সংক্ষিপ্ত

  • দেশে পালিত হচ্ছে ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস
  • লালকেল্লায় জাতীর উদ্দেশে ভাষণে বাঙালি বিপ্লবীকে স্মরণ
  • ঋষি অরবিন্দের কথা উল্লেখ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
  • তাঁর পথ অনুসরণের পরামর্শ দিলেন দেশবাসীকে 

৭৪ বছরে পড়ল দেশের স্বাধীনতা। করোনা আবহে এবারের স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন অনেকটাই আলাদা। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে পালন করতে হচ্ছে অনুষ্ঠান। তবে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি বাঙালির কাছে বিশেষ আরও ২টি কারণে। এদিনই জন্মেছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। জাতীয়তাবাদী নেতা,আধ্যাত্মিক সাধক ঋষি অরবিন্দ ঘোষেরও জন্ম আজকের দিনেই। অরবিন্দ ঘোষের এদিন ১৪৮তম জন্মদিবস। একইসঙ্গে দেশের  স্বাধীনতা দিবস।

জাতীয়তাবাদী নেতা থেকে আধ্যাত্মিক জীবন। অরবিন্দ ঘোষের জীবন বয়েছিল একেবারে ভিন্ন খাতে। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতির এক অন্যতম পুরোধা, স্বদেশী আন্দোলনে উত্তাল বঙ্গদেশে যাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। দেশমাতৃকার জন্য ত্যাগস্বীকারে বঙ্গজ যুবসমাজকে তিনি যে ভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, ধরা আছে ইতিহাসের পাতায়। অরবিন্দের জন্ম ১৮৭২ সালের ১৫ অগস্ট। ঋষি অরবিন্দ ঘোষ পড়াশুনা করেছিলেন কেমব্রিজের কিংস কলেজে। সেখান থেকে ফিরে এসেই ব্রিটিশ শাসনের উপর লেখালেখি শুরু করেন। ব্রিটিশ যুগে ফল যা হবার তাই হল! যেতে হল জেলে।  জেলে তাঁর জীবনে বহু পরিবর্তন আসে। ধার্মিক মনোভাবাপন্ন হয়ে পড়েন তিনি। সাহিত্যিক অরবিন্দ ঘোষ মোট ৩২ খানা গ্রন্থ লিখেছিলেন। যার মধ্যে ৬টি ছিল বাংলা ভাষায়।উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হল,ভারতের নবজন্ম, কারাকাহিনি, ধর্ম ও জাতীয়তা এবং অরবিন্দের পত্র।  অরবিন্দের রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মপন্থার তিনটি দিক ছিল, গুপ্ত বৈপ্লবিক প্রচারকার্য চালানো এবং সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রস্ত্ততি হিসেবে সংগঠন গড়ে তোলা।  দ্বিতীয় ছিল সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে প্রচারকার্য চালানো এবং তিন নম্বর, অসহযোগ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করা।  

আরও পড়ুন: রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা থেকে লালকেল্লায় ভাষণ, ছবিতে দেখুন প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতা দিবস পালন

“ধর্মাবতার, আমার চূড়ান্ত আবেদন এই, অভিযুক্তের তকমা দেওয়া এই মানুষটি আজ শুধু এই আদালতের সুবিচারের প্রত্যাশী নন, তিনি মুখাপেক্ষী ইতিহাসের ন্যায়ালয়ের। আমার আবেদন, এই মামলার বিতর্কের অভিঘাত সময়ের প্রলেপে ক্ষীণতর হয়ে পড়ার দীর্ঘদিন পরও, এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাওয়ার বহুকাল পরও, এই মানুষটির প্রয়াণের দীর্ঘদিন পরও, ওঁকে মানুষ মনে রাখবে দেশপ্রেমের কাব্যরচয়িতা হিসাবে, জাতীয়তাবাদের দিকদর্শক হিসাবে। মানবতার পূজারী হিসাবে। ওঁর বাণী দেহত্যাগের বহুদিন পরও ধ্বনিত হবে দেশদেশান্তরে।”

