সংক্ষিপ্ত

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বেশ কয়েকবার ব্যাঘাত ঘটে। এই সময় বেশ কয়েকবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে বিরোধী সাংসদদের ধমক দেন এবং সংসদের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার লোকসভায় রাষ্ট্রপতির বাজেট ভাষণে সরকারের ধন্যবাদ প্রস্তাবের জবাব দিয়েছেন। হাউসে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি একদিকে বিরোধী দলকে ক্রমাগত কটূক্তি করেন, অন্যদিকে দেশের অগ্রগতির সম্পূর্ণ ব্লু প্রিন্টও তুলে ধরেন। প্রায় চারটে নাগাদ বক্তব্য শুরু করার পরে, প্রধানমন্ত্রী মোদী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণে বিরোধী নেতাদের অন্তর্ধানকে উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের ঘৃণার উদাহরণ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্ব যখন ভারতের অগ্রগতির প্রশংসা করছে, তখন দেশের কিছু মানুষ তা মানতে পারছে না। তারা দেশের অগ্রগতি দেখছে না। এই সময় সংসদ যখন ক্ষমতাসীন সাংসদের 'জয় শ্রী রাম' এবং 'মোদী-মোদী' স্লোগানে মুখরিত হয়, তখন বিরোধী সাংসদরাও হট্টগোল শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বেশ কয়েকবার ব্যাঘাত ঘটে। এই সময় বেশ কয়েকবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে বিরোধী সাংসদদের ধমক দেন এবং সংসদের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেন।

৮ পয়েন্টে জেনে নেওয়া যাক প্রধানমন্ত্রী মোদী সংসদে কী বললেন

১. রাষ্ট্রপতিকে অপমান করে ঘৃণা প্রদর্শন করেছেন

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, আমি রাষ্ট্রপতিকে তাঁর ভাষণের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমিও তাকে অভিনন্দন জানাই। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা যখন চলছিল, তখন সেখান থেকেও কিছু লোক উধাও হয়ে যায়। এ কারণে আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি তার বিদ্বেষ ও চিন্তাভাবনা সবার সামনে এসেছে। টিভিতে এমন কথা বলা হয়েছে, যা তাদের ভেতরের বিদ্বেষ সবার সামনে তুলে ধরেছে। একজন বড় নেতা ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতিকে অপমান করেছেন।

২. রাহুল গান্ধীকে নিয়ে তীব্র আক্রমণ

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ভাষণ নিয়ে আলোচনায় অনেক সদস্য তাদের নিজস্ব পরিসংখ্যান ও যুক্তি দিয়েছেন। আপনার আগ্রহ অনুযায়ী আপনার কথা রাখুন। এ থেকে বোঝা যায় একজনের কতটা সামর্থ্য, বোঝার ক্ষমতা এবং তার উদ্দেশ্য কী। রাহুল গান্ধীর নাম না নিয়ে কটূক্তি করেন তিনি। তিনি বলেন, গতকাল কিছু সাংসদ বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তখন তাদের সমর্থক থেকে শুরু করে পুরো ইকো সিস্টেমে গুঞ্জন ওঠে যে, এমনটা হয়েছে নাকি। ভালোই হয়েছে, তাদেরও নিশ্চয়ই ভালো ঘুম হয়েছে। এমনকি তারা সকালে সময়মতো উঠতেও পারত না। এরপর মোদী বিখ্যাত কবি দুষ্যন্ত কুমারের একটি কবিতার মাধ্যমে রাহুল এবং কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, 'তোমার পায়ের তলায় জমি নেই, আশ্চর্যের বিষয় তুমি এখনও বিশ্বাস করো না'।

