মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নয়ডাতে মাইক্রোসফট ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এটি উত্তর ভারতের আইটি সেক্টরে একটি নতুন যুগের সূচনা। এই সেন্টারটি গবেষণা ও উন্নয়নের বৃহত্তম কেন্দ্র হবে।

গৌতমবুদ্ধনগর, ৮ মার্চ। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ শনিবার সেক্টর-১৪৫-এ মাইক্রোসফট ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং এমএকিউ সফটওয়্যারের এআই ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারের উদ্বোধন করেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উত্তর ভারতে নিজেদের শক্তিশালী উপস্থিতি জানানোর জন্য মাইক্রোসফটের সিইও ও চেয়ারম্যান সত্য নাদেলা এবং সমগ্র টিমকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মাইক্রোসফটের এই গ্রাউন্ড ব্রেকিং অনুষ্ঠানটি বিশেষ। এটি শুধুমাত্র নয়ডার জন্য নয়, সমগ্র উত্তর ভারতের আইটি সেক্টরের জন্য একটি নতুন যুগের শুরু। মাইক্রোসফট প্রমাণ করেছে যে আজকের দিনে উত্তর প্রদেশ বিনিয়োগের সবচেয়ে সেরা গন্তব্য হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে মাইক্রোসফটের ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট সেন্টার তাদের সদর দফতরের বাইরে গবেষণা ও উন্নয়নের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হবে। এই কেন্দ্রটি স্থাপিত হওয়ার পর হায়দ্রাবাদের পর উত্তর প্রদেশে মাইক্রোসফটের নতুন ক্যাম্পাস তৈরি হতে চলেছে।

 *১৫ একর জমিতে তৈরি হবে সেন্টার, প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে* 

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, উত্তর প্রদেশে মাইক্রোসফটের উপস্থিতি আগে থেকেই রয়েছে। নয়ডাতে এদের কার্যক্রম আগে থেকেই চলছে। এখন এই ১৫ একর জমিতে তাদের এই সেন্টার উত্তর প্রদেশ ও উত্তর ভারতে কার্যকর উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে নতুন ভারতের নতুন উত্তর প্রদেশের স্বপ্নকে গত ৮ বছরে বাস্তবায়ন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মতে, আইডি সি নয়ডা এআই এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে ভারতের টেকনিক্যাল ইকোসিস্টেমকে শুধু শক্তিশালী করবে না, বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নকে আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত করার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি এআই, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং সাইবার সিকিউরিটির মতো উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।

*জনসংখ্যার স্কেলকে গতির সঙ্গে যুক্ত করার কাজ করা হয়েছে: মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ* 

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, উত্তর প্রদেশের অভ্যন্তরে দেশের জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় স্কেল রয়েছে, তবে স্কেলকে গতির সঙ্গে রিফর্ম, পারফর্ম এবং ট্রান্সফর্ম করতে আমরা সাফল্য পেয়েছি। এটিকে কার্যকরভাবে প্রদেশে প্রয়োগ করার জন্য ৩৩টি সেক্টরাল পলিসির মাধ্যমে ইজ অফ ডুইং বিজনেসের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ মিত্র সিঙ্গেল উইন্ডো ক্লিয়ারেন্সের মাধ্যমে ৫০০-এর বেশি ক্লিয়ারেন্সের সুবিধা আমরা দিচ্ছি। প্রদেশের অভ্যন্তরে কোনো বিনিয়োগকারী যদি এমওইউ করে, তবে তার অনলাইন মনিটরিংয়ের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়। যে বিনিয়োগ প্রদেশে হয়ে যায়, সেই বিনিয়োগে ইনসেন্টিভ দেওয়ার কাজও অনলাইন মাধ্যমে সরকার দ্বারা করা হচ্ছে।

*ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে উত্তর প্রদেশের অবদানের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করালেন* 

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে উত্তর প্রদেশের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, গত ৮ বছরে করা প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ আজ মোবাইল ফোনের ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ৬৫ শতাংশ অবদান উত্তর প্রদেশের। ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্টসের উৎপাদনে দেশে উত্তর প্রদেশের অবদান ৫৫ শতাংশের সঙ্গে প্রথম স্থানে রয়েছে। নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডা দ্রুত ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের হাব হিসেবে উঠছে।

