সংক্ষিপ্ত
মণিপুর উপজাতীয় নেতাদের ফোরাম এই বিষয় নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ মে। তিন মহিলাকে গণধর্ষণ করে নগ্ন করে রাস্তা দিয়ে হাঁটান হয়।
জাতিগত দাঙ্গায় বিধ্বস্ত মণিপুর এবার সাক্ষী রইল মধ্যযুগীয় বর্বরতার। সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার একটি ভিডিও ঘিরে তোলপাড় সারা দেশ। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে দুই মহিলাকে লগ্ন করে হাঁটানো হচ্ছে রাস্তা দিয়ে। দুই নির্যাতিতা মহিলাকে ঘিরে রয়েছে এক দল পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি। স্থানীয় আদিবাসী সংগঠনের অভিযোগ গুই মহিলাকে একটি মাঠে গণধর্ষণ করা হয়েছে। তারপরই তাদের রাস্তা দিয়ে হাঁটানো হয়েছে। গোটা ঘটনার নিন্দা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে অনেকেই। মণিপুরে হিংসার সময়ই এই ঘটনা ঘটে।
মণিপুরের উপজাতীয় নেতাদের ফোরাম এই বিষয় নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ মে। রাজধানী ইম্ফল থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাংপোকপি জেলায়। এই ঘটনায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল কাংপোকপি জেলায়। অভিযোগে বলা হয়েছে, স্থানীয় এক জননেতার সামনে তিন মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছে। এই ঘটনা পাঁচা জনের একটি দলকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। যারা মণিপুর হিংসার ঘটনাতেও জড়িত। মহিলাদের বিরুদ্ধে একজনকে অপরহণের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ দুই মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। যার মধ্যে এক জনের বয়স ১৯। তার ভাই মহিলাকে উদ্ধার করতে এলে তাকেও খুন করে ধর্ষকরা।
গোটা ঘটনার ভিডিও প্রকাশ হতেই তৎপরতা শুরু হয়েছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং পুলিসকে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছে, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও মন্ত্রকের মুখ্য সচিবের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের গোটা ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, 'এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।' ভিডিওটি সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে স্বতোঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের অভিযোগঃ
পুলিশ দানিয়েছেন ৪ মে কাংপোকপি জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে। ২১ জুন থৌবাল জেলায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ, গণধর্ষণ ও হত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এফআইআর-এ বলা হয়েছে তিন জন মহিলাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে তাদের কাপড় খুলতে বাধ্য করা হয়েছে। জনার সামনে দিয়ে উলঙ্গ অবস্থা হাঁটতে বাধ্য করা হয়েছিল।
অভিযোগ অনুসারে হিংসার ঘটনার এক দিন পরে এই ঘটনা ঘটেছিল। AK রাইফেলস, SLR, INSAS, এবং 303 রাইফেলের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত প্রায় ৮০০ থেকে এক হাজার জনের একটি দল মণিপুরের একটি গ্রামে প্রবেশ করে। তারাই দোকানপাট লুঠ করে। বাড়িঘরে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। তারা মেইতি সম্প্রদায়ের সদস্য বলেও সন্দেহ পুলিশের। পুলিশের অনুমান এই দলটি মেইতি লিপুন, কাংলেইপাক কানবা লুপ, আরামবাই টেঙ্গোল ও ওয়ার্ল্ড মেইতি কাউন্সিলের মত সংগঠনের সদস্য।
গোটা ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী জানিয়েছেন, মণিপুরের ঘটনা হৃদয় বিদাকর। মহিলাদের প্রতি হিংসার একটি ভয়াবহ ঘটনা। এই ঘটনার নিন্দা করার কোনও ভাষা নেই। মহিলা ও শিশুদের মনে গোটা ঘটনার প্রবল প্রভাব পড়বে। ত্রিপুরার টিপরা মোথা পার্টির প্রধান বিক্রম মাণিক্য দেববর্মা জানিয়েছেন, মনিপুরের একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মহিলাদের নগ্ন করে কুচকাওয়াজ করার ঘটনা রীতমত লজ্জার। দুটি সম্প্রদায়ের মানুষকে আরও দূরে ঠেলে দেবে। আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, মণিপুরের ঘটনা লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। ভারতীয় সমাজ এই ঘটনা সহ্য করে না। তৃণমূলের পক্ষ থেকে টুইট করে গোটা ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি চাওয়া হয়েছে।