সংক্ষিপ্ত

চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে ছেলে আত্মঘাতী হওয়ার পর, একই জায়গায় আরেকটি ট্রেনে কাটা পড়লেন তাঁর বাবা। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) হোশাঙ্গাবাদ (Hoshangabad) জেলায়।
 

একই বোধহয় বলে নিয়তির টান। মাত্র কিছু সময়ের এদিক-ওদিকে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তি ও তাঁর বাবার। জানা গিয়েছে, বাবার চোখের সামনেই চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন তা ছেলে। আর তারপর যখন ছেলের দেহ নিয়ে রেল লাইনেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তাঁর বাবা, সেইসময়ই আরেকটি ট্রেন এসে তাঁকেও চাপা (Train Accident) দিয়ে চলে যায়। অকস্মাত পরিবারের দুই সদস্যকে হারিয়ে, শোকে ভেঙে পড়েছে ওই পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে, মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) হোশাঙ্গাবাদ (Hoshangabad) জেলায়।

জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা চলছিল ৩৬ বছর বয়সী ছোটেলাল বিশ্বকর্মার। চলতি বছরে দীপাবলির সময়, সে দুই সন্তানকে নিয়ে, শ্বশুড়বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকেই মানসিক চাপে ছিলেন ছোটেলাল। এই নিয়ে পারিবারিক অশান্তি চলছিলই। বৃহস্পতিবার রাতেও আরেকপ্রস্থ ঝামেলার পর, রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ, রাগ করে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। বলেছিল, রেললাইনে আত্মঘাতী হবে। তাঁকে বোঝাতে পিছন পিছন যান তাঁর বাবা, ৬০ বছরের মোহনলালও। ক্ষুব্ধ ছোটেলাল বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরেই রেললাইনের উপর বসে পড়েছিলেন। মোহনলাল পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে অনেক বোঝান। 

আরও পড়ুন - Madhya Pradesh: খালি হাতেই লড়াই, চিতার থাবা থেকে সন্তানকে বাঁচালেন 'টাইগার মম'

আরও পড়ুন - Bhopal Gas Tragedy: ৩৭ বছরেও মেলেনি ন্যায়বিচার, সরকারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্তরা

আরও পড়ুন - Madhya Pradesh: বিরল ঘটনা মধ্যপ্রদেশে, মহিলা থেকে পুরুষ হলেন কনস্টেবল

এরমধ্যেই চলে এসেছিল একটি দ্রুতগামী ট্রেন। সেই ট্রেনের ধাক্কায় ছোটেলালের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তাঁর ছেলের দেহের বিভিন্ন টুকরো ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ২০০ মিটার দূর পর্যন্ত। চোখের সামনে ছোট ছেলের ওই মর্মান্তিক পরিণতি দেখে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলেন মোহনলাল। উন্মত্তের মতো কাঁদতে কাঁদতে তিনি ওই রেললাইনেই বসে পড়েছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকটি ট্রেনও ওই লাইনে এসে পড়ে। ততক্ষণে মোহনলালের আরও দুই ভাই ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁরা বারবার মোহনলালকে বলেন, সরে যেতে, ট্রেন আসছে। কিন্তু, পুত্রশোকে বিহ্বল মোহনলালের কানে কোনও কথাই যায়নি। 

মুহূর্তের মধ্যে ট্রেনের ইঞ্জিনে ধাক্কায়, বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পরে তাঁর দেহ। মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। সকলে মিলে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বটে, কিন্তু যাওয়ার পথেই তাঁরও মৃত্যু হয়। পিতা-পুত্রের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে রাতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। একইসঙ্গে পারিবারিক কলহ নিয়েও ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। দুই ছেলে হলেও, ছোট ছেলের সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন মোহনলাল বিশ্বকর্মা। বাবা-ছেলে দুজনেই একটি আসবাবের দোকানে কাজ করতেন। মোহনলালের বড় ছেলে হোশাঙ্গাবাদ শহরে কাজ করেন। 

রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। দুজনের মরদেহই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবারই ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।