সংক্ষিপ্ত
- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খোলা চিঠি
- চিঠি লিখলেন দেশের বিশিষ্টজনরা
- প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি
- মোদী আমলেই বেড়েছে ধর্মীয় হিংসা, অভিযোগ চিঠিতে
এবার গণপিটুনি এবং ধর্মের নামে হত্যার প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন দেশের বিশিষ্টজনরা। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ধর্মীয় হিংসায় উস্কানি দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে জয় শ্রীরাম ধ্বনিকে। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ধর্মীয় হিংসার ঘটনা লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে গিয়েছে, তাও নরেন্দ্র মোদীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিশিষ্টরা। শ্যাম বেনেগাল, মণি রত্নম, কেতন মেহেতা, অনুরাগ কাশ্যপ থেকে শুরু করে অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষরা এই চিঠিতে সই করেছেন। শিল্প, সংস্কৃতি জগতের পাশাপাশি চিঠিতে সই করেছেন চিকিৎসক, সমাজকর্মী-সহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত নামী ব্যক্তিত্বরা। সই রয়েছে সমাজকর্মী বিনায়ক সেন, পরিবেশবিদ বনানি কক্কর, ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহর মতো অনেকেরই।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠিতে গণপিটুনি এবং ধর্মীয় বিদ্বেষের ঘটনাগুলিকে মধ্যযুগীয় বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বিশিষ্টজনরা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, নিজের পছন্দমতো ধর্মাচারণের অধিকার এ দেশের প্রতিটি নাগরিককে সংবিধান দিয়েছে। ফলে মুসলিম, দলিত এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের এই সমস্ত ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন- জয় শ্রীরাম বলানোর জন্য মারধর, মুসলিম যুবককে বাঁচালো হিন্দু দম্পতি
আরও পড়ুন- কাউকেই জয় শ্রী রাম বলতে বাধ্য করা উচিত নয়, বললেন বিজেপির এই মন্ত্রী
কয়েকদিন আগেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন 'জয় শ্রীরাম'- এর অপব্যবহার নিয়ে সরব হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে সেই একই অভিযোগ তুলেছেন বিশিষ্টরা। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, অনেকটা 'রণহুঙ্কারের' আদলে ধর্মীয় হিংসায় উস্কানি দিতে জয় শ্রীরাম ধ্বনিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেভাবে জয় শ্রীরাম ধ্বনিকে অস্ত্র করে গণপিটুনির মতো নৃশংস ঘটনা ঘটছে, তা শিউরে ওঠার মতোই বলে অভিযোগ করা হয়েছে। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ভারতের সংখ্যাগুরু মানুষের কাছে রামের নাম পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশের প্রধান হিসেবে রাম নামের এই অবমাননা রুখতে তাঁর পদক্ষেপ করা উচিত বলেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য তুলে ধরে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৬ সালে দলিতদের উপরে হামলার ৮৪০টি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই অনুপাতে অভিযুক্তদের বিচার করে শাস্তি দেওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
অন্যদিকে ২০০৯ সালেক ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষের ৫৭৯টি ঘটনায় ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে অধিকা্ংশই মুসলিম। হামলা হয়ে খ্রিস্টানদের উপরেও। বিশিষ্টজনরা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই গত দশবছরে নব্বই শতাংশ ধর্মীয় হিংসার ঘটনা ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে এই ধরনের ঘটনার নিন্দা করলেই যে তা যথেষ্ট নয়, তাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টাপাধ্যায়দের দাবি এই ধরনের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায়। এই ধৎনের হামলার ঘটনায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করার দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে।
সবশেষে চিঠিতে লেখা হয়েছে, 'বিরোধী মত ছাড়া গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকে না। সরকারের বিরুদ্ধে মতামত দিলেই কাউকে দেশদ্রোহী বা শহুরে নকশাল বলে চিহ্নিত করা উচিত নয়। শাসক দলের সমালোচনা মানেই দেশদ্রোহিতা নয়। শাসক দল এবং দেশে সমার্থক হতে পারে না। তাই দেশদ্রোহিতার সঙ্গে সরকার বিরোধী অবস্থানকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয। দেশকে আরও শক্তিশালী করে তুলতেই এমন একটি মুক্ত পরিবেশ থাকা প্রয়োজন, সেখানে বিরোধী মতকে চূর্ণ করা হয় না।'
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এই চিঠি লিখেছেন বিশিষ্টজনরা। অপর্ণা সেন জানান, 'রোজ সংবাদপত্রে, টিভিতে দেখছি জয় শ্রীরাম বলে মারা হচ্ছে, গরু পাচারের নামে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী শুধু সমালোচনা করলেই তো এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে না, থামাতে হবে। তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা কি চুপ করে চেয়ে চেয়ে দেখব যে দেশবাসীকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে! এটা একটা খোলা চিঠি, যাতে সবাই জানতে পারেন যে চিঠিটা দেওয়া হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। দোষ যেই করুক না কেন, দেশের মানুষের প্রতিবাদের অধিকার থাকা চাই। অন্যায় দেখলে দেশের মানুষের প্রতিবাদ করা উচিত। প্রতিবাদ না থাকলে মুক্ত চিন্তার দেশ গড়ে তোলা যায় না। সুরাহা হবে কি না জানিনা, শুধু আশা করতে পারি। আমাদের দেশের মানুষ এই হিংসা চান না। হয়তো ভয় পাচ্ছেন বলে প্রতিবাদ করতে পারছেন না।'
চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, 'এরকম বৈচিত্রে ভরা দেশে যাতে শান্তি, সহিষ্ণুতা বজায় থাকে তা নিশ্চিত করতেই এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা যাতে একটা সুন্দর পরিবেশে বাস করতে পারি, সেই জন্যই দেশের প্রধান হিসেবে নরেন্দ্র মোদীকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।' গৌতম ঘোষ ছাড়াও টলিউড থেকে অনুপম রায়, কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন, অঞ্জন দত্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়রাও চিঠিতে সই করেছেন।