সংক্ষিপ্ত
- চিন ও পাকিস্তান সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনার আবহ
- ক্রমেই নিজের অস্ত্রাগার শক্তিশালী করছে ভারত
- ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারের সর্বশেষ সংযোজন পিনাকা মিসাইল
- এই মিসাইলের জন্য এবার রকেট লঞ্চারের বরাত দেওয়া হল
গত ১৫ জুন দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর একাধিকবার বৈঠকে বসেছে ভারত ও চিন। মুখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সরে যাওয়ার কথা বললেও বাস্তবে চিন তা করছে না বলেই বারবার দাবি করে আসছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে প্যাংগং লেক ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ২৯ ও ৩০ আগস্টের মধ্যবর্তী রাতে আচমকাই নিজেদের অবস্থান ছেড়ে এগিয়ে আসে চিনা সেনা। এই পরিস্থিতিতে যোগ্য জবাব ভারতীয় জওয়ানরাও। চিনা সেনাদের এগিয়ে আসা থেকে রুখতে প্রথমেই বাধা দেন ভারতীয় জওয়ানরা। স্বল্প মাত্রার হাতাহাতি হয় বলেও সেনা সূত্রে খবর। সোমবার এই ইস্যুতে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করে ভারতীয় সেনা। পরিস্থিতি যাতে নতুন করে উত্তপ্ত না হয়ে ওঠে, সেজন্য চুশুলে ভারতীয় ও চিনা ব্রিগেড কমান্ডার স্তরের বৈঠক শুরু হয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতেই দেশের সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে পিনাকা রকেট লঞ্চার কিনতে ২,৫৮০ কোটি টাকার চুক্তি করে ফেলল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভারতের পিনাকা মিসাইলের জন্য রকেট লঞ্চারের বরাত দিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। চিন ও পাকিস্তানের সীমান্ত বরাবার এই মিসাইল লঞ্চার তৈরি রাখবে ভারত। যাতে শত্রুপক্ষের যে-কোনও স্পর্ধার মোক্ষম জবাব দেওয়া যায়। এর জন্য সোমবার দু'টি দেশীয় নামী সংস্থার সঙ্গে মোটা অঙ্কের আর্থিক চুক্তি করল কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ভারতীয় সেনার ছ'টি রেজিমেন্টের জন্য এই রকেট লঞ্চারগুলি কেনার বরাত দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল প্রস্তুতি আরও বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত এলাকায় পিনাকা রেজিমেন্ট মোতায়েন করা হবে।
করোনা আবহে আত্মনির্ভর ভারতের ঘোষণা করেছেন নেরন্দ্র মোদী। প্রতিরক্ষাক্ষেত্রেও সেই পথেই হাঁটতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রত্যেক বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ থেকে আনা হয় একাধিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম। এবার ভারতেই সেসব তৈরি করার বার্তা দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তার অংশ হিসাবেই টাটা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ও ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা লারসন অ্যান্ড টুব্রো সঙ্গে পিনাকা রকেট লঞ্চার নয়ি এই চুক্তি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই দু'টি ভারতীয় সংস্থাই প্রতিরক্ষার সরঞ্জাম তৈরি করে। প্রতিরক্ষা পাবলিক সেক্টরের আন্ডারটেকিং ভারত আর্থ মুভারস লিমিটেড -ও এই চুক্তির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত আর্থ মুভারস লিমিটেড গাড়ির জোগান দেবে। ওই গাড়িগুলিতেই বসবে টাটা ও লারসন অ্যান্ড টুব্রোর তৈরি লকেট লঞ্চার।
পিনাকা মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম দেশীয় প্রযুক্তিতে ডিজাইন করেছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)। এই সামরিক অস্ত্রের ৭০ শতাংশই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। প্রকল্পটির অনুমোদন করেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম পিনাকা তার মারণ ক্ষমতার প্রমাণ আগেও দিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মারণ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তিতে আরও বদল ঘটিয়ে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বহুগুণে বাড়ানো হয়েছে। মার্ক-১-এ এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৪০ কিলোমিটার, আর মার্ক-২-তে ৭৫ কিলোমিটার। ডিআরডিও জানিয়েছে, বর্তমানে এই মিসাইলের পাল্লা আরও বাড়ানো হয়েছে। ৯০ কিলোমিটার দূরত্বের যে কোনও বস্তুকে নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত করতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র।
পাকিস্তান, চিনের আস্ফালন দেখে ভারতও নিজেকে ক্রমাগত শক্তিশালী করে তুলছে। যে কোনও পরিস্থতির মোকাবিলায় সাজানো হচ্ছে ভারতের অস্ত্রভাণ্ডার। যার সর্বশেষ সংযোজন পিনাকা মিসাইল। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে সোমবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ৬ পিনাকা রেজিমেন্টের হাতে সবমিলিয়ে ১১৪টি রকেট লঞ্চার থাকবে। সেইসঙ্গে অটোমেটেড গান অ্যামিং এবং পজিশনিং সিস্টেমও থাকবে। এ জন্য ৪৫টি 'কম্যান্ড পোস্ট'ও থাকবে। কেন্দ্রের লক্ষ্য, ২০২৪ সালের মধ্যে এই মিসাইল রেজিমেন্টকে পুরোপুরি কার্যকর করে তোলা।