লাদাখে ক্রমশই বাড়ছে উত্তেজনা প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ভারতের অর্থনীতি অনেকটাই চিন নির্ভর চিনা পণ্যের ওপর কোপ পড়তে শুরু করেছে   

সীমান্ত সংঘর্ষ ঘিরে দু’দেশের মধ্যেকার রাজনৈতিক উত্তেজনার চরম অবস্থাতেও বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ভারতের অর্থনীতি চিনের সঙ্গে যতখানি গভীরে জড়িয়ে তাতে চিনের উপর ভারতের অর্থনৈতিক নির্ভরতা ভেঙে বেরিয়ে আসা কঠিন। 
তারপর চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ, চীনা থেকে কেনা পণ্য‌ ভারতের বন্দর থেকে বের হতে দেরি, চীনা পণ্যের ওপর আরও বেশি করে শুল্ক চাপানো এবং জাহাজ থেকে নামার আগে তার গুণগতমান যাচাই করে নেওয়া-সব ঘটনাই ঘটেছে। এমনকি চীনের থেকে পণ্য আমদানী বন্ধ করা বাস্তবে আত্মঘাতীর শামিল, একথাওবলেছিলেন অনেকে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স থেকে ওষুধের কাঁচামাল ও বিভিন্ন শিল্পজাত মেশিন সামগ্রী। 
তবে এও দেখা গিয়েছে; ২০১৯ সালে চীন থেকে কেনা পণ্যের বিল ছিল ৭০ বিলিয়ন ডলার। এরপরও দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ঘাটতি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। এই পরিস্থিতিতে মোদী চাইলেন স্বনির্ভর হয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে এবং সামগ্রিকভাবে আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে।
এদিকে ভারত চাইছে তার বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ ২০২৫ সালের মধ্যে তিনগুণ করে এক ট্রিলিয়ন ডলার করতে। এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অনেকটাই আবার নির্ভর করছে ভারতের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য। ভারতের রপ্তানি করা পণ্য কেনার ক্ষেত্রে চীনের একটা ভূমিকা রয়েছে কারণ শীর্ষে থাকা তিনটি দেশের অন্যতম হলো চীন।


 সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন সীমান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারতকে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে ভারতের অবস্থান আরও কঠোর করতে হবে। ভারতকে চীনের বাজারে ঢোকার সুযোগ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টার বক্তব্যে চীন নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি রয়েছে? কিন্তু চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করার সেই ক্ষমতা কি ভারতের আছে?
ভারতে চীন বিরোধী মনোভাব যখন তুঙ্গে তখন মোদির সরকার দু’দফায় দেড়শরও বেশি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। চীনা বিনিয়োগের ওপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। চীন থেকে রঙিন টিভি আমদানি নিষিদ্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এই সব পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ভারতকে এই পদক্ষেপ নিতে হবে, কারণ তথ্যের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং ক্রেতাদের আবেগকে প্রাধান্য দিতে হবে।
ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী চীনের সঙ্গে যে ১০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য হয় তার দুই-তৃতীয়াংশই চীনের পক্ষে। বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৫৮০০ কোটি ডলার। এই ঘাটতি নিয়ে দেশের সরকারের অস্বস্তি রয়েছে, অভিযোগ রয়েছে। সীমান্ত নিয়ে চরম বৈরিতা শুরু হওয়ার পর সেই অসন্তোষ এখন মাথা চাড়া দিয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে সরকারের অবস্থান যতটা কঠোর করার কথা বলছেন, বাস্তবে ভারতের সেই ক্ষমতা কতটা রয়েছে? অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, না চীনের ওপর কোনো শর্ত দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের নেই। চীন এখনও ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক পার্টনার, কিন্তু চীনের কাছে ভারত আদৌ তা নয়। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ভারতের কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই বাণিজ্যের ওপর তাদের যে নির্ভরতা, চীনের কাছে ভারতের বাজারের গুরুত্ব আদৌ ততটা নয়। ভারতে চীনের রপ্তানির পরিমাণের থেকে ভিয়েতনামের মতো ছোট দেশে, জাপানে অনেক বেশী।

"