- করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে চলছে নানান গুজব
- ছড়িয়ে পড়ছে কুসংস্কারের নানান তত্ব
- যা নিয়ে কিছুটা হলে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা
- ইনফ্লুয়েজ্ঞা ও হামের টিকার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়েছিল
তপন মল্লিক,
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে চলছে নানা কথা। সেসব কথার মধ্যে যেমন সংস্কার আছে তেমনি আছে কুসংস্কার এমনকি ভয় ভীতিও। এটা যে কেবল করোনা ভ্যাকসিন নিয়েই শুরু হয়েছে তা কিন্তু নয়। অতীতেও বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে গোড়ার দিকে এইসবগুলি ছড়িয়ে পড়েছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞান এধরণের সমস্যা বা বাঁধা বিঘ্ন পেরিয়েই এগিয়েছে।
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে যে দ্বিধা ও অনীহা চলছে তার জন্য যেমন যথেষ্ট কারণ রয়েছে তেমনি কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। এসব যে খুব তাড়াতাড়ি মিটবে না তা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানেন।
করোনা প্রতিষেধক-বিরোধীরা এখন বলছেন, প্রতিষেধকটি থেকে ১০০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা দিলে তবেই সাধারণ মানুষ প্রতিষেধকটি নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবেন। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়, কোনও প্রতিষেধকই সব ক্ষেত্রে সবার ওপর একই রকমভাবে কাজ করে না। যেমন, ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধক ৫০% কাজ করার পরই রোগটি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। একই সমস্যা তৈরি হয়েছিল পোলিও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে। নিশেষ করে এ দেশে পোলিও টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। বলা হত পোলিও টিকা নিলে পৌরষত্ব হারানোর ভয় রয়েছে এবং স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণও ঘটতে পারে। এই সমস্যা বেশ কিছুকাল পর্যন্ত এ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছিল। পরবর্তীতে ধর্মনেতাদের সাহায্য নিয়ে সরকারকে সমস্যাটির সমাধান করতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে '৫৬ ইঞ্চি'র তীর রাহুল গান্ধীর, সঙ্গে দিলেন চিন সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব ...
একই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল হামের প্রতিষেধক নিয়ে। রটে গিয়েছিল হামের টিকায় শুয়োরের শরীরের অংশ রয়েছে। এই গুজব রটেছিল কর্নাটক ও তামিলনাড়ুতে। এর ফলে ওই দুই রাজ্যের বহু জায়গায় টিকাকরণের কাজ থমকে গিয়েছিল। বহু কষ্টে ও ব্যাপক প্রচার করার পর ভুল ভাঙিয়ে মানুষকে টিকা নিতে রাজি করানো গিয়েছিল।
তবে এও নয় যে ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার জন্য সঙ্গত কারণ নেই। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার; ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্ত সন্দেহের যথেষ্ট কারণ্নেই। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষেধক নিয়ে সংস্কার বা আশঙ্কা রাজনীতি ও ব্যবসায়িক স্বার্থেও হয়ে থাকে। ভুল তথ্য, অসম্পূর্ণ তথ্যের কারণে যেমন ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, একই ভাবে ভ্যাকসিন সম্পর্কে সন্দেহের পিছনেও ভুল তথ্য ঘুরছে।
সাধারণ মানুষের পক্ষে ভ্যাকসিনের তথ্য বা তার পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলা খুবই কঠিন কাজ। করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সাধারণ মানুষ তো নয়, বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই বিস্তর মতপার্থক্য গোড়া থেকেই ছিল। ফলে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আজ যে সন্দেহ, সংশয় ও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। তাছাড়া করোনার মতো সম্পূর্ণ আজানা রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন যেসব ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, সেগুলিকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরই তা প্রয়োগের প্রশ্ন। কিন্তু সেসব পরীক্ষার আগেই যদি তা ছাড়পত্র পায়, একেকটি অঞ্চলের জন্য যদি সরকার একেক রকম ভ্যাকসিন নির্বাচন করে, বিশেষ করে একদল চিকিৎসক যদি সেই ভ্যাকসিন নিতে তীব্র আপত্তি জানায় তাহলে তো সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় দ্বিধা তৈরি হতে বাধ্য।
বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে নানা সমস্যা কাটিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। তেমনি সরকার ও গণমাধ্যমকে সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য মানুষের সামনে নিয়ে আসতে হয়, যাতে বিভ্রান্তি ও সংশয়ের অবকাশ না থাকে। কিন্তু সরকারের তরফে যদি এমন কিছু থেকে যায় যেখান থেকে মানুষের মনে, বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে তাহলে সংশয়-দ্বিধা এসে পড়বেই। তারপর সেই ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর যদি বহু মানুষের মধ্যে পার্শপ্রতিক্রিয়া ঘটে, ম্রিত্যু হয় তাহলে মানুষের ভীতি বাড়বে।
এ দেশের ২৬২টি জেলা থেকে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ২৫ হাজার জনের ৬০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নেওয়ায় ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আমেরিকার এক সমীক্ষা অনুযায়ী ৬৭ শতাংশ আমেরিকানই কোভিড ভ্যাকসিন নিতে চান। কিন্তু সেখানেও ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্যাকসিন সম্পর্কে অনীহা রয়েছে। প্রান্তিক জনজাতি ও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে এই অনীহা বেশি। বিশ্ববাসী যখন করোনা ঠেকাতে ভ্যাকসিনের জন্য মুখিয়ে আছে, তখন মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে অনীহা, অনাগ্রহ, বিভ্রান্তি, যা-ই থাকুক না কেন, ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত যাদের তাদের কাজটাও কঠিন।
মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি আসছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, দেশের সরকার সম্পর্কে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কারণে, ভ্যাকসিন কেনা বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার কারণে, নকল ভ্যাকসিন সরবরাহ হতে পারে, এমন আশঙ্কার কারণে এবং ভ্যাকসিন দেওয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের দক্ষতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন থাকায়। এটা প্রথমে দূর করতে সরকারকে, কারণ তাদের ভূমিকা নিয়ে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদেরই প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। তার থেকেই সাধারণ মানুষের মনে জেগেছে সংশয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদে টিকা দেওয়ার মানবদেহে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে তা এখনও অজানা৷ সেটা সঠিকভাবে জানতে বুঝতে হয়ত কয়েকটা মাস বা বছর লাগতে পারে।
Read Exclusive COVID-19 Coronavirus News updates, from West Bengal, India and World at Asianet News Bangla.
খেলুন দ্য ভার্চুয়াল বোট রোসিং গেম এবং চ্যালেঞ্জ করুন নিজেকে। கிளிக் செய்து விளையாடுங்கள்
Last Updated Jan 25, 2021, 4:03 PM IST