দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তি বাহিনীতে শহিদ জওয়ানদের এমন সম্মানের জন্য সওয়াল করে আসছিল ভারত। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী এই বিষয়ে বারবার রাষ্ট্রপুঞ্জের দরজায় কড়াও নেড়েছিলেন। 

বিশ্ব শান্তির জন্য শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাবে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর জন্য নিউ ইয়কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরের স্মৃতি সৌধতে নাম খোদাই হবে এই সব জওয়ানদের। এই উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করতে আলাদা করে তৈরি হবে মেমোরিয়াল ওয়াল বা স্মৃতি সৌধ। অবশেষে এই নিয়ে ভারতের প্রস্তাবিত খসড়াকে গ্রহণ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। যাতে সায় মিলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য ১৯০টি দেশের।

ভারতের পক্ষে এই খসড়া প্রস্তাব জমা করেন নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জে নিয়োজিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রুচিরা কাম্বোজ। যে খসড়া প্রস্তাবের মূল থিম হল 'মেমোরিয়াল ওয়াল ফর ফলেন ইউনাইটেড নেশনস পিস কিপার'। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা গিয়েছে যে ১৯০টি সদস্য দেশই এই স্মৃতি সৌধ নির্মাণের ঐক্যমত পোষণ করেছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য দেশগুলিও ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতর নিউ ইয়র্কের চৌহদ্দিতে তৈরি হতে চলা এই স্মৃতি সৌধ শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানানোর পক্ষে এক অনবদ্য উহাহরণ তৈরি করবে বলেই আশা করছে সদস্য দেশগুলি। বিশেষ করে শহিদদের নাম যেখানে খোদাই থাকবে স্মৃতি সৌধতে তা স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের পরিবার-পরিজন এবং দেশের কাছে এক গর্বের বিষয় হবে বলেও মনে করা হচ্ছে। খসড়ার পেশের প্রস্তাবনায় রুচিরা কাম্বোজ বলেন, এই স্মৃতি সৌধ বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রপুঞ্জের যে উদ্যোগ তাকেও বিশেষিত করবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তি বাহিনীর শহিদ জওয়ানদের জন্য স্মৃতি সৌধ তৈরির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, এই খবর নিশ্চিত হতেই টুইটারে নিজের উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি টুইটে লেখেন, 'শান্তি বাহিনীর কাজে শহিদ জওয়ানদের জন্য স্মৃতি সৌধের যে প্রস্তাবনা রাষ্ট্রপুঞ্জ গ্রহণ করেছে তাতে আমি প্রবলভাবে উচ্ছ্বসিত। ভারতের দেওয়া প্রস্তাব গৃহিত করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এই প্রস্তাবনায় ১৯০টি দেশ সমর্থন করেছে, যা এককথায় অভূতপূর্ব।'

Scroll to load tweet…

রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাবনার পেশের সময় রুচিরা কাম্বোজ আরও জানান, 'জন্মেই কেউ শান্তি রক্ষাকারী হয়ে যায় না, তাঁরা বাধ্য হন এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে এবং নিজের চূড়ান্ত বলিদান দিতে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এঁদের নিঃস্বার্থ ত্যাগ সকলের নজরে আসা উচিত। যাতে সকলে বুঝতে পারে যুদ্ধ ও হিংসার উপরে শান্তিটাই সত্য।'

২০১৫ সালেই রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রতিনিধিত্ব করা ভারতীয় মিশন রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিবাহিনীর সদস্য হিসাবে শহিদ হওয়া দেশীয় জওয়ানদের স্মৃতির উদ্দেশে এক ভার্চুয়াল স্মৃতি সৌধ-এর সম্মান প্রদর্শন চালু করেছিল। এই উদ্যোগই বলতে গেলে ছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরে পিস কিপিং মেমোরিয়াল ওয়াল তৈরির সূচনা। ভারতও এই প্রস্তাবনার আনার ক্ষেত্রে এমন এক সর্বজন গ্রাহ্য পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল যাতে সায় না দিয়ে আর কেউ পারেনি। কারণ, ভারতের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নীল ব্যাজ লাগানো শান্তি বাহিনীতে কাজ করা সমস্ত দেশের শহিদ জওয়ানদের জন্য এই স্মৃতি সৌধ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা মনে ধরেছিল অন্যান্য সদস্য দেশের। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমেরিকা।

২০১৫ সালে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরে ফলেন পিস কিপারদের স্মরণে এক আলোচনা ডেকেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফলেন পিস কিপারদের জন্য স্মৃতি সৌধের প্রথম প্রস্তাব রাখেন এবং ফলেন পিস কিপারদের স্মৃতির উদ্দেশে নীরবতা পালনের কর্মসূচিও নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন------ 
আফগানিস্তানের অস্থিরতা বাকি বিশ্বে কী প্রভাব ফেলবে, সেই দেশে শান্তি না থাকলে ভারতেরই বা কী
বিশ্ব-বাজারে বিকোবে শান্তিকেতনের শিল্পীদের কাজ, সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিতে আহ্বান মোদীর
প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমেরিকা সফরে নজর বিশ্বের, কোন কোন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের ওপর জোর