অরবিন্দ ঘোষ সম্পর্কে উপরের উদ্ধৃতিটি  করেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ।  আলিপুর বোমা মামলার বিচারপর্বে। যে মামলায় অভিযুক্ত অরবিন্দের আইনজীবী ছিলেন চিত্তরঞ্জন। জাতীয়তাবাদী নেতা হিসাবে অরবিন্দের বহুবর্ণ ভাবমূর্তি নিখুঁত পরিস্ফুট হয় এই উদ্ধৃতিতে।

আরও পড়ুন: ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের থেকে মুক্তি, স্বাধীনতা দিবসে ফিরে দেখা সেই রক্তক্ষয়ি ইতিহাস

অরবিন্দের রাজনৈতিক সক্রিয়তার সুচনা হয় ১৮৯০ সালে, কংগ্রেসের নরমপন্থী মনোভাবের বিরোধিতার মাধ্যেমে। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের বিকাশ ঘটে স্বদেশি আন্দোলনের সময়, যখন তিনি ডাক দিয়েছিলেন ‘নিষ্পৃহ প্রতিরোধ’।

অরবিন্দের কাছে দেশমাতাকে স্বাধীন করাই ছিল এক এবং একমাত্র লক্ষ্য।  অরবিন্দ লিখেছিলেন, “মাতৃভূমি ছাড়া কোনও কিছুই রাজনৈতিকভাবে পূজ্য নয়। স্বাধীনতা ছাড়া আর কোনও কিছুই রাজনৈতিকভাবে অভীষ্ট নয়। এবং কোনও পন্থাই রাজনৈতিকভাবে শুভ বা অশুভ নয়, যতক্ষণ না তা জাতীয়তাবাদের উন্মেষে সহায়ক বা ক্ষতিকারক হয়ে উঠছে।”

১৯০৭-এ কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে দলের নরমপন্থী অংশের সঙ্গে অরবিন্দ সহ অন্যান্য চরমপন্থী নেতাদের মতবিরোধ তুঙ্গে ওঠে। কংগ্রেস বিভক্ত হয়ে যায় এর কিছুদিন পরেই। অরবিন্দ অবশ্য ততদিনে কলকাতায় ‘অনুশীলন সমিতি’-র মতো সহিংস সংগ্রামে বিশ্বাসী গুপ্ত সংগঠনগুলির নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছেন। ১৯০৮ সালে অরবিন্দ এবং সমিতির আরও অনেকে গ্রেফতার হন আলিপুর বোমা মামলায়। এ মামলায় অরবিন্দ বেকসুর খালাস পান। কিন্তু এক বছর জেলে কাটানোর পর্বে তাঁর রাজনৈতিক ভাবাদর্শে ছোঁয়া লাগে আধ্যাত্মিক চিন্তার। অরবিন্দ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, “জেলে থাকার সময় আমি অবিরাম শুনতে পেতাম স্বামী বিবেকানন্দের বাণী। যখন আমি এক পক্ষকাল ধ্যানমগ্ন ছিলাম একা একটি কুঠুরিতে, বিবেকানন্দ যেন রোজ আমার সঙ্গে কথা বলতেন।” জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর অরবিন্দ নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন আধ্যাত্মিকতায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের যোগসূত্র স্থাপন করেছিলেন যে সব দেশনেতারা, অরবিন্দ তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। বঙ্কিমচন্দ্রই প্রথম ধর্মীয় অনুষঙ্গ যোগ করেছিলেন রাজনীতিতে, তার পরে বিবেকানন্দও। ইতিহাসবিদ এম কে হালদারের মতে, “অরবিন্দের হাত ধরেই ভারতীয় রাজনীতি ধর্মের লক্ষণরেখা অতিক্রম করেছিল। সেই থেকেই ধর্ম ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গাঙ্গী উপকরণ হয়ে দাঁড়ায়।”

তবে অরবিন্দের রাজনৈতিক দর্শন তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা পায়নি, এমনটা মনে করেন অনেকেই। সেই বাঙালি বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষকেই ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লালকেল্লায় জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে , প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর পথ অনুসরণের পরামর্শ দিলেন দেশবাসীকে ।

 

 

মনীষী অরবিন্দ ঘোষের জন্মবির্ষীকিতে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু।

 

 

ট্যুইট করে শ্রদ্ধা জানায় কংগ্রেসও।