সংক্ষিপ্ত
- আমফানের ২ সপ্তাহ পার না করতেই ফের ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রুকুটি
- এবার দেশের পশ্চিম উপকূলের ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ
- বুধবার স্থলভাগে আছড়ে পড়বে এই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়
- ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডবে এবার তছনছ হতে পারে দেশের বাণিজ্য রাজধানী
এমনিতেই করোনা সংক্রমণে কাবু দেশের বাণিজ্য রাজধানী। ভারতের মেট্রো শহরগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগী রয়েছে মায়ানগরীতে। ইতিমধ্যে মুম্বইতের আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পৌঁছে গেছে ৪০ হাজারের কাছাকাছি। তার মধ্যে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়েছে। যা দেশের মেট্রো শহরগুলিতে করোনা সংক্রমণে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাজধানীর দিল্লির মোট আক্রান্তের তুলনায় বেশি। আর এই পরিস্থিতিতেই মুম্বইছে তছনছ করে দিতে চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ।
গত ২০ ডিসেম্বর সুপার সাইক্লোন আমফানের তাণ্ডব দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা। ধুয়ে মুখে সাফ হয়ে গিয়েছে সুন্দরবন। আমফানের ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পায়নি তিলোত্তমা কলকাতাও। শহরের একাধিক জায়গায় ভেঙে পড়েছে গাছ। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল গোটা শহর। কার্যত পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থা এক লহমায় তছনছ করে দিয়ে গিয়েছিল আমফান। বঙ্গোপোসাগর থেকে জন্ম নিয়ে এই ঘূর্ণিঝড় কার্যত গোটা দক্ষিণবঙ্গকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ছিল ১৬০ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। সর্বোচ্চ ২৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়ও বয়ে গিয়েছে আমফান। সুপার সাইক্লোন মাফানের সেই দগদগে ক্ষত এখনও যন্ত্রণা দিচ্ছে, তার মধ্যে এবার দেশের পশ্চিম উপকূল লন্ডভণ্ড করতে এগিয়ে আসছে আরেক ভয়াল ঘূর্ণিঝড় 'নিসর্গ'।
দেশের মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৩ জুন, অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যায় আরব সাগরের উপকূলে ঘণ্টায় ১০৫ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে উত্তর মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাতের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে এই সুপার সাইক্লোন 'নিসর্গ'। দেশের বাণিজ্য রাজধানী মুম্বই থেকে আর মাত্র ৭০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ‘নিসর্গ’। আর গোয়া থেকে রয়েছে ৪০০ কিলোমিটার দূরে। সুরাট থেকে ৯২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর নিম্নচাপ হিসাবে অবস্থান করছে এটি।
হাওয়া অফিসের দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, পূর্ব মধ্য আরব সাগর ও পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগরে পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হবে । পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেটি ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেবে। আবহওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে বুধবার স্থলভাগে আছড়ে পড়বে নিসর্গ। যার প্রভাব থাকবে বৃহস্পতিবারেও। ঘূর্ণিঝড়ের জেরে প্রবল বেগে ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুরুতে আরব সাগরের বুক চিরে উত্তর দিকে বয়ে যাবে নিসর্গ। তারপর উত্তর পূর্বে বাক নিয়ে উত্তর মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাতের সমুদ্র উপকূলের মাঝখানে হরিহরেশ্বরে আছড়ে পড়বে এই ঘূর্ণিঝড়। যার ফলে মুম্বই ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোয়া ও কেরল, দমন ও লাক্ষাদ্বীপও। হাওয়া অফিস বলছে, বুধবার সন্ধ্যায় যখন সমুদ্র উপকূল গ্রাস করবে নিসর্গ, তখন হাওয়ার গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ১১৫ থেকে ১২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। যার দরুন প্রবল বৃষ্টিপাত হবে গোয়া, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও কেরলে।
আরও পড়ুন: সংক্রমণের সংখ্যা ছাড়াল ১ লক্ষ ৯০ হাজার, আক্রান্ত দেশের তালিকায় সপ্তমে উঠে গেল ভারত
আইএমডির ডিরেক্টর মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, গোটা মুম্বইকে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের । মুম্বই ছাড়াও থানে, নভি-মুম্বই, পানভেল, কল্যাণ-দমবিভলি, মীরা-ভয়ানদের, ভসাই-বিহার, উল্লাসনগর, বদলাপুর, অম্বেরনাথের মতো শহরও ক্ষতিগ্রস্থ হওযার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে ।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে কেরল, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত উপকূলের মৎস্যজীবিদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিশেষত মহারাষ্ট্র ও গুজরাত উপকূলে জারি হয়েছে রেড অ্যালার্ট। মৌসম ভবনে ঘূর্ণিঝড়ের দায়িত্বে থাকা সুনিতা দেবী জানিয়েছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠে উচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে। যা ঘূর্ণিঝড়ের পক্ষে অনুকূল। অর্থাৎ মহাপ্রলয়ের আগমনে উত্তাল হতে চলেছে আরব সাগর। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে সকলকে ঘরের মধ্যে থাকতে অনুরোধ করেছেন । মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । এর আগে শেষবার ১৮৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল মহারাষ্ট্রের ওপর। এরপর প্রায় ৩৯ বছর পর আবার সুপার সাইক্লোন হানা দিতে পারে মহারাষ্ট্রে।
আরও পড়ুন: হোয়াইট হাউসের সামনে মানুষের বিক্ষোভ, প্রাণ বাঁচাতে বাঙ্কারে লুকোলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ভারতের পূর্ব উপকূলের থেকে পশ্চিম উপকূল কম ঘূর্ণিঝড়প্রবণ। এর মধ্যে বেশির ভাগ ঘূর্ণিঝড়ই আবার হয় গুজরাতে। মহারাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড় খুব একটা আছড়ে পড়ে না। শেষ বার ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ফিয়ান আঘাত হেনেছিল মহারাষ্ট্রে। ঘূর্ণিঝড় ফিয়ান এসেছিল নভেম্বরে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ১৮৯১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত জুনে কখনও কোনো ঘূর্ণিঝড় মুম্বই বা মহারাষ্ট্রে আঘাত হানেনি।
এদিকে আরব সাগরে তৈরি হওয়ার দরুন বাংলায় নিসর্গের প্রভাব তেমন পড়বেনা বলেই আশ্বস্ত করছেন আবহবিদরা। যদিও হাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে হালকা ও মাঝারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।