সংক্ষিপ্ত

উত্তরপ্রদেশের জন্য যে বিজেপি ঝাঁপাবেই, তা বলাবাহুল্য কিন্তু মাটি ছাড়তে রাজি ছিল না সমাজবাদী পার্টিও। রাজ্যে দ্বিতীয় বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসলেও, সপার ফলাফল মোটেও আশানুরূপ নয়।

উত্তরপ্রদেশে বড় মার্জিনে জয় পেয়েছে বিজেপি। এবারের ভোটে উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh Assembly Election 2022) যোগী আদিত্যনাথই (Yogi Adityanath) ছিলেন বিজেপি-র মুখ, নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) নন। সেটা অনেক আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। তাকে সামনে রেখেই লড়াইয়ের ময়দানে নামে গেরুয়া শিবির (BJP)। আর অনিবার্যভাবে যোগী প্রচারপর্বে হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ তুলেছেন। সেই ফাটকা সাফল্য পেয়েছে। যদিও যোগী বিভাজনের চেষ্টা করেছেন বলেও সাফ দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একটা বড় অংশের। 

উত্তরপ্রদেশের ভোটাররা বিজেপিকে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় ফিরিয়েছে। প্রথমবারের জন্য পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে চলেছেন যোগী আদিত্যনাথ। যা রাজ্যের ইতিহাসে নতুন ঘটনা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য একটি সেমিফাইনাল হিসাবে চিহ্নিত করা হয় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে। উত্তরপ্রদেশ লোকসভায় সর্বাধিক সংখ্যক আসনের রাজ্য। তারওপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী। 

ফলে উত্তরপ্রদেশের জন্য যে বিজেপি ঝাঁপাবেই, তা বলাবাহুল্য কিন্তু মাটি ছাড়তে রাজি ছিল না সমাজবাদী পার্টিও। রাজ্যে দ্বিতীয় বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসলেও, সপার ফলাফল মোটেও আশানুরূপ নয়। যদিও ২০১৭ সালের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি আসন এবার পেয়েছে অখিলেশ যাদবের দল। তবু বিজেপির থেকে অনেকটাই পিছিয়ে সাইকেল।

কোন পাঁচ কারণে উত্তরপ্রদেশে বেশি দূর গড়াল না সাইকেলের চাকা

১. বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ব এসপি-র জাতিগত জোটকে পিছনে ফেলেছে

বিজেপির প্রচার অযোধ্যা, কাশী এবং মথুরার মন্দির সহ বেশ কয়েকটি উপাদানের উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টি মুসলিম, এসসি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে একটি রামধনু জোট তৈরি করেছে, যা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

যাইহোক, বিজেপি এসপিকে "মুসলিম তুষ্টির" ফ্যাক্টরে অভিযুক্ত করে তার পক্ষে হিন্দুত্ব কার্ড খেলতে সক্ষম হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে মূল ইস্যুগুলির মধ্যে ছিল ২০১৩ সালের মুজাফফরনগর দাঙ্গা।

২. 'নতুন সমাজবাদী পার্টি'-এর চেয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর জনপ্রিয়তা প্রাধান্য পেয়েছে

পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্টভাবে দেখাল যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা সমানভাবে বর্তমান। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তরপ্রদেশের বুকে ২০টিরও বেশি নির্বাচনী সমাবেশ এবং পাঁচটি ভার্চুয়াল সমাবেশ করেছেন। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ভোট বাক্সে। 

চূড়ান্ত পর্বের আগে, প্রধানমন্ত্রী মোদী তার সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা বারাণসীতে তিন দিনের জন্য ক্যাম্প করেছিলেন। এর ফলে শুধু বারাণসীতে নয়, পূর্বাচল অঞ্চল জুড়ে বিজেপির বিশাল ব্যবধানে জয় হয়েছে।

অখিলেশ যাদব, তার 'নতুন সমাজবাদী পার্টি' প্রচার এবং পপুলিস্ট ম্যানিফেস্টো দিয়ে, উত্তর প্রদেশের ভোটারদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারেনি।

৩. বিজেপির উন্নয়ন ও কল্যাণ এজেন্ডা

বিজেপি কৌশলে দুটি সমান্তরাল পন্থা - হিন্দুত্ব এবং উন্নয়নের উপর তার প্রচার চালায়। একদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদী কাশী বিশ্বনাথ করিডোর উদ্বোধন করার সময়, তিনি জেওয়ার সহ ইউপিতে পাঁচটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সরজু খাল প্রকল্প ছাড়াও বিজেপি গঙ্গা, বুন্দেলখণ্ড এবং পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের উপর জোর দিয়েছে।

৪. বিএসপির ক্ষতিতে বিজেপির লাভ

উত্তরপ্রদেশের ভোটারদের ২১ শতাংশ দলিত। মায়াবতী নির্বাচনের দৌড়ে সেভাবে নিজেকে ও দলকে তুলে ধরতে পারেননি। ফলে যে দলিতরা বিএসপির অনুগত ভোটার হিসাবে ছিল, তারা বেশ কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। সেই দলিতরাই বিজেপিকে বিএসপির বিকল্প হিসেবে পেয়ে যায় যখন তারা বিনামূল্যের রেশন এবং বাড়ি সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি লাভ পায়। 

দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদের (রাবণ) সাথে অখিলেশ যাদবের কম ঘনিষ্ঠতার ফলে দলিত ভোটাররা সমাজবাদী পার্টির দিকে আর ঝোঁকেনি। 

৫. M+Y সমীকরণ

সমাজবাদী পার্টিকে রাজনৈতিক মহলে মুসলিম এবং যাদবদের দল (M+Y সমন্বয়) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও অখিলেশ যাদব এই সম্প্রদায়গুলির সমর্থন পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি অ-যাদব ওবিসিদের বিজেপির পরিবর্তে এসপিকে ভোট দিতে রাজি করতে পারেননি।