সংক্ষিপ্ত
ভোপালের স্মৃতি ফিরে এল বিশাখাপত্তনমে
শ্বাসকষ্ট আর চোখের জ্বালা স্থানীয় বাসিন্দাদের
প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া এলাকা ছেড়ে পালাতে থাকেন
রাত আড়াই নাগাদ গ্যাস বার হতে শুরু করেছিল বিশাখাপত্তনমের এলজি পলিমার ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড কারখানা থেকে। লকডাউনের কারণে গত মার্চ মাস থেকেই বন্ধ ছিল এই কারখানা। সম্প্রতীক কারখানা চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। প্রথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে কারখানার অবস্থিতি দুটি ৫হাজার টনের ট্যাঙ্ক থেকেই গ্যাস বেরিয়েছিল। কিন্তু কী করে গ্যাস নির্গমন হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রশানিক এক কর্তার কথায় বেশ কয়েকদিন কারখানা বন্ধ ছিল। যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করার সময়ই এই দুর্ঘটনা ঘেটে। তবে দীর্ঘ সময় পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ইতিমধ্যেই অভিযোগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় ভোর রাত সাড়ে তিনটে থেকেই তাঁরা তীব্র গন্ধ পাচ্ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে চোখেও জ্বালা করছিল। সময় যত যায় সেই গন্ধ ক্রমশই প্রকট হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত কূট গন্ধ আর অস্বস্তি নিয়েই অনেকে প্রাণ ভয়ে পাতালে শুরু করেন। একই সঙ্গে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছেন প্রায় তিন বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে গ্যাসের ঝাঁঝাল গন্ধ। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায় ভোর রাত ৩টে ৩০ মিনিট থেকেই তার পরিবারের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন গ্যাস লিক হওয়ায় শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় মৃত্যু হয়েছে চার জনের। প্রাণ বাঁচাতে পালাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। কারণ অনেক মানুষই মোটরবাইকে করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দেখা গেছে প্রবল শ্বাসকষ্ট হওয়ায় রাস্তাতেই তাঁরা পড়েগিয়েছিলেন। অনেক মানুষ রাস্তাতেই জ্ঞান হারিয়েছিলেন। মৃতের তালিকায় রয়েছে একটি শিশুও।
বিকে নায়েক জেলা হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে প্রায় ১০০০ মানুষ অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষকে ভেন্টিলেটারের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়েগেছে। মূলত শিশু ও বয়স্ক মানুষদের বেশি শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাত আড়াইটে নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটলেও সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। সেই সময় শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রীতিমত প্রকট হয়। সমস্যা একটা সংকট জনক হয় যে অনেক পশুরও মৃত্যু হয়েছে। একের পর এক পাখিরও প্রাণ গেছে কূট গন্ধে। তবে সংস্থার পক্ষে জানান হয়েছে যে গ্যাসটি বেরিয়েছিল সেটি কোনও বিষাক্ত গ্য়াস নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করোনা সংকট ভুলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও চিকিৎসকরা তৎপর হন।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয়দের বার বার মুখে জলের ঝাপটা দিতে বলা হয়। পাশাপাশি ভিজে কাপড় দিয়ে বারবার মুখ পরিষ্কার রখার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে মাস্ক পরারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে গ্রেটার বিশাখাপত্তনম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশেনের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুনঃ বিশাপত্তনমে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, পাশে থাকার বার্তা প্রধানমন্ত্রী ও রাহুল গান্ধীর ...
বিশাখাপত্তনের কারখানাটি ১৯৯৭ সালে দক্ষিন কোরিয়ার একটি সংস্থা অধিগ্রহণ করে। কিন্তু এদিনের দুর্ঘটনা ১৯৮৪ ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। যে দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়েছিল ২০০ মানুষের। বিকলাঙ্গ করে দিয়েছিল অনেককে।