সংক্ষিপ্ত

বাজেট অধিবেশ ২০২২-এর (Budget Session 2022) তৃতীয় দিনে, লোকসভায় নির্ধারিত সময়ের আগেই থামিয়ে দেওয়া হল মহুয়া মৈত্রের  (Mahua Maitra) ভাষণ। তার আগে আগুন ঝরালেন তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সাংসদ। 
 

বৃহস্পতিবার সংসদের বাজেট অধিবেশন ২০২২-এ (Budget Session 2022) লোকসভায় (Lok Sabha) কাঁপিয়ে দিলেন তৃণমূল (TMC) সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Maitra)। তবে, নির্ধারিত সময়ের আগেই তাঁর বক্তৃতা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু, তাতেও মহুয়া মৈত্রকে দমানো যায়নি। সংসদ ভবনের বাইরে দাঁড়িয়েই তাঁর বক্তৃতার বাকি অংশ শেষ করেন তিনি। তৃণমূল সাংসদ আরও অভিযোগ করেন, লোকসভার অধ্যক্ষের চেয়ার থেকে তাঁকে, 'না রেগে' বক্তৃতা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। 

সংসদের বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর বক্তব্য রাখার জন্য তাঁকে ১৩ মিনিট সময় দিয়েছিলেন লোকসভার অধ্যক্ষ। কিন্তু, সেই পুরো সময় তাঁকে বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই থামিয়ে দেওয়া হয়। তখনও তাঁর আরও দুই প্যারাগ্রাফ বলা বাকি ছিল। সেই অংশটাই তিনি বাধ্য হয়ে সংসদের বাইরে এসে বলেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, কোনও সাংসদ লোকসভায় তাঁর বক্তৃতা রেগে রেগে দেবেন না খুশি খুশি মেজাজে দেবেন, তা লোকসভার অধ্যক্ষ ঠিক করে দিতে পারেন না।  

আরও পড়ুন - Pegasus Snoopgate: পেগাসাস নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা, অথচ তদন্তে সহায়তা করলেন মাত্র ২ জন

আরও পড়ুন - লোকসভায় কী হতে চলেছে, তাই নিয়ে 'সাহসী' পোস্ট তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের

আরও পড়ুন - Mamata in Nadia: প্রশাসনিক বৈঠকেই মহুয়াকে জোর ধমক মমতার, কেন হঠাৎ রেগে গেলেন তৃণমূল সুপ্রিমো

তার আগে লোকসভায় একেবারে আগুনে ভাষণ দেন মহুয়া। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে একাধিক জায়গায় নেতাজির (Netaji Subhas Chandra Bose) কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নেতাজি বলেছিলেন সমস্ত ধর্মের প্রতি ভারত সরকারের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ মনোভাব থাকা উচিত। এই কথা জানিয়ে তিনি তোলেন হরিদ্বার ধর্ম সংসদের (Haridwar Dharma Sangsad) প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, মুসলিম গণহত্যার (Muslim Genocide) আহ্বান জানানো ওই ধর্মসভাকে কি নেতাজি অনুমোদন দিতেন? ১৯৩৮ সালে কুমিল্লায় (Kumilla) সুভাষচন্দ্র বসুর দেওয়া এক বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত করে মহুয়া মৈত্র বলেন, 'সাম্প্রদায়িকতা সর্বাত্মক নগ্নতায় তার কুৎসিত মাথা তুলেছে'।

তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, নেতাজির গঠিত ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর বা আইএনএ (Indian National Army) প্রতীক ছিল টিপু সুলতানের (Tipu Sultan) ঝাঁপানো বাঘ। আর সেই টিপু সুলতানকেই মোদী সরকার পাঠ্যবই থেকে মুছে দিয়েছে মোদী সরকার। আইএনএ-র নীতিবাক্য লেখা হয়েছিল তিনটি উর্দু (Urdu) শব্দ দিয়ে - ইত্তেহাদ, ইতমাদ এবং কুরবানি (ঐক্য, বিশ্বাস এবং ত্যাগ)। এই সরকারই জম্মু ও কাশ্মীরের প্রথম ভাষা এবং সরকারি ভাষা হিসাবে উর্দুর বদলে হিন্দি (Hindi) চালু করেছে। তিনি আরো দাবি করেন বিজেপি সরকার দেশের ইতিহাস পাল্টে দিতে চাইছে। 

মহুয়া মৈত্র বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণটি বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের একটি মূল্যায়ন। তিনি সেই মূল্যায়নের সঙ্গে একেবারেই একমত নন। তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ ভারতের নাগরিকরা এই দেশের সংবিধানকে তাঁদের প্রাণে ধরে রাখবেন, ততক্ষণই জীবিত থাকবে আমাদের সংবিধান। অন্যথায়, এটা স্রেফ সাদা কাগজের টুকরোয় কালো কালিতে কিছু লেখা ছাড়া কিছু নয়। কোনও সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার চাইলেই তা ঘসে ধূসর বর্ণ করে দিতে পারে। এই সরকার ইতিহাস পাল্টাতে চায়। কারণ তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীত এবং তারা বর্তমানকে অবিশ্বাস করে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভারতের সামনে সবথেকে বড় প্রশ্ন হল, আমরা কী ধরনের প্রজাতন্ত্র চাই, কী ধরণের দেশ চাই? তৃণমূল সাংসদ দাবি করেন, পরস্পরবিরোধী বাস্তবতা নিয়েই এগিয়ে চলে ভারত। র সাথে আরামদায়ক। আহমেদাবাদের এক জৈন পরিবারের ছেলেও বাড়ি থেকে লুকিয়ে রাস্তার দোকান থেকে কাটি কাবাব উপভোগ করে। কিন্তু, এই ভারতকে মোদী সরকার ভয় পায় বলে দাবি করেন মহুয়া। সেই কারণেই গুজরাটের মিউনিসিপ্যালিটিগুলিতে আমিষ খাবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৮০ শতাংশ (হিন্দু জনসংখ্যা) বনাম ২০ শতাংশের (মসলমান জনসংখ্যা) লড়াই লাগিয়ে, মোদী এই সরকার আমাদের প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।