সংক্ষিপ্ত

ণধর্ষণ করে হত্যা করার মামলায় অভিযুক্ত ওই ১১ জন আসামির মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ বিলকিস বানো

সালটা ২০০২। বাবরি মসজিদের রেশ তখনও চলছে গোটা দেশে। এর মধ্যেই বেশ কয়েকবার হিন্দু -মুসলিম লড়াইও বেঁধেছে ভারতবর্ষের বেশ কিছু অঞ্চলে কিন্তু সরকার নির্বিকার। অবশেষে সরকারের উপর ভরসা হারিয়ে জেগে উঠলো মুসলিমরা ।তারা ভাবলো কোর্ট কাচারীর পক্রিয়া যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি তাই যা করতে হবে তাদেরই করতে হবে। তাই তারা বেছে নিলো প্রতিবাদের এক অভিনব পন্থা। গোধরায় একটি হিন্দু তীর্থযাত্রী বোঝাই ট্রেনে তারা লাগিয়ে দিলো আগুন। গোধরার এই মর্মান্তিক কাণ্ডের পর তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকাশ্যে দিলেন প্রত্যুত্তরের হুঁশিয়ারি। এরপর একদিন রাতের অন্ধকারে হঠাৎ গোধরার এক বিরাট মুসলিম বস্তিতে লেগে গেলো আগুন।রাতারাতি ভস্ম হয়ে গেলো সেই বস্তি। সেদিনের সেই রাত্রে ওই দাঙ্গা বিবাদের ফাঁকেই বিলকিস বানো নামে ৫ মাসের এক অন্তঃসত্বা মহিলা পালতে চেয়েছিলেন ওই জায়গা ছেড়ে। সেই অপরাধের শাস্তিতেই ৭ জন একত্রে গণধর্ষণ করে তার। নষ্ট হয়ে যায় বিলকিসের পেটের বাচ্চাটি। সেদিনের সেই প্রচন্ড মানসিক আঘাত নিতে পারেননি বিলকিস। কেমন যেন হয়ে যান তিনি তার পর থেকে। পরে শক্ত হন তিনি , তার প্রতি হাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি দ্বারস্থ হন কোর্টের। এবং ২০ বছর ধরে সেই মামলা চলার পর অবশেষে ২০২২ এ  আদালত বেকসুর খালাস করে ওই অভিযুক্ত ৭ জনকে। বিবেকের দংশনে এরপর আর চুপ করে থাকতে পারেননি বিলকিস। হুংকার দিয়ে বলেন এবার তিনি যাবেন সুপ্রিম কোর্টে। প্রকাশ্যে বিবৃতি দেন তিনি যে তাকে লড়তেই হবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

আমি আবার উঠে দাঁড়াবো এবং লড়াই করবো 'প্রশাসকমণ্ডলীর বিরুদ্ধে বিলকিসের এই হুংকার সারা ফেললো গোটা দেশে । তাকে গণধর্ষণ করে হত্যা করার মামলায় অভিযুক্ত ওই ১১ জন আসামির মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিলকিস। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন যে সমাজের বিবেককে নাড়া দেবে আদালতের এই রায়।

বৃহস্পতিবার তিনি এক বিবৃতি দিয়ে বলেন ,'আবারো একবার উঠে দাঁড়িয়ে , ন্যায়ের দরজায় করা নাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। যদিও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার পক্ষে খুব কত সহজ হিল না ,কিন্তু তও আমি এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। যারা আমার এবং আমার পরিবারের জীবনকে ধ্বংস করেছে তাদের অকাল মুক্তির পর আমি কেমন যেন অসাড় হয়ে গেছিলাম। কিন্তু এবার আমি লড়বো। আমার পরিবার এবং আমার সন্তানদের জন্য আমাকে লড়তেই হবে। আশা হারিয়ে আর ভয়ে পঙ্গু হয়ে থাকবো না আমি।' তিনি আরও বলেন ,'আমি নীরব থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রথমে কিন্তু সারা দেশ থেকে আমার এই লড়াইয়ে পাশে থাকার সে অকল্পনীয় সমর্থন এসেছে সেটা আমাকে এই হতাশার মাঝেই ফের লড়াই করার সাহস জুগিয়েছে। আমি এখন আর এই ব্যাথা একা অনুভব করি না। এই হাজারো সমর্থন আমাকে এগিয়ে চলার শক্তি জুগিয়েছে। '

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার এই লড়াইয়ের সমর্থন এখনও কোথাও বিশ্বাস যোগায় যে মনুষত্ব এখনও হারিয়ে যায়নি। ভারতীয় সংবিধানের উপর ভরসা রাখলে সেটি  সঠিক ন্যায়বিচার ঠিক এনে দেবেই ।