সংক্ষিপ্ত

১৯৭৬ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মারা গিয়েছেন, এমনটাই মনে করেছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু, ৪৫ বছর পর কেরলের বাড়িতে ৯২ বছর বয়সী মা-এর কাছে ফিরে এলেন তাঁর ছেলে।

দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন ৯২ বছর বয়সী মা। বছর পর বাড়ি ফিরছে তাঁর ছেলে সাজাদ থাঙ্গাল। ছেলে ফিরতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরে গালে ধরে চুমু খেলেন বৃদ্ধা। জানালেন এই মুহূর্তটার জন্যই অর্ধেক জীবন ধরে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সবাই মনে করেছিল ১৯৭৬ সালে সেই সময়ের গ্ল্যামারাস দক্ষিণী অভিনেত্রী রানী চন্দ্রার সঙ্গেই এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সাজাদের। কারণ ওই ঘটনার পর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি। কিন্তু, মায়ের মন মানেনি। 

কেরলের কোল্লামের বাসিন্দা ছিলেন সাজাদ। ১৯৭২ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি ঘড় ছেড়েছিলেন। একটি জাহাজে করে পাড়ি দিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে (UAE)। সেখানে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনে স্টোর কিপার হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন সাজাদ থাঙ্গাল। শেষবার বাড়ি এসেছিলেন ১৯৭৬ সালে। ওই সাংস্কৃতিক সংগঠনের হয়ে কেরলে এসেছিলেন সাজাদ। সেই দলের অংশ ছিলেন চলচ্চিত্রাভিনেত্রী রানী চন্দ্রা। কিন্তু, ওই একই বছরে এক বিমানদুর্ঘটনায় রানী চন্দ্রার মৃত্যু হয়। ওড়ার পরপরই ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের উড়ানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। বিমানে থাকা সকলেরই মৃত্যু হয়েছিল। 

তারপর থেকেই আর সাজাদ থাঙ্গালের কোনও খোঁজ পায়নি তার পরিবার। অধিকাংশই ধরে নিয়েছিলেন যে  তিনি ওই উড়ানেই ছিলেন এবং দুর্ঘটনাতেই তাঁর মৃত্য়ু হয়েছে। কিন্তু, তা ঘটেনি। বিমানে তিনি ছিলেন না। কিন্তু, ওই দুর্ঘটনা থাঙ্গালের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সমস্ত রকম বন্ধন থেকে দূরে একেবারে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তাই তাঁর খোঁজও পাওয়া যায়নি। 

সপ্তাহে দুয়েক আগে এক টিভি অনুষ্ঠানে ৪৫ বছর পর তাঁর খোঁজ পান আত্মীয়রা। জানা যায়, তিনি জীবিত এবং বর্তমানে মুম্বইয়ের পানভেলের একটি বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। এরপরই তাঁর আত্মীয়রা অনেকে মিলে মুম্বাইয়ে এসে তাঁকে কেরলের বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন। গত সপ্তাহের শনিবার অর্থাৎ ৩১ জুলাই তারিখে দীর্ঘদিন পর মায়ের সঙ্গে দেখা হয় সাজাদ থাঙ্গালের। মা ও ছেলের এই পুনর্মিলনের সাক্ষী থাকতে গোটা গ্রামের মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তারা থাঙ্গালকে সম্বর্ধনা দেয় এবং এই উপলক্ষে একটি কেকও কাটা হয়। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক কভুর কুঞ্জুমন-ও। 

আরও পড়ুন - প্লেন দুর্ঘটনায় মৃত ব্রাজিলের চার ফুটবলার সহ ৬, শোকস্তব্ধ ফুটবল বিশ্ব

আরও পড়ুন - ২৮ জন যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশ থেকে উধাও রাশিয়ার বিমান, তল্লাশি শুরু করেছে প্রশাসন

আরও পড়ুন - উপকূলের দিকে ভেসে এল দেহাংশ, ইন্দোনেশিয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের খোঁজে যুদ্ধজাহাজ

আর এতদিন পরে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে ছেলে কী বলছেন? দ্য নিউজ মিনিট সাজাদকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে তিনি বলেছেন, 'আমি আর কী চাইতে পারি? অন্য কোন কিছুই আমাকে এর থেকে বেশি আনন্দ দিতে পারত না। ঈশ্বর চেয়েছেন বলেই এরকমটা ঘটল, সবকিছুর জন্যই ঈশ্বরের একটা পরিকল্পনা থাকে। আর তাঁর মা বলেছেন, এই দিনটির জন্যই তিনি সবসময় প্রার্থনা করতেন। অবশেষে, ভগবান তাঁর সেই প্রার্থনায় সাড়া দিয়েছে। মৃত্যুর আগে ছেলেকে আরও একবার দেখে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর, সেই ইচ্ছা তাঁর পূর্ণ হয়েছে।

 

YouTube video player