৩. আগে বলা হতো দেশ দুর্বল হচ্ছে, এখন বলা হচ্ছে মোদী অন্য দেশকে হুমকি দিচ্ছেন

রাহুল গান্ধীর নাম না নিয়ে মোদী বলেন, ২০১৪ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন থেকেই কেউ কেউ বলত দেশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এখন তারা বলছে আমরা অন্য দেশকে হুমকি দিচ্ছি। হুমকি-ধামকি দিয়ে তারা সিদ্ধান্ত বদল করছে। তারা মনে করেন যে মোদীকে গালি দিলেই জনগণের মধ্যে বেরিয়ে আসার পথ বের হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন এই কথা বলছিলেন, তখন হাউসে উপস্থিত বিজেপি সাংসদরা 'মোদী-মোদী' স্লোগানে প্রতিধ্বনিত হন।

৪. বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু মানুষ এটা নিয়েও দুঃখিত

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, আজ প্রতিবেশী দেশে খাদ্য সংকট। অন্যদিকে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। জি-২০-এর সভাপতিত্ব করছে ভারত, যা গর্বের ব্যাপার। সারা বিশ্ব আজ আশার চোখে তাকিয়ে আছে ভারতের দিকে। এর কারণ ভারতে স্থিতিশীলতা। বিশ্বব্যাপী ভারতের সুনাম, সম্ভাবনা বেড়েছে। কেউ কেউ এ নিয়ে দুঃখও করছেন।

৫. সরকার কোনও বিষয়ে নিজের মতামত চাপিয়ে দেয় না

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে নয়, আমাদের ইচ্ছাশক্তির কারণে দেশে সংস্কার বাস্তবায়ন করছি। দেশে একটি স্থিতিশীল সরকার আছে যারা জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়। আজ ভারতের টিকা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। কোটি কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ভারতে তৈরি ভ্যাকসিন উপলব্ধ করা হয়েছে। বিশ্বের ১৫০টি দেশে আমরা ভ্যাকসিন দিয়েছি। বিশ্বের সমৃদ্ধিতে ভারত তার অগ্রগতি দেখছে। সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে আমরা সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছি, কিন্তু এটা বুঝতে অনেক সময় লাগবে।

৬. ভারতের ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশন সারা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ভারতের ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশন সারা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এক ক্লিকেই কোটি কোটি মানুষের অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন ইনস্টল হওয়ার সাথে সাথে পরের মুহুর্তে ওয়েবসাইট থেকে কোভিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা যাবে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের উন্নতির প্রশংসা করছে গোটা বিশ্ব।

৭. হতাশায় ভোগা লোকেরা ভারতীয়দের প্রচেষ্টা দেখে না

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, হতাশায় ভোগা কিছু লোক ভারতের অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছে না। মানতেও পারছেন না। তারা ভারতের জনগণের প্রচেষ্টা ও অর্জন দেখতে অক্ষম। ভারত সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। গত 9 বছরে, ভারতে ৯০ হাজার স্টার্টআপ শুরু হয়েছে। স্টার্টআপের মধ্যে আজ আমরা বিশ্বে তিন নম্বরে। এটি ভারতের যুব সম্ভাবনার পরিচয় হয়ে উঠেছে। করোনার প্রভাব সত্ত্বেও ১০৮টি স্টার্টআপ ইউনিকর্নে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল তৈরিতে ভারত দুই নম্বরে। অভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রীদের দিক থেকে আমরা তিন নম্বরে চলে এসেছি। শক্তি খরচে আমরা বিশ্বের তৃতীয় নম্বরে পৌঁছেছি, যাকে বলা হয় অগ্রগতির মাপকাঠি। খেলাধুলায়ও ভারত এগিয়ে যাচ্ছে। কন্যাশিশুদের অংশগ্রহণ বেড়েছে।

৮. আমরা বিশ্বাস, স্বপ্ন এবং সংকল্পে পূর্ণ একটি দেশ

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, আজ দেশের প্রতিটি স্তরে শুধুই আশা। আজ আমরা বিশ্বাসে পরিপূর্ণ জাতি। এখন ভারত এমন একটি দেশ যা স্বপ্ন এবং সংকল্প নিয়ে চলে। কিছু মানুষ এখনও এখানে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। কাকা হাতরাসির কবিতার মাধ্যমে বিরোধী দলকেও কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী।