সংক্ষিপ্ত

কর্ণাটকে ভোট রণাঙ্গণের দামাম বেজে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ-র বারবারই নির্বাচনী প্রচারে আসছেন কর্ণাটকে। এমনই এক সময়ে এশিয়ানেট নিউজ নেটওয়ার্কের মুখোমুখি অমিত শাহ। জানালেন কর্ণাটক নির্বাচন ২০২৩-এ বিজেপির ভবিষ্যৎ।

 

কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া বিজেপি। কর্ণাটকে ব্যস্ত কর্মসূচীর মধ্যেই অমিত শাহ কথা বলেন এশিয়ানেট নিউজ সুবর্ণার এডিটর অজিত হানামাক্কানাভার - এর সঙ্গে। সেখানেই তিনি সংরক্ষণ থেকে শুরু করে PFI ও জঙ্গি হানার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলেন।

এশিয়ানেট নিউজঃ সিতারামাইয়া বলছেন তিনি যদি সরকারে আসেন তিনি সংরক্ষণ পরিসর ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে দেবেন?

অমিত শাহঃ আপনি এটাও জানেন যে সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতির রায়ে এমনটা কিছুতেই হতে পারে না। তাই এই বিষয়ে সিতারামাইয়াকে কে বিশ্বাস করবে। তারা মেজাজ হারাচ্ছে তাই এমন কথা বলছে।

এশিয়ানেট নিউজঃ আপনি খাড়গের বক্তব্য কিভাবে দেখছেন? তিনি মোদীকে বিষধর সাপ বলেছেন?

অমিত শাহঃ শুধুমাত্র খাড়গেজি নয়, কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতাই মোদীজির বিরুদ্ধে কথা বলেন। তারা খুব নিচুস্তরের ভাষা ব্যবহার করে। একটা সময় সনিয়াজি মোদীকে মৃত্যুর সওদাগর বলেছিলেন। প্রিয়াঙ্কাজি মোদীকে নিচু জাতের ব্যক্তি বলেছিলেন। আগেও মোদীজিকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস নেতা হরিপ্রসাদ, মণিশঙ্কর আইয়ার। এখন নতুন সংযোজন খাড়গে। কিন্তু তারা যতই এজাতীয় কথা বলতে আমরা ততই শক্তি বৃদ্ধি করতে পারবে। আমি এটার একটা ভাল লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। যদিও তিনি তাঁর মন্তব্য থেকে সরে এসেছেন।

এশিয়ানেট নিউজঃ কর্মীদের মধ্যে কি এবার উৎসহ কম? টিকিট না পেয়ে কি অনেকেই ক্ষুব্ধ?

আমিত শাহঃ না, এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। আমি অনেকগুলি জায়গায় গিয়েছিলাম। ইয়াদাগিরি, সাকলেসপুরায় রোডশো দারুনভাবে সফল। যাইহোক টিকিট না পেয়ে রেগে গিয়ে অনেকে দল থেকে সরে গেছে- এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে দলের পক্ষে ভাল। এজাতীয় ক্ষোভ কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে অনেক বেশি। তাদের বড় নেতা সিতারামাইয়াও ক্ষুব্ধ- এটা কি ঠিক বলছি।

এশিয়ানেট নিউজঃ নির্বাচনের সময় কেন বিজেপি বারবার মোদীকে নিয়ে আসেছে? এটাই কংগ্রেসের বড় সমস্যার কারণ।

অমিত শাহঃ নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি বড় উৎসব। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী, তিনি দেশের যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন। কংগ্রেস মনমোহন সিং-এর অভ্যস্ত। যিনি কোনও সভায় যেতেন না। তার জন্য আমরা কী করতে পারি। মোদীর কথা মানুষ শুনতে আসে, তাই মোদীজি সভা করতে যান। মনমোহনের কথা মানুষ শুনতে চাইত না তাই মানুষ যেত না।

এশিয়ানেট নিউজঃ আমরা উন্নয়নের কথা বলছি, এখনও অনেক জায়গায় জলের অভাব রয়েছে।

অমিত শাহঃ দেখুন মাদাইতে সমস্যা সমাধানের মুখে। দেশের বাকি অংশ দ্রুত জল পৌঁছে দেওয়া হবে। আঞ্চলিক দলেরও এই সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসা উচিৎ। কিন্তু জেডিএস এই সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। কারণ এখানকার প্রত্যেকেই জানে জেডিএসকে ভোট মানে কংগ্রেসকেই ভোট দেওয়া।

এশিয়ানেট নিউজঃ বেঙ্গালুরুতে বৃষ্টি হতে বন্যার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই সমস্যার সমাধান কী?

অমিত শাহঃ বেঙ্গালুরুতে যেভাবে পরিকাঠামো উন্নয়ন হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি । এটি একটি উত্তরাধিকার সমস্যা। আপনার কেন্দ্রীয় সরকারের ৯বছর এবং রাজ্য সরকারের ৪বছর দেখতে হবে। আমি বলতে চাই এই নয় বছরে কী হয়েছে। এখন পর্যন্ত এখানে ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। মোদী আসার সময় বেঙ্গালুরুতে ৭ কিলোমিটার মেট্রো ছিল, আজ ৫৬ কিলোমিটার মেট্রো বাড়ানো হয়েছে। মেট্রোর প্রথম ১০০ কিলোমিটার ২০২৪-এর মধ্যে শেষ হবে। স্যাটেলাইট রিং রোড নির্মাণের কাজ শুরু। ফ্লাইওভার, আন্ডারপাসসহ অন্যান্য উন্নয়নের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র বেঙ্গালুরুতে এবং খরচ শুরু হয়েছে। বেঙ্গালুরুর উন্নয়নের জন্য গত ৯এবং ৪বছরে আমরা কোনও ভুল করিনি।

এশিয়ানেট নিউজঃ বেঙ্গালুরু শহর ছাড়া ওল্ড মহীশূর ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে আপনার পারফরম্যান্স কেমন। এবারও সেখানে দলটি লড়াই করছে বলে মনে হয়?

অমিত শাহঃ আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি। আগে জেডিএস ও কংগ্রেসের মধ্যে লড়াই হত। কিন্তু অন্যরা এই চার বছরে বুথ পর্যায়ে সংগঠন আরও শক্তিশালী করেছে। মাদিরায় জনসভাও করছেন মোদীজি। আমরা সেখানে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে লড়াই করছি। আশা করছি এবার আমাদের আসন আরও বাড়বে।

এশিয়ানেট নিউজঃ পিএফআই-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা- এটা কতটা বড় সিদ্ধান্ত ছিল। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে মোদী আসার পর এই ৯ বছর কত বড় পরিবর্তন হয়েছে?

অমিত শাহঃ এটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকরী। শুধু কর্ণাটক নয়, গোটা দেশ এর সুফল পাবে। কোনও সংগঠন দেশ ভাঙার চেষ্টা করতে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। এটা ভাল যে এখনও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। নইলে কোলে বলবে দেখুন বিজেপির লোকেরা এটা করছে। সিদ্ধান্তগুলি সর্বদা পছন্দকে বিবেচনা করে না। নির্বাচন আসে যায়। কাজ করে যেতে হয়।

উত্তর ভারতে হিংসা ৭০ শতাংশ কমেছে। অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করছে আট হাজার মানুষ। ৯টি ভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করা হয়েছে। এমনকি কাশ্মীরে হিংসার হার ৬ শতাংশ কমে গেছে। পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে কমেছে। নকশালদের হিংসা মাত্র ২০ শতাংশ। পঞ্জাবে যা ঘটেছে তা নিয়ে কেন্দ্র পঞ্জাব সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কঠোর পদক্ষেপ করছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে।

