সংক্ষিপ্ত
বাতাখ মিয়া আনসারির দ্বিতীয় প্রজম্ম জানিয়েছেন, ইতিহাসের পাতায় তাদের দাদুকে কখনই প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। তাতে তারা কিছুটা হতাশ।
গান্ধীজিকে হত্যা করেছিলেন নাথুরাম গডসে। এটাই সত্য। কিন্তু একটা সময় বিহারে ভ্রমণের সময়ও তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই সময় তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন বাতাখ মিয়া আনসারি। তিনি ছিলেন একজন বাবুর্চি। মহাত্মা গান্ধীর স্মরণ গান্ধী জয়ন্তু ও বিশ্ব আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস উদযাপন করা হয়। গান্ধী জয়ন্তীর সেই সময়ই বাতাখ মিয়ার পরিবার থাকে অন্ধকারে। বলা যেতে পারে সেই বাতাখ মিয়ার কথাই ভুলে গেছে ভারতীয় । সালটা ছিল ১৯২৭। অসহযোগ আন্দোলনের সেই সময় চম্পারণে তিনি গান্ধীজির জীবন রক্ষা করেছিলেন।
বাতাখ মিয়া আনসারির দ্বিতীয় প্রজম্ম জানিয়েছেন, ইতিহাসের পাতায় তাদের দাদুকে কখনই প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। তাতে তারা কিছুটা হতাশ। ১৯২৭ সালে ১৩ এপ্রিল গন্ধীজি ব্রিটিশদের অত্যাচারের মুখোমুখি হওয়া নীল চাষিদের সঙ্গে দেখা করতে চম্পারণে গিয়েছিলেন। সেখানে গান্ধীজি স্থানীয়দের সমস্যার কথা শোনেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল অনেক প্রতিনিধি। সেই সময় গান্ধীজি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একটি বড় আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবছিলেন। মহাত্মার পদক্ষেপ দেখে ইন্ডিগো কারখানার আরইউন তাঁকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমন্ত্রণটি মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। পরিকল্পনা ছিল মহাত্মার খাবারে বিষ মিশিয়ে দেওয়া।
মতিহারী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সিসওয়া আজগারির বাসিন্দা বাতাখ মিয়াঁ আনসারী ছিলেন আরউইনের বাবুর্চি। তিনি অত্যান্ত অল্প টাকা বেতন পেতেন। বাবুর্চিতে আরউইন গান্ধীজির খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর তা পছন্দ হয়নি। কিন্তু সাহেবের নির্দেশ অমান্য করার কোনও উপায় ছিল না।
শেষপর্যন্ত বাতাখ মিয়াঁ একগ্লাস দুধে বিষ মিশিয়ে গান্ধীজির কাছে নিয়ে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গান্ধীজি তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বাতাখ মিয়াঁ আনসারী আরউইনের চক্রান্তের কথা জানান। তাতে সাহেবের চক্রান্ত ভেস্তে যায়।
তারপরই বাতাখ মিয়াঁ তার চাকরি হারান এবং অকথ্য দুর্দশার সম্মুখীন হন। তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করা হয় এবং তার বাড়ি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। বাতাখ মিয়া ১৭ বছর জেলে কাটিয়েছেন। চম্পারণে মহাত্মা গান্ধীর আগমনের স্মৃতি অনেক বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে এবং তবুও এর কোনোটিতেই বাতাখ মিয়াঁ এবং তার পরিবারের আত্মত্যাগের ঘটনা অন্তর্ভুক্ত নেই।গান্ধীর আত্মজীবনীতেও আনসারির স্থান নেই; বা 'মহাত্মা গান্ধী ইন চম্পারণ' বইতেও এর উল্লেখ নেই ।
বাতাখ মিয়াঁ আনসারির নাতি চিরাগ আনসারী, তাঁর দাদুর প্রতি ইতিহাসবিদদের অবহেলার কথা শুনে বিস্মুত। তাঁর দাবি, 'এভাবে যদি অন্য কেউ গান্ধীজির প্রাণ রক্ষা করত তাহলে তাঁকে ভুলে যাওয়া হত না।' চিরাগ আনসারি আওয়াজ-দ্য কন্ঠকে বলেছেন যে রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ১৯৫৭ সালে মতিহারিতে একটি জনসভায় এসেছিলেন। সেখানে বাতাখ মিয়াও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে রাজেন্দ্র প্রসাদ মঞ্চ থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন, "বাতাখ ভাই ক্যাসে হো? (ভাই বাতাখ, কেমন আছেন?)"। তিনি তাকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। দিল্লিতে ফিরে রাষ্ট্রপতি তার ছেলে জান মিয়া আনসারিকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আমন্ত্রণ জানান। রাজেন্দ্র প্রসাদ বিহার সরকারকে একটি চিঠি লিখে বাতাখ মিয়াঁ আনসারিকে ৩৫ একর জমি দিতে বলেছিলেন। আদেশটি কখনই কার্যকর হয়নি। চিরাগ জানান ১৯৫৫ সালে আবার পরিবারকে ৫০ একর জমি দেওয়ার প্রস্তাব আসে। যাইহোক ১৯৫৮ সালে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পরে বিহার সরকারকে আবারও ৩৫ একর জমি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আনসারি পরিবারের জন্য তাগের গ্রামে মাত্র ৫ একর জমি বরাদ্দ।
চিরাগ বলেন সবাই ভুলে গেছে সেই মানুষটিকে যে বাপুর জীবন বাঁচিয়েছিল এবং এর জন্য কষ্ট পেয়েছিল। প্রতি বছর তার মাজারে একটি অনুষ্ঠান হয়, কিন্তু সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি সেখানে যান না। বাতাখ মিয়াঁর তিন পুত্র ছিল: রশিদ মিয়াঁ, শের মোহাম্মদ মিয়াঁ এবং জান মোহাম্মদ মিয়াঁ। আজও তাদের সন্তানরা ক্ষেতমজুর হিসেবে কাজ করে এবং দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়। তবে পরিবারটি এখনও আশাবাদী। তারা এখনও স্বপ্ন দেখে বাতাখ মিয়াকে যোগ্য সম্মান দেওয়া হবে।