সংক্ষিপ্ত
রাস্তার উপরে যেন সমুদ্রের ঢেউ। অটোয় যাওয়া যাত্রীরা রীতিমতো বেসামাল। এখানেই শেষ নয়, বেঙ্গালুরুর অভিজাত এলাকা ইয়ামলুরে জলের তলা কোটি কোটি টাকার অট্টালিকা, গ্যারজে জলে ডুব মেরেছে সব সিইও, সিওও-দের কোটি কোটি টাকার বেন্টলি, বিএমডবলু, মার্সিডিজ-সহ একাধিক গাড়ি। কেউ জল পেরতো চেপে বসেছেন জেসিবি-র হ্যাঙ্গারে। বলতে গেলে বেঙ্গালুরু এখন নজিরবিহীন জল যন্ত্রণার জীবন উদযাপন করছে।
দিন কয়েকের টানা প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন বেঙ্গালুরু। এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া দফতরের যা পূর্বাভাস তাতে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি চলবে। নতুন করে ভাসতে পারে কর্ণাটকের রাজধানী-সহ রাজ্যের অন্যান্য অংশ। মুষলধারের বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই জলমগ্ন বেঙ্গালুরুর রাস্তা। আশপাশের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স এবং বাড়িঘরেও জমেছে এক কোমর পর্যন্ত জল। বিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের লাইন। সৃষ্টি হয়েছে যানজটেরও। জলমগ্ন এলাকাগুলিতে রীতিমতো আটকা পড়েছেন বাসিন্দারা। তাদের উদ্ধার করতে সরকার থেকে মোতায়েন করা হয়েছে ছোট ছোট নৌকা, রবার বোট ও ট্রাক্টর।
জল জমার কারণে রেইনবো ড্রাইভ লেআউট, সানি ব্রুকস লেআউট, বেলান্দুর, ইকো বোর্ড এবং সারজাপুর রোডের আরও বেশ কিছু এলাকা এখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ।
মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্বাই জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরুর বেশ কিছু এলাকায় ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে বন্যা পরিস্থিতির জন এই রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিকেই দায়ী করেছেন বোম্বাই । সেই সঙ্গে জল জমার জন্য পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারকেও তোপ দাগতে ছাড়েননি। তাঁর অভিযোগ, অপরিকল্পিত নির্মাণ ও প্রশাসনিক গাফিলতির ফলে আজ বেঙ্গালুরুতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন - মঙ্গলবারও বদল নেই শহরের জলচিত্রে, জলমগ্ন বেঙ্গালুরুর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর তমতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা দেখিয়েছে সরকার । শহরবাসীর সুরক্ষার্থে ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে বেশ কিছু বিজ্ঞপ্তি ।
১। বেঙ্গালুরুর কিছু অংশে প্রাথমিক স্কুলগুলির পাশাপাশি হাই-স্কুলগুলিতেও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
২। অনেক তথ্য- প্রযুক্তি সংস্থা তাঁদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
৩। রাজ্যের তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বত নারায়ণ আইটি করিডোরে বন্যা নিয়ে আলোচনা বসছেন। বুধবার বিকেল ৫ টায় বিধানসভায় আইটি সেক্টরের নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করতে চলেছেন তিনি৷
৪। শেষ ৫০ বছরের ইতিহাসেও বেঙ্গালুরুতে এমন ভারী বর্ষণ বিরল । এমন প্রবল বৃষ্টিতে ফুঁসছে কর্ণাটকের ১৬২ হ্রদ। ২টি হ্রদের জল উপচে পড়েছে। এগুলি হল - বেলান্দুর এবং ভার্থুর। এই দুই হ্রদের আশেপাশের আবাসিক এলাকা এখন প্লাবিত। এই সব এলাকা থেকে বাসিন্দাদের বের করে আনতে মোতায়েন করা হয়েছে ট্রাক্টর ও নৌকা ।
৫। বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট অপারেশনও ভারী বৃষ্টির কারণে বেশ কিছু সময় যাবত বন্ধ ছিল। তা এখন পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ।
৬। শহরে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বোম্বাই পরিস্থিতির জন্য পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের "দুর্নীতি"কেই দায়ী করেছেন। তারা লেক এলাকায় এবং ট্যাঙ্ক ব্যান্ড এলাকাগুলিতে বাফার জোনের "ডান-বাম-মাঝে" নির্মাণ কার্যক্রমের অনুমতি দিয়েছিল, যার ফলস্বরূপ এই প্লাবন।
৭। বেঙ্গালুরুর পানীয় জল সরবরাহ ভারী বৃষ্টিপাতের পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যা এখন আংশিকভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। টিকে হলির একটি পাম্পিং স্টেশন চালু করা হয়েছে এবং দ্বিতীয়টি পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই বলেছেন," যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।"
৮। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত যুক্ত একটি শিয়ার জোন সৃষ্ট করা হয়েছিল যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 4.5-5.8 কিলোমিটার উপরে তৈরি।
৯। রাজ্য সরকার শহরের বন্যা পরিস্থিতি পরিচালনা করতে ৩০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসন বেঙ্গালুরুতে সমস্ত হ্রদের জন্য স্লুইস গেট নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে যাতে ভারী বৃষ্টিপাতের সময় জলের ওভারফ্লো নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১০। বেঙ্গালুরুর মিউনিসিপ্যাটিলিটি শহরের 800 বর্গ কিমি এলাকার মধ্যে বন্যা শুধুমাত্র 56 বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বন্যা প্রতিরোধে বাকি অঞ্চলগুলির সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন - প্রবল বৃষ্টি বদলে দিল বেঙ্গালুরুর জীবন, অফিস হোক বা এয়ারপোর্ট একমাত্র ভরসা ট্রাক্টরই