সংক্ষিপ্ত

বিগত ১০ বছরের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে যে, ভারতে গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে। আরও মারাত্মক ভয়ের বিষয় হল, পূর্ণবয়স্ক মানুষদের পেরিয়ে এই রোগ এখন ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে আরও বেশি করে। 

মাদ্রাজ ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) একসঙ্গে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে গত ১০ বছরের সময় নিয়ে, এই গবেষণায় ভারতের প্রতিটি রাজ্য থেকে ২০ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার মানুষকে নিয়ে একটি তথ্য উঠে এসেছে। ২০০৮ সালে ভারত সরকারের দ্বারা নির্মিত স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সূচকগুলির সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে ২০২১ সালে এসে দেশের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা করা হয়েছে। এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে একটি সাংঘাতিক ভয়াবহ চিত্র। সেই ভয়টি হল ডায়াবেটিস। অর্থাৎ, রক্তে অত্যধিক শর্করার উপস্থিতি। এর মধ্যে গোয়া রয়েছে সবার ওপরে। এখানে প্রায় ২৬.৪ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এরপর রয়েছে পুদুচেরি, ২৬.৩ শতাংশ আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে কেরল, সেখানে ২৫.৫ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

সারা বিশ্বব্যাপী প্রতি ১১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, এতে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অন্ধ হয়ে যাওয়া, কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়া এবং অঙ্গহানির ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এই রোগ সাধারণত টাইপ ১ এবং টাইপ ২-এ বিভক্ত। টাইপ ১ ডায়াবেটিস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে। এটি ভুলভাবে শরীরের ইনসুলিন তৈরির জায়গায় (বিটা-সেল) আক্রমণ করে, তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পর্যাপ্ত হরমোন পাওয়া যায় না। টাইপ ২ ডায়াবেটিসকে মূলত দরিদ্র জীবনযাত্রার একটি রোগ হিসাবে দেখা হয়, কারণ এর দ্বারা শরীরের চর্বি ইনসুলিনের কাজ করার পদ্ধতিকে নষ্ট করে দেয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, তুলনামুলকভাবে, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার এবং অরুণাচল প্রদেশের মতো রাজ্যগুলি, যেখানে ডায়াবেটিসের বৃদ্ধির বিষয়ে সাধারণ মানুষকে বারবার সতর্ক করা হয়েছিল, সেই রাজ্যগুলিতে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম। বিগত ১০ বছরের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে যে, ভারতে গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে বম্বে হাসপাতালের একজন পরামর্শক ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ রাহুল বক্সি জানিয়েছেন, “পরিবর্তনশীল জীবনধারা, জীবনযাত্রার উন্নত মান, শহরে স্থানান্তর হওয়া, অনিয়মিত কাজের সময়সূচি, অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকার অভ্যাস, মানসিক চাপ, দূষণ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং ফাস্ট ফুডের সহজলভ্যতা ভারতে প্রবলভাবে ডায়াবেটিস বাড়িয়ে তুলছে।”

তবে, এটাও ঠিক যে, ড. বক্সি বলেছেন, ডায়াবেটিস আর ধনী মানুষদের বা শহরে বসবাসকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি বলছেন, “আমি ছোট শহর থেকেও অনেক ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীকে আসতে দেখেছি। ডায়াবেটিসের তুলনায় প্রি-ডায়াবেটিসের প্রকোপ আরও বেশি এবং অনেক লোকের মধ্যে রোগটা দীর্ঘদিন ধরে বুঝতেই পারা যাচ্ছে না।” আরও ভয়ের বিষয় হল, পূর্ণবয়স্ক মানুষদের পেরিয়ে এই রোগ এখন ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে আরও বেশি করে। ড. বক্সি বলেছেন যে, তিনি গত কয়েক বছর ধরে অনেক কম বয়সি রোগী দেখছেন, “আমি আমার রোগীদের মধ্যে অনেক বাচ্চাকেও দেখেছি, যারা বাড়িতে নিজেদের বাবা-মায়ের দেখাদেখি তাদেরও গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করেছে এবং এতেই ধরা পড়েছে যে তাদের শরীরে শর্করার মাত্রা বেশি রয়েছে।”

আরও পড়ুন-

PM Modi US Visit 2023: মোদীর আমেরিকা সফরের আগে সারা বিশ্ব থেকে শুভেচ্ছাবার্তা
Panchayat Election News: রক্তাক্ত ভাঙড়ের পরিস্থিতি দেখতে পৌঁছলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস

Cyclone Biparjoy: বিশাল উঁচু ব্রিজ ছাপিয়ে সমুদ্রের রাক্ষুসে ঢেউ, ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’-এর সর্বগ্রাসী রূপ দেখল গুজরাট