সংক্ষিপ্ত

ভারত আমেরিকার সঙ্গে জেট ইঞ্জিন তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর জোর দিচ্ছে। এই বিষয়ে, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং তার আমেরিকান প্রতিপক্ষ জ্যাক সুলিভানের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে।

সবার নজর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের দিকে। আসলে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বহুবার আমেরিকা সফর করেছেন। তবে প্রতিরক্ষা খাতের জন্য এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আসলে ফাইটার জেট ইঞ্জিন নিয়ে মেগা চুক্তি করতে চলেছে ভারত ও আমেরিকা। এই চুক্তি হলে, জেট ফাইটার ইঞ্জিন তৈরিতে ভারত বিশ্বের পঞ্চম পরাশক্তি হয়ে উঠবে। এ খাতে এখন পর্যন্ত শুধু আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফ্রান্স রয়েছে। এমনকি চিন, যাকে একটি বিশাল প্রযুক্তির অধিকারী হিসাবে বিবেচনা করা হয়, নিজে জেট ইঞ্জিন তৈরি করে না।

এই চুক্তির মাধ্যমে মোদী সরকারও তার স্বনির্ভর ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে চায়। এই চুক্তি হলে ভারতই হয়ে উঠবে এশিয়ার একমাত্র দেশ যারা জেট ইঞ্জিন তৈরি করবে। যদিও রাশিয়ার কিছু অংশ এশিয়ার অভ্যন্তরেও আসে। এই চুক্তি নিয়ে বহুদিন ধরেই আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা চলছে ভারত। এখন মনে করা হচ্ছে মোদীর সফরের সময় এতে সিলমোহর পড়তে পারে।

কেন এই চুক্তি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

আমেরিকা এখন পর্যন্ত কারো সঙ্গে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি শেয়ার করার আগে নানা ভাবনা চিন্তা করে। এমনকি আমেরিকা তার সহযোগী দেশগুলির সঙ্গেও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ভাগ করেনি। কিন্তু ভারত আমেরিকার সঙ্গে জেট ইঞ্জিন তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর জোর দিচ্ছে। এই বিষয়ে, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং তার আমেরিকান প্রতিপক্ষ জ্যাক সুলিভানের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। এখন আগামী সপ্তাহে ভারতে আসছেন আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এই চুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আমেরিকা সফরে বড় ঘোষণা হতে পারে

চলতি মাসের ২১ থেকে ২৪ তারিখে আমেরিকা সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এখন এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে যে এই সফরে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটতে পারে। সূত্রের খবর, ভারত ও আমেরিকার কোম্পানিও এই চুক্তির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। সরকারি কোম্পানি হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড ভারতের পক্ষ থেকে এর নেতৃত্ব দেবে। অন্যদিকে জেনারেল ইলেকট্রিক মার্কিন পক্ষ থেকে থাকবে। এই দুই কোম্পানির অংশীদারিত্বের অধীনে, উভয় কোম্পানি একসঙ্গে দেশীয় পর্যায়ে ফাইটার জেট ইঞ্জিন তৈরি করবে।

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে এটাই হবে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি বলে মনে করা হচ্ছে। এই চুক্তির পর দুই দেশের প্রতিরক্ষা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা যাবে। এই চুক্তির পর একদিকে যেমন ভারত দেশীয় ফাইটার ইঞ্জিন তৈরি করতে পারবে, অন্যদিকে আগামী সময়ে জলজাহাজের ইঞ্জিনও দেশে তৈরি হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভারতও একটা শিক্ষা পেয়েছিল যে আত্মনির্ভর হওয়া কতটা জরুরি। এই যুদ্ধের একটি দুর্দান্ত শিক্ষা দিয়েছে যে অস্ত্রের জন্য কীভাবে একজনকে রাশিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়।

জেট ইঞ্জিন চুক্তি কি

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং আমেরিকা-চিন দ্বন্দ্ব সারা বিশ্বকে প্রতিরক্ষা খাতে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। এখন ভারত আমেরিকার মাধ্যমে এই দুর্ভেদ্য দুর্গে প্রবেশের চেষ্টা করছে। আমেরিকার কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক এভিয়েশনের মাধ্যমে এ খাতে শিকড় মজবুত করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।

কিভাবে স্বপ্ন পূরণ হবে

একদিকে ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং আমেরিকার মতো জায়ান্টরা ইতিমধ্যে জেট ইঞ্জিন তৈরিতে তাদের জমি শক্ত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ কম হবে না। যদিও এটা ভালো কথা যে ভারত আমেরিকার সমর্থন পাচ্ছে। যদি এই চুক্তি হয়, তাহলে ভারত পঞ্চম পরাশক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার এবং বিশ্বের কাছে একটি নতুন উদাহরণ উপস্থাপন করার সুযোগ পাবে।