সংক্ষিপ্ত
চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে সরকারের দাবিতে ধরা পড়েছিল বড়সড় অসঙ্গতি
এবার করোনার দেশজ টিকা তৈরির সময় নিয়েও তেমনটাই ঘটল
রবিবার এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেও পরে সংশোধন করল পিআইবি
এতে করোনা টিকার সময়সীমা নিয়ে বিতর্ক আরও বেড়েছে
ভারতে চিন সেনার অনুপ্রবেশ করেছে কি করেনি, তাই নিয়ে গত মাসে তিব্র বিতর্কে জড়িয়েছিল মোদী সরকার। বিদেশ মন্ত্রক চিন সেনার অনুপ্রবেশের দাবি করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন 'কেউ ভারতের মাটিতে পা রাখতে পারেনি'। করোনাভাইরাসের টিকা কবে বাজারে আসবে, তাই নিয়েও প্রায় একই রকম ধাঁধায় জড়িয়ে পড়ছে কেন্দ্র। দেশিয় কোভিড-১৯ টিকা বাজারে আসবে ১৫ অগাস্ট, আইসিএমআর এই কথা জানানোর পরের দিনই, রবিবার প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বা পিআইবি ভারতীয় টিকাগুলির বিষয়ে একটি নিবন্ধে সম্পূর্ণ একটা অন্য সময়সীমার কথা জানালো। কিন্তু, খানিক পরেই আবার নিবন্ধ থেকে সেই অংশটি বাদ দেওয়া হল। কাজেই চিন সেনা ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল কি করেনি, এই নিয়ে ধন্দের মতো ভারতীয় করোনা টিকা কবে বাজারে আসবে, তাই নিয়েও একই রকম বিতর্ক তৈরি হল।
বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা ওই নিবন্ধে, পিআইবি প্রথমে জানিয়েছিল মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে ভারতীয় সম্ভাব্য করোনা টিকাগুলি, সেগুলির কোনওটিরই ২০২১ সালের আগে বাজারে আসার মতো জায়গায় পৌঁছনোর সম্ভাবনা নেই।
নিবন্ধটি লিখেছেন ডক্টর টিভি ভেঙ্কটেশ্বরণ। ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় থাকা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বিজ্ঞান প্রসার এই নিবন্ধটি প্রকাশ করে। ভারতে তৈরি করোনার সম্ভাব্য টিকাগুলি কীভাবে কাজ করে তাই নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই নিবন্ধে। পিআইবি, রবিবার দুপুর ৩.২০-তে প্রথম নিবন্ধটি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু, আইসিএমআর ১৫ অগাস্ট ভারতে তৈরি করোনা ভ্যাক্সিন বাজারে এসে যাবে বলার পর, সরকারের প্রকাশিত আরেক নিবন্ধে কীভাবে সেই সময়সীমা ২০২১-এ চলে গেল সেই নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়। এরপরই বিকাল ৫.৪০-এ নিবন্ধটি সংশোধন করে ফের প্রকাশ করে পিআইবি। দেখা যায়, সংশোধিত নিবন্ধে সম্ভাব্য টিকাগুলির অগ্রগতি নিয়ে লেখা অনুচ্ছেদটিতে পরিবর্তন করা হয়েছে।
মূল নিবন্ধে অর্থাৎ যা ৩.২০-তে প্রকাশ করা হয়েছিল সেখানে, ওই অনুচ্ছেদের শেষ দুটি বাক্যে বলা হয়েছিল, বিশ্বজুড়ে ১৪০টি করোনা টিকা তৈরির কাজ চলছে। তারমধ্যে ১১টি মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এই ১১টির মধ্যে রয়েছে ভারতীয় গবেষকদের তৈরি দুটি টিকা - কোভাক্সিন এবং জাইকোভ-ডি। কিন্তু এদের কোনটিরই '২০২১ সালের আগে ব্যাপক অর্থে ব্যবহারের জন্য তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই'।
সংশোধিত নিবন্ধে পিআইবি-র পক্ষ থেকে ঠিক কবে ভ্যাকসিনগুলি বাজারর আসতে পারে সেই সম্পর্কে লেখার অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়। পরিচয় গোপন রেখে পিআইবির এক বিশিষ্ট কর্তা এই বিষয়ে জানিয়েছেন, নিবন্ধটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অনুমোদিত নয়। যে অংশটি মুছে ফেলা হয়েছে সেটি অসাবধানতার বশেই প্রথমে প্রকাশ করা হয়েছিল। করোনার টিকাগুলি কীভাবে কাজ করে সেটাই ছিল ওই নিবন্ধের বিষয়। কাজেই কবে টিকা বাজারে আসবে সেই অংশটি প্রাসঙ্গিক নয়।
এই বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের সচিব আশুতোষ শর্মা মন্তব্য করতে চাননি। 'জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ এবং আইসিএমআর টিকাগুলির বিষয়ে জানাতে পারে', বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। নিবন্ধটির লেখক তথা বিজ্ঞান প্রসার-এর বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডক্টর ভেঙ্কটেশ্বরণ জানিয়েছেন তাঁর নিবন্ধের মূল বিষয় ছিল ভ্যাকসিনগুলি কীভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করা। তিনি বলেছেন, 'সম্ভবত পিআইবি ভেবেছে, টিকাগুলির প্রস্তুতির সময়সীমা তাতে অন্তর্ভুক্ত করার দরকার নেই'। ওই সময়সীমা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত অনুমানের ভিত্তিতে লিখেছিলেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বিষয়টি মেনে নিলেও সমালোচকরা এই নিয়ে সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছেন না। ১৫ অগাস্ট টিকা আসবে, আইসিএমআর-এর এই ঘোষণা নিয়েই বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়েছিল। এভাবে কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সময় বেঁধে দেওয়া যায় কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। রবিবার অবশ্য আইসিএমআর জানায়, ওই সময় বাঁধা হয়েছে লাল ফিতের জট যাতে সহজে কাটে তার জন্য। এই নিবন্ধ প্রকাশ নিয়ে সেই বিতর্ক আরও বাড়ল।