সংক্ষিপ্ত
jরাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। গত মাসে সরকারের কাছে এমনই রিপোর্ট পেশ করেছে জাতীয় আইন কমিশন।
কাশ্মীর থেকে কেরল পর্যন্ত গোটা ভারতকে একত্র রাখার জন্য ঔপনিবেশিক যুগের রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রয়োজন। জানিয়েছেন আইন প্যানেলের প্রধান ঋতু রাজ অবস্তি। মঙ্গলবার তিনি বলেন গোটা দেশ জুড়েই ব্রিটিশ আমলের রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল করার দাবি উঠেছে। কিন্তু গোটা দেশের পরিস্থিতি বিচার করে ভারতের নিরাপত্তা আর অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য এটি এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, কাশ্মীর থেকে কেরলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই এই কথা বলেছেন তিনি।
গত বছর মে মাসে জারি করা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর বর্তমানে স্থগিত আইনটি ধরে রাখার জন্য প্যানেলের সুপারিশের পক্ষে সেই সময় তিনি বলেছিলেন, এর অপব্যহার রোধ করার জন্য যথেষ্ট সুরক্ষা প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেছেন, বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন ও জাতীয় সুরক্ষা আইনের মত বিশেষ আইনগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে। তাই রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধকে ঢাকা যায় না। সেইজন্য রাষ্ট্রদ্রোহ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট আইনটি এখনও প্রয়োজন রয়েছে।
বিচারপতি অবস্তি জোর দিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ব্যবহার বিবেচনা করার সময় প্যানেলের নজরে পড়েছে কাশ্মীর থেকে কেরল ও পাঞ্জাব থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে ভারতের একতা ও অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রয়োজনীয়। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন একটি ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার হিসেবে এটি বাতিল করার কোনও বৈধ ভিত্তি এখনও পর্যন্ত নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি-সহ কয়েকটি দেশে এই বিষয়ে তাদের নিজস্ব আইন রয়েছে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। গত মাসে সরকারের কাছে এমনই রিপোর্ট পেশ করেছে জাতীয় আইন কমিশন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির (IPC) 124A ধারা-র অপব্যবহার রোধ করার জন্য সুরক্ষার সঙ্গে এটি আরও কিছু দিন রেখে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। এই আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির ওপর একাধিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল একাধিক অভিযোগ করছে। বিরোধী কণ্ঠস্বর রোধ করার পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে দমিয়ে রাখার জন্য আই আইন প্রয়োগ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিরোধী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ উড়িয়ে দিতেই আইন কমিশনের কাছে পাঠান হয়েছিল।
যদিও সরকার বলেছে, আইন কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে আরও আলোচনা ও পরামর্শ করবে। তারপরই প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সুপারিশগুলি প্ররণাদায়ক কিন্তু বাধ্যতামূলক নয় বলেও জানিয়েছে কেন্দ্র। তবে কংগ্রেসের অভিযোগ, সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে আরও কঠিন আর কঠোর তৈরি করতে চায়।
তবে অবস্থি সুপারিশে যে 'প্রক্রিয়াগত সুরক্ষা'র কথা বলেছেন তারও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, প্রথমিক তদন্ত হবে পরিদর্শক বা তার উপরের পদমর্যাদার একজন পুলিশ অফিসারের অধীনে। ঘটনার পর থেকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করতে হবে। এই বিষয়ে এফআইআর দায়েরের অনুমতির জন্য উপযুক্ত সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে, যদি উপযুক্ত সরকারী কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের কমিশনের বিষয়ে কোন যুক্তিযুক্ত প্রমাণ খুঁজে পায়, তবে এটি অনুমতি দিতে পারে। অনুমতি দেওয়ার পরেই ১২৪ এ ধারার অধীনে এফআইআর করা হয়। আইপিসি দায়ের করা হবে। তিনি আরও বলেন প্যানেল শাস্তি বাড়ানোর কোনও সুপারিশ করেনি।