এশিয়ানেট নিউজঃ সত্যপাল মালিকের বক্তব্যকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অমিত শাহঃ সত্যপাল মালিক যদি তার অভিযোগ রাজ্যপাল থাকাকালীন করতেন তাহলে তাঁর বক্তব্য যৌক্তিকতা থাকত। তিনি যদি তাঁর শাসনকালে কোনও দেশবিরোধী কার্যকলাপ দেখে থাকেন তাহলে সেই সময়ই তা নিয়ে মুখ খুলতে পারতেন। কিন্তু কেন তিনি সেই সময় নিজের মন্তব্য করেননি। তাঁর ক্ষমতা চলে যাওয়ার পরে কেন তিনি মুখ খুললেন।

এশিয়ানেট নিউজঃ আপনি কি মনে করেন দেশের নিরাপত্তা নিয়ে রাজনীতি করা হয়?

অমিত শাহঃ না, দেশের মানুষ এটাকে সেভাবে দেখে না। দেশের মানুষ বাস্তবতা জানে। মানুষ জানে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ভাল।

এশিয়ানেট নিউজঃ জাতীয় ইস্যু একরকম। রাজ্যের ইস্যু অন্য রকম। জাতীয় ইস্যুকে রাজ্যে নিয়ে আসছে বিজেপি- এটাই বিরোধীদের অভিযোগ। বিজেপি চায় নির্বাচনকে মোদীকেন্দ্রীক করতে।

অমিত শাহঃ মোদীদি আমাদের নেতা। তাঁর জনপ্রিয়তায় আমরা উপকৃত। তবে বেঙ্গালুরুর উন্নয়নে দেওয়া টাকা কিন্তু কোনও জাতীয় সমস্যা নয়। রাজ্যের ৫ কোটি মানুষ সুবিধেভোগা। এরা সকলেই কর্ণাটকের বাসিন্দা।

এশিয়ানেট নিউজঃ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যে যারা হিন্দি সম্পর্কে ভাবেন তাদের সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

অমিত শাহঃ কন্নড় ভাষার জন্য কেউ যদি সবথেকে বেশি কাজ করে থাকে তাহলে তিনি হলেন মোদীজি। কারণ তিনি ক্ষমতায় আসার পরেই ইউপিএসসিতে কন্নড়ে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে আমরা সিআরপিএফ-এ সমস্ত ভাষাকে অগ্রাধিকার গিয়েছে। আমরা কন্নড়ের প্রভাব বা়ড়িয়েছি। আমাদের আগ্রাধিকার সমস্ত আঞ্চলিক ভাষা অধ্যায়ক করা আর কথা বলা । প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এখানে কোনও ভাষায় কথা বলেন? এটা করতে হবে না। আমি গুজরাট থেকে এসেছি আমি কন্নড় জানি না। আমি হিন্দিতে কথা বলব। অঞ্চলিক ভাষ প্রচারের জন্য বিজেপি যা করেছে অন্য কোনও রাজনৈতিক দল সেই কাজ করেনি। আমরা কন্নড়, গুজরাটি, মারাঠী ভাষায় মেডিক্যাল পরীক্ষা নিচ্ছি। আগে হিন্দি আর ইংরেজিতে হত।

এশিয়ানেট নিউজঃ বিজেপি যদি সরকার গঠন করে তাহলে কী মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন করা হবে?

অমিত শাহঃ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আমাদের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনের পর পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এশিয়ানেট নিউজঃ সার্ভের উপর কতটা আস্থা রয়েছে?

অমিত শাহঃ আমি কর্মীদের অনেক বেশি বিশ্বাস করি। সমস্ত সমীক্ষাতেই দেখা যায় এক্সিট পোলে আমরা জয়ী হয়েছে। সমস্যা হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। জেডি(এস) এর সঙ্গে আপোষ হবে না। আমি জনগণের কাছে আবেদন করতে চাই জেডি(এস)কে ভোট দেওয়া মানে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া।