূরত্ব রাখতে পারলেই কিন্তু আমরা এই সংক্রমণকে এড়িয়ে চলতে পারি।
এবার আসি মাস্কের কথায়। মাস্ক যেন ঠিকমতো খাপ খায় বা প্রপার ফিটিংয়ের হয়। মাস্ককে গলায় আটকে রাখলে চলবে না। যত ভালো মাস্ক তত ভালো। তবে নেই-মাস্কের চেয়ে যেকোনও মাস্ক পরা ভালো। তবে মাস্কের ভেতরে কিন্তু হাত দেবেন না। মাস্কের ওপরে যদি ভাইরাস জমা হয়, তাহলে তার থেকে তখন ভেতরে চলে আসতে পারে। বলাই বাহুল্য়, মাস্ক দুরকমের হয়। একটা হল ডিসপোজেবল আর একটা হল রি-ইউজেবল। ডিসপোজেবল হলে তো কোনও অসুবিধে নেই। আপনি ব্য়বহার করবেন তারপর তা ফেলে দেবেন সাবধানে। আর রি-ইউজেবল হলেও অসুবিধে নেই। অ্য়ালকোহলজাতীয় স্য়ানিটাইজার দিয়ে মাঝেমধ্য়ে তাকে পরিষ্কার করে নিন।
এখন নিজেকে একটু লকডাউন অবস্থায় রাখাই ভালো। কারণ আমরা জানি এই ভাইরাসটা যে কোনও সারফেসে ৩ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা অবধি বাঁচে। প্লাস্টিকে বেশিক্ষণ। গ্লাভসে প্রায় দুদিন। অন্য় কোনও সারফেসে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার মধ্য়ে মারা যায়। তাই লকডাউনের ফলে ভাইরাসের চেনটা নষ্ট হয়ে যায়।
এই সময়ে দরকার ঘনঘন হাত ধোওয়া। আমরা অনেক সময়ে হয়তো দুধের প্য়াকেট নিয়ে এলাম। পাউরুটি নিয়ে এলাম। কিম্বা একটু সবজি নিয়ে এলাম। ওগুলোকে কিন্তু আমরা সচরাচর ভাইরাসের কেরিয়ার ভাবি না। কিন্তু বিষয়টা অত সহজ নয়। তাই বাইরে থেকে যা-যা আনবেন, তা যদি ধোয়ার মতো হয় তাহলে ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপর শুকিয়ে নিন।
বলে রাখা ভালো, এই নোবেল করোনা ভাইরাসের ছোঁয়াছে ক্ষমতা খুব বেশি ঠিকই , কিন্তু এর মারণ ক্ষমতা ততটা নয়। সার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রে ব্য়াপারটা ঠিক উল্টো। সার্সের ছোঁয়াছে ক্ষমতা এত বেশি ছিল না কিন্তু মারণ ক্ষমতা অনেক বেশি ছিল। তবে তা সত্ত্বেও করোনার ক্ষেত্রে ভয়ের যে কিছু নেই, এমনটা বলা যায় না। অনেকেই মনে করছেন, শুধু বয়স্ক মানুষরাই বেশি ঝুঁকিপ্রবণ এক্ষেত্রে। কিন্তু তা নয়। যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, অথচ বয়স তেমন বেশি নয়, তাঁরাও কিন্তু ঝুঁকিপ্রবণ। কাউর বয়স বেশি, কাউর ডায়াবেটিস আছে, কাউর সিওপিডি আছে, কাউর কিডনির সমস্য়া আছে, কাউর হাইপারটেনশন আছে, কাউর হার্টের সমস্য়া আছে, কাউর লিভারের সমস্য়া আছে, কেউ আবার খুব স্মোক করে-- এই সব মিলিয়ে কিন্তু মোট জনসংখ্য়ার ৫০ শতাংশের বেশি এখন ঝুঁকিপ্রবণ।
তবে এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে এটাই বলতে হয় যে, সেরে ওঠার হারও কিন্তু খুব বেশি। তাই চিন্তার বিষয় যেমন আছে, আবার তা নেইও। শুধু সাবধানে চলুন আর লকডাউন মেনে চলুন।