সংক্ষিপ্ত
নাথুরাম গডসের গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর শরীর। শেষ শব্দ ছিল হে রাম। মতাদর্শের জন্যই গডসে হত্যা করেছিলেন গান্ধীকে।
সালটা ১৯৪৮-এর ৩০ জানুয়ারি। ঘড়ির কাঁটায় তখন পাঁচটা বেজে পাঁচ মিনিট। পরপর তিনটি গুলির এফোঁড় ওফোঁড় করে যায়। 'হে রাম' বলে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। শেষ হয়ে যায় ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কিন্তু তিনি মহাত্মা গান্ধী- জাতির জনক, অহিংস আন্দোলনের স্রষ্টা- তাই তাঁর অধ্যায় শেষ হয়েও শেষ হয় না। মৃত্যুর ৭৫ বছর পরেও গান্ধীজি আজও প্রাসঙ্গিক দেশের মানুষের কাছে। বিদেশেও তিনি চর্চায় বিষয়। এখনও ভারত মানেই গান্ধীর দেশ। ৭৫ বছর আগের একটি বিকেলে হিংসার জয় হলেও তারপরে কিন্তু হার মানতে হয় হিংসাকে। জয় হয় শান্তির।
এখানে রইল গান্ধীজির মৃত্যু নিয়ে ১০টি পয়েন্ট
১. গান্ধীজির হত্যাকারী হিসেবে সবার আগেই উঠে আসে নাথুরাম গডসের নাম। কিন্তু তিনি একা ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে ছিল আরও বেশ পাঁচ জন। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার পরই তারা গান্ধীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছেন। গান্ধীর হত্যাকারীরা হলেন শঙ্কর কিস্তাইয়া, গোপাল গডসে, মদন লালা পাহওয়া , দিগম্বর রামচন্দ্র ব্যাজ, নারায়ণ আপ্তে, ডি সাভারকর ও নাথুরাম গডসে।
২. নতুন দিল্লির বিড়লা হাউসের পিছনে একটি উঁচু লনে প্রার্থনার জন্য যাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর অনুগামীরা। সেই সময়ই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় নাথুরাম গডসে।
৩. গডসেকে প্রথম পাকড়াও করেছিলেন হার্বাট রেইনার জুনিয়ার। তিনি ছিলেন তৎকালীন দিল্লিতে অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাসের ভাইস কনসাল। সেনা বাহিনীর সদস্যরা না আসা পর্যন্ত গডসেকে পাকড়াও করে রেখেছিলেন তিনি।
৪. গান্ধীজিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দ্রুত বিড়লা হাইসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানেই কিছুক্ষণ পরে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে গান্ধীকে হত্যার ষড়যন্ত্র এর আগেও হয়েছিল। কিন্তু তখন যড়যন্ত্রীরা সফল হয়নি। নাথুরাম গডসের দলই ২০ জানুয়ারি একটি জনসভায় গান্ধীকে হত্যার জন্য পরপর দুটি গ্রেনেড ছুঁড়েছিল গডসের দলের সদস্যরা। কিন্তু সেই সময় প্রবল ভিড়ের কারণে তারা সাফল্য লাভ করেনি। তবে মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই গান্ধীর ওপর দ্বিতীয় হামলা হয়। তাতেই সফল হয় গডসেরা।
৫. গডসে ও তাঁর সহযোগীরা গান্ধীকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলল ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি থেকেই। সেই সময়ি ভারত-পাকিস্তান নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। মুসলিম প্রীতির কারণে গান্ধী-গডসে দর্শনের সংঘাত শুরু হয়। হত্যার পরিকল্পনার জব্য তারা গান্ধীর গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল।
৬. গান্ধীকে গুলি করা হয়েছিল একটি বেরেটা এম ১৯৩৪ পিস্তল দিয়ে। সেটি গডসে ও তাঁর সহযোগী নারায়ণ আপ্তে কিনেছিলেন। গান্ধীকে নিয়ে স্মৃতি কথায় তাঁরই ভাইজি লিখেছেন, সেদিন বিড়লা হাইসের প্রার্থনায় গান্ধী নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১০ মিনিট পরে এসেছিলেন। সেই সময় গান্ধীর একদিকে ছিলেন তিনি নিজে। অন্যদিকে ছিলেন গান্ধীজি দত্তক নেওয়া কন্যা আভা। তাঁরা দেখেছিলেন খাঁকি প্যান্ট পরা এক মোটা যুবক গান্ধীর দিকে এগিয়ে আসছেন। মনুবেন বলেন তিনি ভেবেছিলেন এই যুবক গান্ধীর পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করতে চায়। কিন্তু তিনি সেই সময় সেই লোকটিকে সরিয়ে দেন। বলেন গান্ধীর দেরি হয়ে গিয়েছে।
৭. এরপরই গডসে রুদ্রমূর্তি ধারন করেন। মনুবেন বলেন, তাঁকে একপাশে ঠেলে সরিয়ে দেয়। তাঁর হাতে খাতা, জপমালা ছিল। সব নিয়েই টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান মাটিতে। তখনই তিনি পরপর চারটে গুলির আওয়াজ শুনতে পান। আর শুনতে পান গান্ধীর কণ্ঠে হে রাম। মনুবেন লিখেছিলেন আভাবেনের কোলেই গান্ধীকে তিনি পড়ে থাকতে দেখেন। মাত্র তিন থেকে চার মানিটের মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়।
৮. বিকেল ৫টা ১৭ মিনিট আভাবেনের সাদা পোশাক রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। মনুবেন বলেন গান্ধীর চিকিৎসার জন্য সেই সময় কোনও চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। গুলি লাগার পরেও প্রায় ১০ মিনিট বেঁচে ছিলেন। একটি ফাস্টএইড বক্স পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু কোনও ওষুধ পড়েনি। নাথুরাম গডসের ছোঁড়া প্রথম গুলিটি লেগেছিল পেটের মাঝখানের ডানদিকে - নাভির ঠিক ওপরে। দ্বিতীয়টি পেটের মাঝখান থেকে মাত্র এক ইঞ্চি দূরে। তৃতীয় গুলিটি লেগেছিল ডানদিকে ৪ ইঞ্চি দুরে।
৯. নাথুরাম বিনায়ক গডসে। মহারাষ্ট্রীয়ান ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা ছিলেন ডাকঘরের কর্মী। ছোটবেলায় বাবামাচের কাছে থাকলেও পঞ্চম শ্রেণী থেকে তাঁর পড়াশুনা পিসির বাড়ি পুনেতে। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াশুনা করেন তিনি। হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবেই নিজের পরিচয় দিতেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সদস্য হন। তিনি ছিলেন হিন্দু মহাসভার সদস্য। যদিও গান্ধীর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছি।
১০. গান্ধী হত্যার মাত্র ২১ মাস পরেই নাথুরাম গডসেকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তার আগে গডসেকে সিমলার পিঠারহফে পঞ্জাব হাইকোর্টের বিচারের জন্য রাখা হয়েছিল। তবে গডসের দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ কিন্তু গান্ধী হত্যার পরে তার সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ রাখতে অস্বীকার করে।
আরও পড়ুনঃ
মুঘল গার্ডেন হয়ে গেল অমৃত উদ্যান, রাষ্ট্রপতিভবনের বাগান এই দিন থেকে খুলে দেওয়া হবে সাধারণের জন্য
রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা, কন্যাকুমারি থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত সেরা ১০টি বিতর্ক