কেরলে একজন আধ্যাত্মিক চিন্তাবিদ ও লেখক ড. আর. রমণনের নেতৃত্বে দেশজুড়ে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবী বাইকার 'বুলেটস অ্যাগেইনস্ট বুলেটস' নামে এক অভিনব অভিযান শুরু করেছেন।
Bullets Against Bullets mission: বেশিরভাগ সময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল, বিবৃতি, রাজনৈতিক বক্তৃতা ইত্যাদি প্রচলিত পন্থায় প্রকাশ পায়। কিন্তু এসবের বাইরে গিয়ে কেরলের একজন আধ্যাত্মিক চিন্তাবিদ ও লেখক ড. আর. রমণনের নেতৃত্বে দেশজুড়ে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবী বাইকার 'বুলেটস অ্যাগেইনস্ট বুলেটস' নামে এক অভিনব অভিযান শুরু করেছেন। কেরলের কালডি থেকে কাশ্মীরের শারদা মন্দির পর্যন্ত ৩,৬০০ কিলোমিটারের এই যাত্রা ১ জুন শুরু হয়েছে।
এই যাত্রা কেবল একটা পথ অতিক্রম করার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, বরং একটা জাতীয়, আধ্যাত্মিক এবং প্রতীকী প্রকাশের মাধ্যম। দেশে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদী ঘটনার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ কিন্তু দৃঢ় প্রত্যুত্তর বলেই মনে করা হচ্ছে।
সন্ত্রাসের গুলিকে শান্তির 'বুলেট' দিয়ে জবাব
২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল। ড. রমণন এই হামলার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে কাশ্মীরে ছিলেন। সেই ঘটনার পর তিনি কিছু একটা দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, ‘বুলেটস অ্যাগেইনস্ট বুলেটস’ এই ধারণার জন্ম। এখানে 'বুলেট' বলতে গোলাগুলির বন্দুক নয়, বরং হার্লে ডেভিডসন, রয়েল এনফিল্ডের মতো বাইককেই বোঝাচ্ছে! সন্ত্রাসের গুলির (bullets) বিরুদ্ধে ভারতের ভালোবাসা, আনুগত্য এবং বুলেট বাইকের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে জবাব।
‘চলো এলওসি’: এক দেশপ্রেমী আন্দোলন ‘চলো এলওসি’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে এই অভিযানের আয়োজন করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই হাজার হাজার দেশপ্রেমিক এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। এতে যুবক, মহিলা, বৃদ্ধ, কৃষক, আইটি কর্মী, ছাত্র, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি ইত্যাদি বিভিন্ন সমাজের মানুষ অংশগ্রহণ করছেন। ১০০ জনকে চূড়ান্ত যাত্রার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৫ জন মহিলা এবং বয়স ২০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে।
বিশেষ করে, এই যাত্রার আনুমানিক খরচ জনপ্রতি ৬০,০০০ টাকা হলেও কোনও অংশগ্রহণকারী এর জন্য কোনও ডোনেশন বা স্পনসর চাইছেন না। এটি তহবিল সংগ্রহের অভিযান নয়, বরং বিশুদ্ধ দেশপ্রেমের এক প্রকাশ।
রাজনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন
ড. রমণন বিজেপির কেরল রাজ্য সভাপতি রাজীব চন্দ্রশেখর এবং রাজ্যপাল রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আরলেকরের সাথে এই উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। দুজনেই এই অভিযানের প্রশংসা করেছেন এবং প্রয়োজনে সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। স্বয়ং চন্দ্রশেখর এই যাত্রার কিছু অংশে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের সুষুম্নাকাণ্ডের’ মাধ্যমে এক আধ্যাত্মিক যাত্রা ড. রমণন এই অভিযানকে কেবল ভৌগোলিক যাত্রা হিসেবে দেখছেন না, বরং সমগ্র ভারতের ‘সুষুম্না’ অর্থাৎ মেরুদণ্ডের মধ্য দিয়ে হওয়া এক আধ্যাত্মিক যাত্রা হিসেবে দেখছেন। কালডি—যেখানে আদি শঙ্করাচার্যের জন্ম—সেখান থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা ভারতের অন্তঃকরণের মধ্য দিয়ে হচ্ছে। এই যাত্রা কেবল রাস্তায় নয়, ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জাতীয়তাবাদের সুতোয় বাঁধা।
১২ দিন, ৩৬০০ কিমি, এক সংকল্প ১ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ১০০ জন বাইকার ভারতের বিভিন্ন রাজ্য অতিক্রম করে কাশ্মীরের টিটওয়ালে অবস্থিত শারদা মন্দিরে পৌঁছাবেন। এই যাত্রা কেবল শারীরিক বা যান্ত্রিক নয়, বরং এক वैचारিক আন্দোলনের অংশ। সংগঠনের শীর্ষে মণি কার্তিক (সভাপতি), সুখন্যা কৃষ্ণা (সম্পাদক) এবং সুমেশ (কোষাধ্যক্ষ) নেতৃত্বের দায়িত্বে আছেন।
এক শান্তিপূর্ণ ইঙ্গিত ‘বুলেটস অ্যাগেইনস্ট বুলেটস’ এই অভিযান ভারতের আধুনিক নাগরিকদের দেওয়া একটা জোরালো, শান্ত এবং শক্তিশালী জবাব। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বন্দুক না ব্যবহার করে, বরং সাহস এবং সুসংস্কারের মাধ্যমে জবাব দেওয়া এই যাত্রার দেশজুড়ে প্রশংসা হচ্ছে। "দেশবিরোধী শক্তিকে বন্দুক দিয়ে নয়, সংস্কার এবং দেশপ্রেম দিয়ে জবাব দিতে হবে", এই বার্তা নিয়ে এই নীরব কিন্তু প্রচণ্ড প্রভাবশালী যাত্রা দেশের ঐক্যের পতাকা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।


