সংক্ষিপ্ত
বিশ্বের সবচেয়ে অসম দেশগুলির একটি ভারত। এমনটাই উঠে এল এই বছরের বিশ্ব বৈষম্য রিপোর্টে (World Inequality Report 2021)।
ভারতে বাস করেন বিশ্বের বেশ কয়েকজন ধনীতম মানুষ। তাও, ভারত বিশ্বের অন্যতম গরীব দেশ। আর এর কারণ, এই দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য (Inequality)। এমনটাই উঠে এল এই বছরের বিশ্ব বৈষম্য রিপোর্টে (World Inequality Report)। কতটা বৈষম্য রয়েছে আমাদের দেশে? রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বছর, দেশের মোট জাতীয় আয়ের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি (২১.৭%) উপার্জন করেছে অর্থনৈতিক দিক থেকে জনসংখ্যার শীর্ষ থাকা ১ শতাংশ মানুষ। জাতীয় আয়ের ৫৭ শতাংশের মালিক ছিল জনসংখ্যার উপরের দিকের ১০ শতাংশ। আর সেখানে নীচের ৫০ শতাংশের উপার্জন, জাতীয় আয়ের মাত্র ১৩.১ শতাংশ।
এই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন, ওয়ার্ল্ড ইনইক্যালিটি ল্যাবের (World Inequality Lab) সহ-পরিচালক লুকাস চ্যান্সেল। আর তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছেন, ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটির নেতৃত্বে বিশ্বের কয়েকজন তাবড় অর্থনীতিবিদ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি ধনী অভিজাত গোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও, ভারত একটি দরিদ্র এবং অত্যন্ত অসম দেশ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদনের ভূমিকায়, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhijit Banerjee) এবং এসথার ডাফলো (Esther Duflo) বলেছেন যে ভারত বিশ্বের 'সবচেয়ে অসম দেশগুলির মধ্যে' একটি।
ভারতের আয়ের বৈষম্য বোঝা যাবে, নিচের তথ্যগুলি থেকেই। ২০২১ সালে ক্রয় ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে, ভারতীয় প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার জাতীয় গড় আয় ছিল বছরে ২,০৪,২০০ টাকা। তবে, জনসংখ্যার নীচের ৫০ শতাংশ মানুষের বার্ষিক আয় ছিল গড়ে ৫৩,৬১০ টাকা। অর্থাৎ জাতীয় গড় আয়ের থেকে নিচের ৫০ শতাংশ মানুষের আয় ছিল প্রায় দেড় লক্ষ টাকা কম। এৎ থেকেই ভারতে ধনী ও গরীবের মধ্যের আয়ের আকাশ-পাতাল তফাৎটা স্পষ্ট ধরা পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পদের ক্ষেত্রে ভারতে বৈষম্য আরও বেশি প্রকট। একটি ভারতীয় পরিবারের গড় সম্পদের মূল্য ৯,৮৩,০১০ টাকা। কিন্তু, রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার নীচের ৫০ শতাংশ মানুষের 'প্রায় কিছুই' নেই, গড় সম্পদ মাত্র ৬৬,২৮০ টাকা। মধ্যবিত্তরাও তুলনামূলকভাবে অনেক গরীব। দেশের মোট সম্পদের ২৯.৫ শতাংশের মালিকানা আছে মধ্যবিত্তদের হাতে। ভারতের সবচেয়ে ধনী সবার উপরে থাকা ওই ১ শতাংশই, তাদের হাতে রয়েছে দেশের মোট সম্পদের ৩৩ শতাংশ।
লিঙ্গভেদেও অর্থনৈতিক বৈষম্য ভারতে অত্যন্ত প্রকট। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের আয় অনেক কম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২১ সালে ভারতের মহিলাদের আয় ছিল জাতীয় আয়ের মাত্র ১৮ শতাংশ, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন পরিসংখ্যানগুলির একটি। এশিয়া মহাদেশে চিনকে জুড়লে তো মহিলাদের আয়ের শতাংশ হার অনেকটাই বেড়ে যায়। চিনকে বাদ দিলেও এই পরিসংখ্যান থাকে ২১ শতাংশে, অর্থাৎ ভারতের থেকে বেশি। তবে, ১৯৯০ সাল থেকে ভারতে মহিলাদের আয়ের পরিমান আট শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, এই বৃদ্ধি আঞ্চলিক গড়ের আয়কে স্পর্শ করার জন্য যথেষ্ট নয় বলেই দাবি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।