*মহাকুম্ভে এআই ব্যবহারের কথা উল্লেখ করলেন* 

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, উত্তর প্রদেশে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, আজ তার খুব ইতিবাচক ফলাফল এসেছে। প্রয়োগরাজে মহাকুম্ভ-২০২৫-এ বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিউম্যান গ্যাদারিং ছিল, যেখানে আমরা এআই ব্যবহার করেছি, যা এআই-এর সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। মহাকুম্ভে এআই-এর নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে ৬৬ কোটির বেশি ভক্ত প্রয়োগরাজে এসেছেন এবং নিরাপদে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে গেছেন। উত্তর প্রদেশ ডিজিটাল গভর্নেন্সের ক্ষেত্রেও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। গ্রামে-গ্রামে আমরা খাদ্যশস্য বিতরণের জন্য ই-পস মেশিনের মাধ্যমে সহজে প্রত্যেক সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। ডিবিটি-র মাধ্যমে সরকারের প্রকল্পের সুবিধা প্রত্যেক সুবিধাভোগীর কাছে স্বচ্ছভাবে পৌঁছাচ্ছে। এতে দুর্নীতির কোমর ভেঙে গেছে। রাজ্য সচিবালয়ে ই-অফিস ব্যবস্থা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।

*গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে সেন্টার অফ এক্সিলেন্স*

 মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, উত্তর প্রদেশের যুবকরা যাতে ডিজিটালি শক্তিশালী হয়, তার জন্য বিবেকানন্দ সশক্তিকরণ প্রকল্পের অধীনে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট বিতরণের মাধ্যমে ৫০ লক্ষ যুবককে উপকৃত করা হয়েছে। আইটি এবং এর সঙ্গে যুক্ত ক্ষেত্রে আইআইটি কানপুর, আইআইএম লখনউ, এসজিপিজিআই-এর সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ৫জি, ৬জি, ড্রোন, ব্লকচেইন টেকনোলজি, ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন এবং মেডি টেক ক্ষেত্রে ৭টি সেন্টার অফ এক্সিলেন্স তৈরি করা হচ্ছে। এই সেন্টার অফ এক্সিলেন্স গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে ১০০টি স্টার্টআপকেও উৎসাহিত করা হবে। প্রদেশে শুধু কর্মসংস্থান নয়, ডিজিটাল গভর্নেন্স, ডেটা সেন্টার এবং এআই-এর মতো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পাশাপাশি যুবকদের আরও বেশি কর্মসংস্থান উপলব্ধ করার জন্য সরকার এই দিকেও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

*মেধাবী যুবকদের স্বপ্নকে নতুন দিশা দেওয়ার মাধ্যম হবে মাইক্রোসফট* 

মাইক্রোসফটের মতো বিশ্বব্যাপী সংস্থার উত্তর প্রদেশে উপস্থিতি এখানকার মেধাবী যুবকদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, এখানকার বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে এমওইউ করে মাইক্রোসফট যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করবে, যা প্রশংসার যোগ্য। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, আমার বিশ্বাস মাইক্রোসফটের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রটি শুধু গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে উঠবে না, বরং উত্তর প্রদেশ ও উত্তর ভারতের যুবকদের স্বপ্নকে নতুন দিশা দেওয়ার মাধ্যম হিসেবেও প্রমাণিত হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী সুরেশ খান্না, শিল্প উন্নয়ন মন্ত্রী নন্দগোপাল গুপ্ত 'নন্দী', আইটি ও ইলেকট্রনিক্স মন্ত্রী সুনীল কুমার শর্মা, মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিং সহ মাইক্রোসফটের টিম। মাইক্রোসফটের এমও রাজীব কুমার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সহ সকল গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্বাগত জানান এবং মাইক্রোসফটের ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এবং দেশ-প্রদেশে কোম্পানির দ্বারা করা কাজগুলির তথ্য দেন।