সংক্ষিপ্ত

ভারতে বর্তমানে কোভিড-১৯ (Covid-19) পরিস্থিতি ভাল হলেও, দেখা দিল অ্যানথ্রাক্স (Anthrax) আতঙ্ক। আইআইটি-ম্যাড্রাস (IIT-Madras) ক্যাম্পাসে দুই দিনে মৃত চারটি হরিণ (Deer), আশঙ্কা মহামারির। 
 

সারা বিশ্বে, এদিক-ওদিক থেকে কোভিড-১৯'এর (Covid-19) আরও এক তরঙ্গের উত্থানের খবর আসলেও, ভারতে এখনও পর্যন্ত অবস্থা অনেকটাই ভাল। তবে এর মধ্যেই তৈরি হল আরও এক বড় আতঙ্কের কারণ। আইআইটি-ম্যাড্রাস (IIT-Madras) ক্যাম্পাসে গত দুই দিনে মোট চারটি হরিণের (Deer) মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে, অন্তত একটির মৃত্যুর কারণ অ্যানথ্রাক্স (Anthrax), তা নিশ্চিত করা গিয়েছে। বাকি তিনটিও এই অত্যন্ত সংক্রামক জুনোটিক রোগেরই শিকার বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে শুক্রবার জানানো হয়েছে, মৃত হরিণদের নমুনা পরীক্ষার জন্য তামিলনাড়ু ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (Tamil Nadu Veterinary and Animal Sciences University) পাঠানো হয়েছে। একটি হরিণের নমুনা পরীক্ষা করা গিয়েছে। অন্য হরিণদের নমুনাগুলি নিষ্পত্তিযোগ্য ছিল না। যেটির পরীক্ষা করা গিয়েছে, তার নমুনায় অ্যানথ্রাক্সের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। 

আরও পড়ুন - IIT-র শিক্ষকের রহস্যমৃত্যু, ক্যাম্পাসের হকি মাঠের পাশ থেকে উদ্ধার পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া দেহ

আরও পড়ুন - Covid 19 3rd Wave: ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কোভিড তৃতীয় তরঙ্গে দেশে, সতর্ক করল বিশেষজ্ঞরা

আরও পড়ুন - মাদ্রাজ আইআইটি খোলার পরেই করোনাভাইরাসের কোপ, মাত্র ১৪ দিনেই আক্রান্ত ৭১

আইআইটি-মাদ্রাজ ইনস্টিটিউটের এক সূত্রের দাবি, চারটি হরিণের দেহেই মৃত্যুর আগে অ্যানথ্রাক্সের সাধারণ উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। তাদের দেহের সমস্ত প্রাকৃতিক ছিদ্র (নাসাছিদ্র, কর্ণছিদ্র, পায়ুছিদ্র ইত্যাদি) দিয়ে জৈব তরল এবং রক্ত বের হচ্ছিল। পরে নিরাপত্তা কর্মীরা হরিণগুলির মৃতদেহ খুঁজে পান। এরপরই, খবর দেওয়া হয় গুইন্ডি ন্যাশনাল পার্কের (Gunidy National Park) কর্মকর্তাদের । সেইসঙ্গে, মৃতদেহগুলির চারপাশ দড়ি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। 

সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ও অন্যান্য কর্মীদের ওই এলাকা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি মেনেই ওই প্রাণীদের মৃতদেহগুলিকে সমাহিত করা হয়েছে। তারা আরও বলেছে, চেন্নাইয়ের (Chennai) মতো জায়গায় এবং আইআইটি-মাদ্রাজের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া যাওয়াটা অত্যন্ত মর্মান্তিক। 

কোথা থেকে এই মারাত্মক রোগ-জীবানু ওই প্রতিষ্ঠানে এল, তা এখনও জানা যায়নি। পশুচিকিত্সকরা জানিয়েছেন, পথ-কুকুর (Stray Dogs) থেকে এই ভাইরাস হরিণদের মধ্যে ছড়িয়ে থাকতে পারে। কারণ, পথ-কুকুররা এই ভাইরাসের অত্যন্ত ভাল বাহক। আইআইটি-মাদ্রাজ কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে থাকা পথ-কুকুরদের কাছাকাছি না যেতে এবং তাদের স্পর্শ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে পথ-কুকুররাই ক্যাম্পাসে এই ব্যাকটেরিয়ার বাহক হতে পারে। কারণ, এই রোগটি এর আগে কখনও এখানে সনাক্ত হয়নি।

আইআইটি মাদ্রাজ ক্যাম্পাসের লাগোয়া গুইন্ডি জাতীয় উদ্যান। ক্যাম্পাসে অ্যানথ্রাক্সের জীবানু সংক্রমণের প্রেক্ষিতে জাতীয় উদ্যানটিতেও উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উদ্যানের কর্মীদের প্রয়োজন ছাড়া প্রাণীদেরকে এবং তাদের জন্য তৈরি খাওয়ার স্পর্শ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও কারণে স্পর্শ করতে হলে, প্রতিরক্ষামূলক সাজ-সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। 

অন্যদিকে, কোয়েম্বাটোর (Coimbatore) বন বিভাগের অন্তর্গত থাদাগামেও (Thadagam) একটি পুরুষ হাতির অ্যানথ্রাক্সে মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতিবার তার মৃতদেহ খুঁজে পান বনকর্মীরা। পরীক্ষার জন্য তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শারীরের ছিদ্র থেকে নির্গত তরলেরও নমুনা নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার হাতিটির দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে।

একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে অ্যানথ্রাক্স রোগ হয়। প্রধানত প্রাণীদের প্রভাবিত করলেও, কোনও ব্যক্টি যদি সংক্রামিত প্রাণীদের সংস্পর্শে আসেন বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার স্পোরগুলি শরীরে চলে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তি সংক্রামিত হতে পারেন। উপসর্গ নির্ভর করে সংক্রমণ কীভাবে ঘটছে তার উপর। ত্বকের আলসার থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার মতো অসুস্থতা দেখা যেতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিত্সা করলেই সংক্রমণ নিরাময় হয়। তবে, শ্বাসের মাধ্যমে সংক্রামিত হলে, অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে। মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।