আসছে লকডাউন ৪, ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর সেই সঙ্গে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা বিস্তারিতভাবে তা সামনে আনবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সঙ্কটের এই সময়ে এটা টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছে অনেকে
করোনাভাইরাসের জেরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে বিশ্ব অর্থনীতি প্রবলভাবে ধাক্কা খেয়েছে। এর হাত থেকে ভারতও রেহাই পায়নি। ইতিমধ্যে ভারতীয় অর্থনীতিতে ক্ষতির অঙ্ক কয়েক হাজার লক্ষ কোটি টাকা। কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বহু মানুষের কর্মস্থলে পে-কাট করা হয়েছে। বহু মানুষ কাজ করলেও মাইনে পাচ্ছেন না। কারণ, ব্যবসায় মন্দা সংস্থাগুলিকে সঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। লকডাউন ৪-এর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এমন এক আশার আলো জ্বালিয়েছেন যে তাতে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে ভারতীয় অর্থনীতির পীঠস্থান দালাল স্ট্রিট। আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিস্তারিত ব্যাখ্যার মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারত অভিযান প্রকাশ্যে আসবে।
দালাল স্ট্রিট যেখানে মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জ অবস্থিত সেখানে এক শেয়ার লেনদেনকারী বিশেষজ্ঞ অম্বরীশ বালিগা। তিনি জানিয়েছেন, কেউ আশা-ই করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী এমন এক দুরন্ত আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করতে চলেছেন। বলতে গেলে সকলে যা আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রী তার থেকে বেশি কিছু করে দিয়েছেন। অম্বরীশ-এর মতে, এখন আমরা সকলেই অপেক্ষা করছি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিস্তারিত ঘোষণার জন্য। তাঁর মতে, আগামী কয়েকদিনেই এই প্যাকেজের প্রয়োগ দেশজুড়ে হতে শুরু করবে।
জিওজিত ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ভি কে বিজয়কুমার জানিয়েছেন, মানুষ অনেকদিন ধরেই এমন কিছু-র প্রত্যাশায় ছিল। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী তার থেকেও বেশিকিছু করে দিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে গেলে এতদিন পর্যন্ত যে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে তা ভারতের গড় বৃদ্ধির মাত্র ২.৫ শতাংশ। ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ তো সেখানে বিশাল কিছু বলেই মনে করছেন এই শেয়ার বিশেষজ্ঞ।
ভি কে বিজয়কুমার আরও জানিয়েছেন, যে এই আর্থিক প্য়াকেজ ভালোরকম বিশ্বাসযোগ্য এবং এরমধ্যে এমনকিছু বিষয় রয়েছে যা অর্থনীতির বাজার-কে শক্তি জোগাতে সক্ষম। কে আর চোকসি ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার্স-এর গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবেন চোকসির মতে, এই আর্থিক প্যাকেজে এমনকিছু রসদ রয়েছে যাকে অবজ্ঞা করা যায় না। এটা ভারতীয় অথর্নীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ বিনিয়োগ টানতে সক্ষম হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
চোকসি-র মতে, বলতে গেলে এটা একটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর প্যাকেজ এবং খুবই বিষয়ভিত্তিক। আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে যথাযথভাবে বহন করতে সক্ষম। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, এর সবচেয়ে ভালোদিকটা হল এতে জমি থেকে শুরু করে শ্রমিকদের সমস্যা, আইন মেনে লিকুইডিটি-র কথা বলা হয়েছে। এই পদক্ষেপ শিল্পক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে বাধ্য। চোকসির মতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে ভারতীয় অর্থনীতি এক গভীর সঙ্কটে পড়েছে। কিন্তু, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের প্রথম ধাপে যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকে করতে সক্ষম কারণ এখানে এমন একটা রোডম্যাপ আঁকা হয়েছে যা বিনিয়োগকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই পদক্ষেপ ভারতীয় অর্থনীতিকে একটা ভোল বদল ঘটাতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি। এর জেরে বহু উৎপাদনকারী সংস্থা ভারতের বুকে তাঁদের উৎপাদন শুরু করার পথে এগিয়ে যেতে পারে বলেও আশাবাদী চোকসি।
মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামনে নিয়ে আসেন আত্মনির্ভর ভারত অভিযান-এর ভাবনাকে। সেখানেই তিনি লকডাউন ৪ এবং সেইসঙ্গে আর্থিক মন্দা ও কাজ হারানোদের জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার একটি আর্থিক প্যাকেজ ঘোষমা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কথায় এই আর্থিক প্যাকেজ দেশের গড় বৃদ্ধির ১০ শতাংশ। যা এই মুহূর্তে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর্থিক প্যাকেজ। এই আর্থিক প্যাকেজে- মধ্যবিত্ত সমাজ থেকে শুরু করে সমাজের প্রান্তিক মানুষ, দিন-আনা দিন খাওয়া লোকজন, করদাতা এবং শিল্পমহল, কৃষক সমাজ, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রবলভাবে উপকৃত হবে বলেই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
